আগামী মার্চে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এমন ঘোষণা আসার পরই শ্রীমঙ্গল উপজেলায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা সরব থাকলেও বিএনপি চুপচাপ। এ নির্বাচনে অংশ নেয়া বা না নেয়া নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। এমনকি সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও এ নির্বাচন নিয়ে তেমন আলাপ-আলোচনা নেই।
আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ‘দোয়া আশীর্বাদ’ ও কুশলাদি বিনিময় করছেন। দলীয় সমর্থন আদায়ের জন্য স্থানীয় এমপি, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীদের কাছে ধর্না দিচ্ছেন।
এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রনধীর কুমার দেব, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মো. আছকির মিয়া, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস ও পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য চেয়ারম্যান তফাজ্জল হোসেন ফয়েজ, বর্তমান উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রেম সাগর হাজরা, শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি মো. আফজাল হক। এছাড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আবারো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক হাজী কামাল হোসেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা এম এ রহিম নোমানী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি নেত্রী ও উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান হেলেনা চৌধুরী, শ্রীমঙ্গল উপজেলা জাতীয় শ্রমিকলীগের আহ্বায়ক শাহীন আহমদের স্ত্রী হাজেরা খাতুন নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এই উপজেলা শতভাগ চা জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত ৩টি ইউনিয়ন রয়েছে। এই তিনটি ইউনিয়নের মোট ভোটারের সংখ্যা ৪১,৮৪২।
এর মধ্যে সাতগাঁও ইউনিয়নে মোট ভোটার ৮,৫০২, কালিঘাট ইউনিয়নে ১৫,৪৭৯ ও রাজঘাট ইউনিয়নে ১৭,৮৬১। এছাড়াও সদর ইউনিয়ন, মির্জাপুর ও কালাপুর ইউনিয়নে আরো ৭-৮ হাজার চা শ্রমিক ভোট রয়েছে। এই ভোটের সমষ্টিই বলে দেয় চা শ্রমিক সমর্থিত কোনো প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণে সহজেই প্রভাব ফেলতে পারে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের বালিশিরা ভ্যালির উপদেষ্টা চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর সন্তান প্রেম সাগর হাজরা জানান,‘এবারের নির্বাচনে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। জাতীয় শ্রমিক লীগের উপজেলা যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য পিছিয়ে পড়া এই চা জনগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধু ও তাঁর কন্যা শেখ হাসিনাকে ভালোবেসে চোখ বুঝে নৌকায় ভোট দিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান রনধীর কুমার দেব জানান, আগামী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। বিগত নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আতাউর রহমান লাল হাজীর চেয়ে ২৪ হাজার ৭৪২ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তফাজ্জুল হোসেন ফয়েজ বলেন, এবার আমি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবো। এজন্য দলের কাছে মনোনয়ন চাইব।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আছকির মিয়া বলেন, ‘দল করি, দলের কাছে আমি অবশ্যই মনোনয়ন চাইব’। এই নির্বাচনে নিরব অবস্থানে থাকা বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী (হাজী মুজিব) বলেন ‘এই সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, পুলিশ প্রশাসন মিলে যে ভোট ডাকাতি করেছে সে অভিজ্ঞতা দেশের মানুষ ভুলেনি। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিএনপি আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে আমি। দলীয় সিদ্ধান্ত এলে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে বলে জানান তিনি।