ভারতের আলোচিত সাবারিমালা মন্দিরে ৪ হিজড়া ‘নারী’কে প্রার্থনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নারীদেরকে ওই মন্দিরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে কিনা এ নিয়ে কয়েকদিন আগেই দেশজুড়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়। বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ালে, সর্বোচ্চ আদালত নারীদেরকে কেরালার ওই মন্দিরে প্রার্থনা করার অনুমতি দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু ব্যাপক জনবিক্ষোভের মুখে নারীরা বার বার সেখানে প্রার্থনা করতে ব্যর্থ হন।
এবার বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, চার ‘হিজড়া নারী’কে পুলিশি নিরাপত্তায় মঙ্গলবার মন্দিরে ঢোকার সুযোগ দেওয়া হয়। তারা সবাই কালো শাড়ি পরিহিত ছিলেন।
ঐতিহাসিকভাবেই এই মন্দিরে প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের জন্য বন্ধ ছিল। তবে রোববার হিজড়া নারীরা মন্দিরে ঢুকতে গেলে পুলিশ নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে তাদের আটকে দেয়।
তবে সুপ্রিম কোর্টের ওই নির্দেশনার আগেও হিজড়া নারীরা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারতেন।
কিন্তু ওই নির্দেশনার পর দেশজুড়ে আলোচনার প্রেক্ষাপটে, পুলিশ কর্মকর্তারা নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে যুক্তি দেন, ওই হিজড়া নারীদেরও পুরুষের পোশাক পরে সেখানে ঢোকা উচিৎ। তবে ওই নারীরা তাতে রাজি হননি। তারা কেরালা হাইকোর্টের গঠন করা একটি কমিটির কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।
ওই প্যানেল তাদেরকে প্রার্থনা করার অনুমতি দিতে সম্মত হয়। মন্দিরের পুরোহিতরাও জানান, তাদের আপত্তি নেই কারণ হিজড়া নারীদের ঋতুস্রাব হয় না।
মন্দির সংশ্লিষ্টরা জানান, ঋতুস্রাবকালীন বয়সী অর্থাৎ ১০ থেকে ৫০ বছরের নারীদের ওপর ওই মন্দিরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। কারণ, ওই মন্দিরের দেবতা আয়াপ্পা ছিলেন চিরকুমার। তবে ওই নিষেধাজ্ঞা সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করলে মন্দির এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। নারী ও সমাজ কর্মীরা সেখানে ঢুকতে চাইলে হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি ও অন্যান্য মিত্র সংগঠন ব্যাপক প্রতিবাদ গড়ে তোলে। তারা ঐতিহ্যগত নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার পক্ষে ছিলেন, যদিও নারীদের মৌলিক অধিকারের ভিত্তিতে ২৮শে সেপ্টেম্বর সর্বোচ্চ আদালত তা বাতিল করেন।
মঙ্গলবার মন্দিরে প্রার্থনা করতে যাওয়া ৪ হিজড়া নারীর একজন ৩৩ বছর বয়সী ত্রুপথি বলেন, তার মতো নারীরা হিন্দু ধর্মের বড় অংশ। তাদেরকে সেভাবেই এই ধর্মে শ্রদ্ধা করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি খুবই খুশি যে ভগবান আয়াপ্পার কাছে প্রার্থনা নিবেদন করতে পেরেছি। এই মন্দিরে একজন পুণ্যার্থীর যে সমস্ত কাজ মেনে চলতে হয়, আমরা তা করেই প্রার্থনা করেছি।’
পুলিশ জানায়, মোট ৪ জন হিজড়া নারীর সঙ্গে ২০ জন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। তবে তাদের উপস্থিতির কারণে কোনো প্রতিবাদ হয়নি।