× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

স্ম র ণ /আখতারুজ্জামান ইলিয়াস

ষোলো আনা

শরিফুল ইসলাম
৪ জানুয়ারি ২০১৯, শুক্রবার

সময়ের পথ পরিক্রমায় নিয়মতান্ত্রিকভাবে একদিন থেমে যায় একজন ব্যক্তির সব ধরনের কর্মকোলাহল। মৃত্যুর মধ্য দিয়েই সমাপ্ত হয় তার জীবনের পাণ্ডুলিপি। আসলে মৃত্যুর কাছে সবাই পরাজিত হয় না। কিছু মানুষ তাদের অবদানের মাধ্যমে মৃত্যুকে অম্লান করে বেঁচে থাকে স্মৃতির মাঝে। কখনো বা জীবন্ত মানুষের ছায়ায় আরো বেশি জীবন্ত রূপে। কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তেমনি একজন মানুষ। মাত্র দুটি উপন্যাস আর হাতেগোনা কয়েকটি ছোটগল্প লিখে তিনি পাঠকদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা লেখক হিসেবে। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে যে তার লেখা শব্দ কিংবা বাক্যের কলেবরে পরিমাপ করা দুঃসাধ্য ব্যাপার, তিনি তার লেখার গুণগত ব্যাপ্তি দিয়েই নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।

বাংলা সাহিত্যের এই নন্দিত নক্ষত্র আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ১৯৪৩ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধা জেলার গোটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
আর মৃত্যুবরণ করেন আজকের এই দিনে (৪ঠা জানুয়ারি) ১৯৯৭ সালে। তার পিতা বদিউজ্জামান মুহম্মদ ইলিয়াস ছিলেন পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য। আখতারুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। জগন্নাথ কলেজে লেকচারার হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ, মফিজউদ্দীন শিক্ষা কমিশনের বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা কলেজে অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। খুব ছোটবেলা থেকেই আখতারুজ্জামান ইলিয়াস লেখালেখি করতেন আশপাশের যা কিছুই তাকে নাড়া দিতো, সেসব নিয়েই তিনি লেখার চেষ্টা করেতেন। দশম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালেই তার ছোটগল্প সেই সময়ের বিখ্যাত ‘সওগাত পত্রিকায়’ প্রকাশিত হয়।

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বরাবরই ছিলেন অল্পপ্রজ, নিরীক্ষণপ্রিয় ও বিশুদ্ধধারার একজন বাস্তববাদী কথাকার। তা না হলে  সর্বমোট ৩০টিরও কম ছোটগল্প লিখে জনপ্রিয়তার চূড়ায় পা ফেলাটা মোটেই সহজলভ্য ছিল না। তার অসামান্য সম্মোহনী লেখনীশক্তির গুণে তিনি যে অসাধ্যকে সাধন করে নিয়েছেন তা আর মুখ ফুটিয়ে বলার দরকার হয় না। তিনি দুটি মাত্র উপন্যাস ‘খোয়াবনামা’ ও ‘চিলেকোঠার সেপাই’- রচনার মাধ্যমেই কুড়িয়েছেন স্থায়িত্বের নুড়ি, দুই বাংলার সমাদর। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস এই বিখ্যাত দুই উপন্যাসের মধ্য দিয়ে খুব সচেতনভাবেই বাংলা সাহিত্যে উপন্যাসের গতিপথে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছেন। সেই সঙ্গে সমকালীন উপন্যাস রচনায় তার মুন্সিয়ানা তাকে পরিণত করেছে ধরাবাঁধা কাঠামোর বাইরের উপন্যাসিকদের ধ্রুবতারা হিসেবে।  মাঝখানে শখের বশে তিনি কবিতাচর্চার দিকে কিঞ্চিৎ আগ্রহী হয়ে উঠলেও বাংলাসাহিত্যে তার একমাত্র ও অক্ষয় আসনটি হচ্ছে- কথাসাহিত্যে। কবি হওয়ার স্বপ্নটা কেবল তার কল্পনাতেই পুষ্পিত ছিল, বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে সে পথ থেকে তিনি নিজেকে একেবারেই দূরেই রেখেছেন।

১৯৬০ সালে সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত ‘স্বগত মৃত্যুর পটভূমি’ গল্পের মধ্য দিয়েই তিনি জানান দিয়েছিলেন, বাংলা সাহিত্যে নতুন যুগ আসছে। যে যুগে মানুষের অনুভূতি, দুঃখ-যন্ত্রণা কিংবা মনোজাগতিক ঘটনাগুলোর বর্ণনা দিয়েই চরিত্রকে চিত্রায়ন করা হবে। ৩০ বছরের সাহিত্যসাধনায় রচিত প্রায় প্রত্যেকটি লেখাই নিজস্ব গঠনশৈলীতে দাঁড় করিয়েছেন তিনি। তার স্থান-কাল-পাত্রের বর্ণনাও অত্যন্ত মুগ্ধকর। বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ভূষিত হয়েছেন ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার’, ‘সাদত আলী আখন্দ পুরস্কার’, ‘আনন্দ পুরস্কার’ সহ অসংখ্য পুরস্কার আর সম্মাননায়।

যে পা নিয়ে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস পুরান ঢাকার অলিগলি থেকে শুরু করে সারা দেশে চষে বেড়িয়েছেন। সাধারণ মানুষের স্বপ্ন আর মনস্ততত্ত্বের গল্প লিখেছেন, শেষ জীবনে সেই পা দু’টির একটি তাকে দিয়েছিল মরণব্যাধী ক্যানসার। অসুস্থ হয়েও লেখালেখি চালিয়ে গেছেন। মনের জোর দিয়েই বাংলা সাহিত্যকে আরেকটু সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মাত্র ৫৪ বছর বয়সেই ১৯৯৭ সালে ক্যানসার এই শক্তিধর কথাকারকে পৃথিবী থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়, কিন্তু তার রেখে যাওয়া অনন্তপ্রবাহী রচনাসম্ভারকে আজ পর্যন্ত কেউ ছিনিয়ে নিতে পারেনি আর এখানেই তিনি অমর হয়ে আছেন, থাকবেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পর্যন্ত।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর