জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী শুভ্রদেব। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অনেক শ্রোতাপ্রিয় গান তিনি উপহার দিয়েছেন। বিশেষ করে নব্বই দশকের শুরুতে শুভ্রদেবের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশছোঁয়া। সেই সময়ে স্টাইলিস্ট গায়কের তকমাও লাগে তার নামের পাশে। ‘যে বাঁশি ভেঙে গেছে’, ‘আমি হ্যামিলনের সেই বাঁশিওয়ালা’, ‘এ মন আমার পাথরতো নয়’, ‘কোনো এক সন্ধ্যায়’ কিংবা ‘মরণ যদি হয় তোমার প্রেমের আঘাতে’-এর মতো হিট সব গানের মাধ্যমে তরুণদের পছন্দের শিল্পীতে পরিণত হন তিনি। ক্রমশ স্টেজ, অডিওতেও ব্যাপকভাবে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। এখনো শুভ্রদেবের তুলনা তিনি নিজেই। নতুন গানের পাশাপাশি দেশ বিদেশের স্টেজ শো করে চলেছেন নিয়মিত।
সব মিলিয়ে কেমন আছেন? শুভ্রদেব বলেন, বেশ ভালো। ব্যস্ততার মধ্যে দিয়েই যাচ্ছে সময়। এখন ব্যস্ততা কী নিয়ে? তিনি বলেন, এখন ব্যস্ত রয়েছি স্টেজ শো নিয়ে। তবে, বড় শোগুলোই কেবল করছি। তাছাড়া নতুন গানের কাজও চলছে নিয়মিত। আপনার সর্বশেষ অ্যালবাম ‘ককটেল’ প্রকাশ হয় গত বছর। সাড়া কেমন পেয়েছেন? শুভ্রদেব বলেন, দেখুন এখন ডিজিটালি গান প্রকাশ হচ্ছে। বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমরাও গত দুই বছরে এ ধারাতে অভ্যস্ত হয়েছি। যদিও আরো আগেই হওয়া উচিত ছিল। তারপরও আমি বলবো খুব ভালোভাবেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ‘ককটেল’ অ্যালবামের গানগুলো একটি থেকে আরেকটি অনেক আলাদা। প্রকাশের পর থেকে খুব ভালো সাড়া পেয়েছি। তবে, আরো সময় দিতে হবে। এ গানগুলো দীর্ঘসময় টিকে থাকার মতো গান। সময়ের সঙ্গে ভালো অবস্থানে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। এখন মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা কেমন মনে হচ্ছে আপনার কাছে? শুভ্রদেব উত্তরে আত্মবিশ্বাসের সুরে বলেন, আমার মনে হয় আমরা ভালোর দিকে যাচ্ছি। আমরা ডিজিটালি গান প্রকাশ করছি খুব বেশিদিন নয়। তবে, ফলাফল কিন্তু খারাপ নয়। আরো সময় দিতে হবে। আমরা আরো যত অভ্যস্ত হবো ততই ভালো হবে। তাছাড়া এখনকার প্রজন্ম অনেক ভালো কাজ করছে। তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে আমি খুব আশাবাদী। অনেকে অনেক ভালো করছে। ভার্সেটাইল বেশ কিছু কণ্ঠ এসেছে। তারা সামনে ভালো করবে। তবে, সঠিকভাবে নিজেকে এগিয়ে নিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এদিকে, শুভ্রদেব সম্প্রতি মিউজিক্যাল স্টোর নিয়ে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমাদের দেশে অনেক জনপ্রিয় গান আছে, যেগুলো সংরক্ষণ করা হয়নি। অনেক ভালো ভালো গান হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন গান ইউটিউব ছাড়া ক্যাসেট কিংবা সিডিতেও রাখা হয় না। সব মিলিয়ে সংরক্ষণের অভাব তুমুলভাবে লক্ষণীয় এ সময়ে। শিল্পীদের সন্তানতুল্য গানগুলো যেন সংরক্ষিত থাকে এমন স্টোর তৈরি করতে চান শুভ্রদেব। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকেও বিষয়টি জানিয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে শুভ্রদেব বলেন, আসলে অনেক ভালো গান হারিয়ে গেছে, যেগুলো সম্পর্কে আমরা অনেকে জানিও না। আবার অনেক গান হারিয়ে যাওয়ার পথে। একটি লাইব্রেরিতে যেমন বিভিন্ন রকম বই সংরক্ষণ করা হয়, তেমনই মিউজিক্যাল লাইব্রেরিও তৈরি করা সম্ভব। এতে বিভিন্ন রকম গান সংরক্ষণ করা যাবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী সংস্কৃতিমনা। তিনি সবসময় শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মিউজিক্যাল স্টোর তৈরিতে আমাদের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কাজ করতে পারে। এ বিষয়ে আমার ধারণা আছে। বিভিন্ন সফটওয়্যার নিয়ে আমি কাজ করছি। মন্ত্রণালয় যদি চায় তবে আমিও এ বিষয়ে কাজ করতে আগ্রহী। তবে, এটা একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। সরকারিভাবে এটা করলে সবচাইতে ভালো। আমি আশা করবো এ রকম স্টোর তৈরির ব্যাপারে আমাদের সরকার উদ্যোগী হবে।