কুমিল্লা-৩ মুরাদনগর সংসদীয় আসন এলাকার দুই থানায় চার দিনে বিস্ফোরক আইনে ছয়টি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপি ও এ দলের অঙ্গসংগঠনের ৪৩৪ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪০ নেতাকর্মীকে। এসব মামলার কারণে গ্রেপ্তার ও হামলার আতংকে এলাকাছাড়া হয়ে পড়েছে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের হাজারো নেতাকর্মী। এদের মধ্যে অধিকাংশ নেতাকর্মী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর ধানের শীষ প্রতীকের ভোট কেন্দ্র সমন্বয়ক, এজেন্ট এবং প্রার্থীর পক্ষের নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে সম্পৃক্ত। নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয় সুনিশ্চিত বুঝতে পেরে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভৌতিক অভিযোগে মামলা দিয়ে এভাবে পুলিশি হয়রানির মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে বলে দাবি করেন বিএনপির প্রার্থী কাজী মুজিবুল হক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৯শে ডিসেম্বর থেকে ২২শে ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই আসনের মুরাদনগর থানায় ৪টি ও বাঙ্গরা বাজার থানায় ২টিসহ ৬টি মামলায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের মোট ৪৩৪ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় ২৯১ জনের নাম উল্লেখসহ ১৪৩ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। মুজিবুল হক অভিযোগ করে বলেন, সুষ্ঠু ভোট হলে ধানের শীষের বিজয় ঠেকিয়ে রাখা যাবে না তা বুঝতে পেরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি ও বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিচ্ছে।
আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মীদের হামলা, মামলা ও নির্যাতনে বিএনপির নেতাকর্মীরা কোন প্রচারণা চালাতে পারছে না। এরই মধ্যে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে এবং ধানের শীষের নির্বাচনী অফিস ভেঙে ফেলা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মারধর ও হুমকী দিচ্ছে। কেউ যাতে ৩০শে ডিসেম্বর ভোট কেন্দ্রে এজেন্ট হতে না পারে সেই জন্য হুমকি দিয়ে ভয়ভীতি সৃষ্টি করে এলাকায় আতংক সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, ৪ দিনে দুই থানায় ভৌতিক অভিযোগে বিস্ফোরক আইনে ৬টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় ৩ জন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৪৩৪ জন দলীয় নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করা হয়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত ১৯শে ডিসেম্বর মুরাদনগর থানায় ৫৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। ২০শে ডিসেম্বর মুরাদনগর থানা পুলিশ বাদী হয়ে পাহাড়পুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সামসুল আলম সিকদার ওরফে তোফায়েল সিকদারকে বাড়ি থেকে ধরে এনে ১০টি ককটেল দিয়ে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। একই দিন উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার আরেকটি বিস্ফোরক মামলায় কুমিল্লা (উত্তর) জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মনিরুল হক জজ, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মহিউদ্দিন, মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মহিউদ্দিন অঞ্জন, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ আলম সরকার, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়নাল মোল্লাসহ ৮২ জন দলীয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় অজ্ঞাতনামা ২০ জনকে আসামি করা হয়। এছাড়া ২১ ডিসেম্বর মুরাদনগর থানায় ৮৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। একইদিন বাঙ্গরা বাজার থানায় ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ১৫ জনের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়। ২২শে ডিসেম্বর মুরাদনগর থানায় ২৮ জনের নাম উল্লেখ করে ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। এসব মামলায় গ্রেপ্তার ও প্রতিপক্ষের হুমকির কারণে ধানের শীষের এজেন্ট ও নেতাকর্মীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে এবং কমপক্ষে ২৫টি নির্বাচনী অফিস ভাংচুর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি অবিলম্বে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরীর জন্য নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপের দাবি জানান। এসব অভিযোগের বিষয়ে মুরাদনগর থানার ওসি একেএম মনজুর আলম ও বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, ‘আমরা কারো প্রতিপক্ষ না। এখানে নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখার জন্য আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত আছে। অহেতুক কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।’