× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

হ্যান্ডসেট আমদানি / কেঁচো খুঁড়তে সাপ

এক্সক্লুসিভ

কাজী সোহাগ
১৬ জানুয়ারি ২০১৯, বুধবার

একটি অভিযোগের সূত্র ধরে তদন্ত করতে গিয়ে হতভম্ব হয়ে যান তদন্তকারীরা। পান চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রমাণ মিলেছে শত কোটি টাকার বেশি অনিয়মের। সরকারকে কর ফাঁকি দিতে মরিয়া সংঘবদ্ধ ওই চক্রটি। এ ধরনের ঘটনা ঘটছে মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানিতে। হ্যান্ডসেট আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স এসোয়িশেন (বিএমপিআইএ) সম্প্রতি টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) এক পৃষ্ঠার একটি অভিযোগ দাখিল করে। এতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে স্থানীয় উদ্যোক্তা ব্যতীত কোম্পানিকে মোবাইল আমদানির অনুমতি না দেয়ার দাবি জানান। যুক্তি হিসেবে তারা অবৈধ পন্থা যেমন-আন্ডার ইনভয়েসিং ও বিদেশি মুদ্রা পাচারের তথ্য তুলে ধরে।
বিষয়টি আমলে নেয় বিটিআরসি। তারা ওই অভিযোগের সূত্র ধরে তদন্তে নামেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, নানা উপায়ে হাতেগোনা কয়েকটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সরকারের কর ফাঁকি দিচ্ছে। এজন্য তারা বেছে নিয়েছে নিয়মবহির্ভূত উপায়। তারা জানান, বাংলাদেশে বিদেশি ব্র্যান্ডের পণ্যের স্থানীয় পরিবেশক নিয়ম অনুযায়ী যেকোনো প্রতিষ্ঠান হতে পারে। কিন্তু পরিবেশক আমদানি করে সরাসরি মূল প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে, এটাই দীর্ঘদিনের রীতি।

কিন্তু মূল প্রতিষ্ঠান বাদ দিয়ে তৃতীয় একটি প্রতিষ্ঠানের নামে এলসি খুলে আমদানি করার বিষয়টি অস্বাভাবিক। বিটিআরসি জানিয়েছে, মূল প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে প্রকৃত আমদানি মূল্যের তথ্য গোপন করে কম মূল্য দেখানো যায় না। এ কারণেই কৌশল হিসেবে তৃতীয় আর একটি কোম্পানি খোলা হয়। যার আন্তর্জাতিক পরিচিতি নেই। কখনও এসব তৃতীয় পক্ষের প্রতিষ্ঠানের কর ফাঁকির তথ্য প্রকাশ হলে তার দায় মূল প্রতিষ্ঠানের ওপর পড়বে না। আসলে কর ফাঁকির দায় এড়ানোর জন্যই অস্বাভাবিকভাবে মূল প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে তৃতীয় পক্ষের প্রতিষ্ঠানের নামে এলসি খোলা হচ্ছে। বিটিআরসি জানিয়েছে, এতে আমদানি মূল্য এবং খুচরো বিক্রয় মূল্যের মধ্যে কোনো কোনো হ্যান্ডসেটের পার্থক্য দাঁড়াচ্ছে ১৮০ থেকে ২৫০ শতাংশ। কিন্তু সাধারণভাবে এ দুটি দামের পার্থক্য হওয়ার কথা ৬০ থেকে সর্বোচ্চ ৬৫ শতাংশ। উদাহরণ হিসেবে একটি হ্যান্ডসেটের আমদানি মূল্য হওয়ার কথা ছিল ২০ হাজার ৭৯৩ টাকা থেকে ২২ হাজার ৩৯৩ টাকার মধ্যে।

কিন্তু আমদানি মূল্য ১৭ হাজার ১১১ টাকা দেখানোর ফলে প্রতি হ্যান্ডসেটে কমপক্ষে এক হাজার টাকার কর ফাঁকি দেয়া হচ্ছে। বিএমপিআইএ জানিয়েছে, এ ধরনের অনিয়মের সঙ্গে তিনটি প্রতিষ্ঠান সরাসরি জড়িত। এগুলো হচ্ছে- হুয়াওয়ে, অপ্পো ও ভিভো। ২০১৮ সালে ওই তিনটি কোম্পানি দেশে ১১ লাখ ৪৫ হাজার ১১৫টি হ্যান্ডসেট আমদানি করে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬ লাখ ৫০ হাজার ৮৯৩টি হ্যান্ডসেট আমদানি করে হুয়াওয়ে। এরপরই অপ্পো আমদানি করে তিন লাখ ১২ হাজার ৯০৩টি ও ভিভো আমদানি করে ১ লাখ ৮১ হাজার ৩১৯টি। বিএমপিআইএ জানিয়েছে, এক বছরেই ওই তিনটি কোম্পানি সরকারকে প্রায় দুই শ’ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ট্রানশান বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও রেজওয়ানুল হক মানবজমিনকে বলেন, বর্তমানে ৫টি হ্যান্ডসেট কোম্পানি দেশে ফ্যাক্টরি দিয়েছে। এগুলো হচ্ছে- স্যামসাং, ওয়ালটন, সিম্ফনি, ট্রান্সশান ও ফাইভ স্টার।

এসব ফ্যাক্টরির পেছনে বিনিয়োগ করা হয়েছে প্রায় আড়াই শ’ কোটি টাকা। অথচ কয়েকটি বিদেশি কোম্পানি অবৈধভাবে হ্যান্ডসেট আমদানি করে সরকারকে প্রায় দুই শ’ কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়ে আমাদের বৈধ ব্যবসা নষ্ট করছে। সরকার যদি শিগগিরই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয় তাহলে আমাদের পথে বসতে হবে। ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দিতে হবে। অবৈধ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমাদের মতো বৈধ ব্যবসায়ীরা কোনো ধরনের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবো না। তিনি বলেন, নিয়ম ও বিধি অনুযায়ী সরকারের সব ধরনের হিস্যা বুঝিয়ে দিয়ে ব্যবসায় নেমেছি। এখানে হাজার মানুষের কর্মসংস্থানও হয়েছে। টিকে থাকতে না পারলে সবকিছু গুটিয়ে ফেলতে হবে।

যে চিঠির কারণে তদন্তে বিটিআরসি  

গত ১লা জানুয়ারি মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোয়িশেন (বিএমপিআইএ) বিটিআরসি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়। সংগঠনটির জেনারেল ম্যানেজার মনিরুল বাশার স্বাক্ষরিত চিঠিতে বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে, আপনি অবগত আছেন যে, বাংলাদেশি উদ্যোক্তাগণ গত প্রায় এক দশক ধরে বিভিন্ন গ্লোবাল ব্র্যান্ডের মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানি ও বাজারজাত করে দেশীয় গ্রাহকদের চাহিদা মিটিয়েছে। ফলে একদিকে যেমন বাংলাদেশের মোবাইল বাজার সুসংহত হয়েছে, অন্যদিকে তেমনি স্থানীয় পরিবেশকদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা পরিপক্ব হয়েছে। তারা স্থানীয় ভোক্তাদের চাহিদা ও আচরণ বুঝতে সক্ষম। চিঠিতে বলা হয়েছে, দুঃখের বিষয় ইদানীং কিছু বিদেশি মোবাইল কোম্পানি বিদেশি পরিবেশক নিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশে মোবাইল বাজারজাত করছে। এর ফলে গত এক দশক ধরে যেসব দেশীয় পরিবেশক বাজারটিকে গড়ে তুলেছে তারা সুযোগ হারাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই খাতের কর্মসংস্থান বিদেশিদের হাতে চলে যাচ্ছে। এ ছাড়া বিদেশি পরিবশেকরা নানা অবৈধ পন্থা (আন্ডার-ইনভয়েসিং, বিদেশি মুদ্রা পাচার ইত্যাদি) অবলম্বন করায় লেনদেনের অসামঞ্জস্যতা তৈরি হচ্ছে এবং সরকার তার ন্যায্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, স্থানীয় পরিবেশকরা যেহেতু স্থানীয় ভোক্তাদের চাহিদা ও আচরণ বুঝতে পারঙ্গম, সেহেতু এই খাতে বিদেশি জনবল অপ্রয়োজনীয়। তাই স্থানীয় উদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখার জন্য এবং সুষম প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করার জন্য মোবাইল ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে আমরা আপনার কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি, যেসব বিদেশি কোম্পানিতে অন্তত ৫১ ভাগ বাংলাদেশি উদ্যোক্তার অংশীদারি নেই তাদের মোবাইল আমদানি লাইসেন্স বাতিলের জন্য এবং এরকম নতুন কোনো কোম্পানিকে মোবাইল আমদানি/পরিবেশনার লাইসেন্স প্রদান না করার জন্য। চিঠির সঙ্গে কিছু প্রমাণপত্র উপস্থাপন করে বিএমপিআইএ। এ চিঠি পাওয়ার পরই টনক নড়ে বিটিআরসি’র। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্তে নামে তারা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর