উত্তাল পদ্মা নদীর ঢেউ লেগেছে মানিকগঞ্জ-২ আসনের নির্বাচনী ময়দানে। এখানে বর্তমান ও সাবেক চার সংসদ সদস্য একে অপরের প্রতিপক্ষ হয়ে সরগরম করে তুলেছেন ভোটের মাঠ। বাংলাদেশে ভোটের মাঠে একটি আসনে সাবেক এতসব সংসদ সদস্য একসঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা খুব বেশি চোখে পড়ে না। তবে বর্তমান সংসদ সদস্য কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও বিকল্পধারার সাবেক তিন এমপির রয়েছে যত অভিযোগ।
সিংগাইর, হরিরামপুর ও সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মানিকগঞ্জ-২ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। কারণ এখানে বর্তমান ও সাবেক চার সংসদ সদস্য একে অপরের প্রতিপক্ষ হয়ে লড়ছেন। জনপ্রিয়তা ও পরিচিতিতে কারো চেয়ে কেউ কম এগিয়ে নন। সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মঈনুল ইসলাম খান শান্ত সবচেয়ে বেশি শক্তিশালি।
তার পিতা সাবেক মন্ত্রী মরহুম শামসুল ইসলাম খান নয়া মিয়া এই আসনের চার বারের সংসদ সদস্য ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে শান্ত সংসদ সদস্য হন। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়ে জয়লাভ করেন মানিকগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এস এম আব্দুল মান্নান। এ ছাড়া রয়েছেন বিকল্পধারার প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলন।
ভোটের মাঠে দেখা গেছে, এখানে সাবেক তিন এমপির প্রধান প্রতিপক্ষই হচ্ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। কেউ কাউকে ছাড় না দিয়ে সবাই এগিয়ে যাচ্ছেন সমান তালে। তবে বিএনপি প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য মঈনুল ইসলাম খান শান্তর অভিযোগ তার নেতাকর্মীরা হামলা-মামলার শিকার আর নির্বাচনী মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালাতে গিয়ে পদে পদে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাবেক এমপি এস এম আব্দুল মান্নানেরও অভিযোগ মমতাজের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি মমতাজের লোকজন তার গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে বলে তিনি জানান।
সাবেক মন্ত্রী বিকল্পধারার প্রার্থী গোলাম সারোয়ার মিলনের প্রচার-প্রচারণায় বাধা ও মাইক ভাঙচুর করার অভিযোগও রয়েছে এই আসনে।
বিগত দিনের ভোটের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মানিকগঞ্জ-২ আসনে সবচেয়ে বেশিবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপি প্রার্থীরা। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সালের নির্বাচন পর্যন্ত টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাবেক মন্ত্রী মরহুম শামসুল ইসলাম খান নয়া মিয়া। ধানের শীষের পাশাপাশি তার ব্যক্তি জনপ্রিয়তা ছিল ব্যাপক। যার কারণে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার মৃত্যুর পর ছেলে মঈনুল ইসলাম খান শান্ত উপনির্বাচনে জয়লাভ করে পিতার অবর্তমানে এলাকায় শাসন করেন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আসনটি চলে যায় মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির প্রার্থী এস এম আব্দুল মান্নানের দখলে। এরপর ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম বিনা ভোটে নির্বাচিত হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মমতাজ বেগম পুনরায় নৌকার টিকিট পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। জাতীয় পার্টির শাসনামলে এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বর্তমান বিকল্পধারার প্রার্থী গোলাম সারোয়ার মিলন। সে সময় তিনি শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক তিন সংসদ সদস্যের লড়াইটা বেশ ভালো জমে উঠবে বলে মনে করছেন এলাকার ভোটাররা।