একাদশ জাতীয় সংসদে ১৪ দলের নেতাদের বিরোধী দল হিসেবে দেখতে চায় আওয়ামী লীগ। এতে তাদের ও সরকারের জন্য ইতিবাচক হবে বলে মনে করছে দলটি। গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের সমাবেশের প্রস্তুতি দেখতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। একাদশ নির্বাচনে অভাবনীয় বিজয় উদ্যাপনে আগামীকাল সমাবেশ করবে দলটি। ১৪ দলের শরিকদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংসদে তারা বিরোধী দলের আসনে বসলে এবং দায়িত্বশীল বিরোধিতা যদি করেন সেটা সরকারের জন্য ভালো এবং তাদের জন্যও ভালো। এসময় তিনি বিএনপি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমালোচনাও করেন। তিনি বলেন, বিএনপির আসলে এখন লেজেগোবরে অবস্থা। তাদের ঐক্যফ্রন্টে এখন ভাঙনের সুর।
সমাবেশের প্রস্তুতি পরিদর্শনে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ছিলেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এনামুল হক শামীম, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ। তারা প্রস্তুতির সার্বিক বিষয় খতিয়ে দেখেন। এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির আসলে এখন লেজেগোবরে অবস্থা। তাদের ঐক্যফ্রন্টে এখন ভাঙনের সুর। তাদের দেখে মাঝে মাঝে ভয় হয়-বেপরোয়া ড্রাইভার যেমন দুর্ঘটনার কারণ, রাজনীতিও দুর্ঘটনার কারণ। ফখরুল সাহেবের ইদানীংকালের আচার আচরণ দেখে তাকে এতটাই ভয়ঙ্কর ড্রাইভার মনে হচ্ছে এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের কথাবার্তায়ও একই সুরের ছোঁয়া পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা অতি সহিষ্ণুতার সঙ্গে বিষয়টি দেখছি। কেননা, তাদের হেরে যাওয়ার একটি বেদনা আছে, কষ্ট আছে। সেই কষ্ট থেকেই তারা বেপরোয়া হতে পারে। কিন্তু আমরা সরকারি দল, আমরা দেশ চালাচ্ছি, আমাদের একটি দায়িত্ব আছে। বিশাল একটা বিজয়ের সঙ্গে বিশাল একটা দায়িত্ব আমাদের আছে। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই আমাদের নেত্রী আগামী শনিবার জনগণের উদ্দেশ্যে, আমাদের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে, আমাদের দায়িত্ববোধের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। ১৪ দলের শরিকদের প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা তো বিরোধী দলে থাকবেন বলে অনেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা যদি সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসে এবং বিরোধী দল বিরোধী কণ্ঠ যত কনস্ট্রাকটিভ হয়ে পার্লামেন্টে থাকবে, ততই সরকারি দল কোনো ভুল করলে সে ভুলটা সংশোধন করতে পারবে। কারণ বিরোধী দল না থাকলে তো একতরফা কাজ চলবে। তিনি বলেন, বিরোধী দল থাকলে বিরোধিতা থেকে সরকারের কিছু শিক্ষণীয় বিষয় থাকবে। সমালোচনা থেকে শুদ্ধ হতে পারবে। সমালোচনা তো মানুষকে শুদ্ধ করে। সমালোচনা থেকে যদি কোনো ভুল হয় তাহলে সে ভুল শুদ্ধ করতে পারবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৪ দলীয় ঐক্যজোট একটি রাজনৈতিক জোট। নির্বাচনী জোট আর রাজনৈতিক জোট ভিন্ন জিনিস। ১৪ দলের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক সেটা হচ্ছে রাজনৈতিক জোটের সম্পর্ক। মহাজোট নামের যে বৃহত্তর জোট সেটা কিন্তু নির্বাচনী ঐক্যজোট। যেহেতু ১৪ দলের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রাজনৈতিক, কাজেই তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক থাকবেই। তিনি বলেন, রাজনৈতিক জোটের প্রশ্ন যখন আসে তখন তো আমরা এক সঙ্গেই আছি। আমাদের জোট তো আমরা ভাঙ্গিনি। এগুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের আলাপ-আলোচনা হচ্ছে, আরো আলোচনা হবে। কিন্তু এটা মনে রাখা জরুরি মহাজোট কিংবা ১৪ দলে কোনো প্রকার টানাপড়েন নেই। আমাদের মধ্যে কোনো ব্যাপারে যদি ভুল বোঝাবুঝি থাকে সেটা আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করবো। জনগণের ভোগান্তির বিষয়টি মাথায় রেখে ছুটির দিনে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। মাঝে একদিন বাকি। মঞ্চ সাজসজ্জার প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। ঢাকা এবং ঢাকার আশেপাশে বিভিন্ন শাখা এবং পার্টির নেতাকর্মীরা প্রস্তুত। একটি বিশাল বিজয় সমাবেশ হবে। গত ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে মহাজোট গড়ে অংশ নিয়েছিল আওয়ামী লীগ, যেখানে ১৪ দলীয় জোটের বাইরে জাতীয় পার্টি (জাপা), জাতীয় পার্টি (জেপি), বিকল্প ধারা অংশ নিয়েছিল। নির্বাচনে মহাজোট ৩০০ আসনের ২৮৮টিতেই জিতেছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগই এককভাবে পেয়েছে ২৫৭টি আসন। বিপরীতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জিতেছে মাত্র আটটি আসনে। ২২ আসনে বিজয়ী এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি এবার সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসছে।