× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

হুইল চেয়ারে মহসিনের ‘ক্রিকেট জয়’

ষোলো আনা

ইশতিয়াক পারভেজ
১৮ জানুয়ারি ২০১৯, শুক্রবার

বয়স তখন মাত্র ৬ মাস। এই বয়সেই পোলিও রোগে আক্রান্ত হন শিশু মহসিন। কিন্তু পোলিও থেকে সেরে উঠলেও চিরতরে তার পা দু’টি অকেজো করে দিয়েছে। যে কারণে যত বড় হয়েছে হামাগুড়ি ছেড়ে তাকে আশ্রয় নিতে হয়েছে হুইল চেয়ারে। এই ভাবেই বড় হতে থাকেন তিনি। নিজের ১০ বছর বয়সে ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফিজয়ী বাংলদেশকে দেখেই তার মাথায় ঢোকে ক্রিকেটের পোকা। কিন্তু হুইল চেয়ারে বসে কিভাবে ক্রিকেট! তবে পা দু’টি শুকিয়ে অসাড় হলেও সেই শক্তি যেন জড়ো হয়েছিল মনে। তাই এলাকাতেই শুরু হয় ক্রিকেট খেলা।

কখনো চেয়ারে বসে কখনো বা হামাগুড়ি দিয়ে।
তার ম্বপ্ন পাখা মেলে উড়তে শুরু করে। ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন হুইলচেয়ার ক্রিকেট টিম। যেখানে তার মতোই আরো অনেকে যোগ দেন নিজেদের জীবনে নতুন আলোর পথ দেখাতে। ২০১৪-তে আসে সেই সুযোগ। প্রথমবার ভারতে হুইল চেয়ার ক্রিকেট খেলতে যায় মহসিনের দল। প্রথম আসরেই তাজমহল ট্রফিতে বাজিমাৎ করে তার দল। চেয়ারে বসেই শুরু হয় ক্রিকেট জয়। এ নিয়ে মহসিন বলেন, ‘৬ মাস বয়সেই পোলিও হয়। আস্তে আস্তে বড় হতে থাকি। এমন সন্তানতো আসলে হয় ঘরের বোঝা। কিন্তু ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফি জয়ের সেই ম্যাচ দেখার পর কিছু একটা করে দেখানোর ভূত চাপে। শুরু করি ক্রিকেট খেলা। প্রথম ট্রফি জিতি ২০১৪-তে তাও ভারকে হারিয়ে। তখন প্রধানমন্ত্রী আমাদের ডেকে আলাদাভাবে সম্মানও জানান। এরপর আর আমাদের পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।’

গেল ৪ বছরে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ১২ ম্যাচে বাংলাদেশ হুইল চেয়ার ক্রিকেট টিম জিতেছে ৮ ম্যাচ। এছাড়াও মোট ট্রফি জিতেছে ৩টি। এখন তাদের সামনে আগামী মাসেই এশিয়া কাপ এরপর ২০২০-এ হুইল চেয়ার বিশ্বকাপ। জাতীয় দলের ২৫ জন ক্রিকেটার এখন প্রস্তুত হচ্ছে আরো দু’টি স্বপ্ন জয়ের জন্য। কিন্তু এখনো আছে তাদের সামনে নানা প্রতিবন্ধকতা। যা এগিয়ে যাওয়ার পথকে কঠিন করে তুলেছে। মহসিন বলেন, ‘দেখেন আমাদের অনুশীলনের জন্য কোনো নির্দিষ্ট মাঠ নেই। যে কারণে খেলে নিজেদের তৈরি করে নিতে সমস্যা হয়। এছাড়াও বড় কোনো স্পন্সর হয়নি। এমনকি স্থায়ী কোনো স্পন্সরও নেই। যদি এগুলো পেতাম তাহলে হয়তো সামনে ফেব্রুয়ারিতে এশিয়া কাপ ও ২০২০-এ হুইল চেয়ার বিশ্বকাপে দেশের জন্য কিছু করতে পারতাম। এখন এশিয়াতে আমরাই কিন্তু অন্যতম সেরা দল।’

অন্যদিকে নিজের স্বপ্ন নিয়ে মহসিন দারুণ উচ্ছ্বসিত। ক্রিকেট তাকে দিয়েছে নতুন জীবন। তাই এই দেশের ক্রিকেটের জন্যও ভূমিকা রাখতে চান তিনি। মহসিন বলেন, ‘আমার বাবা-মা, স্ত্রী ও সন্তানরা যখন বাইরে যায় তখন সবাই আমার নাম বলে। যে ছেলের কোনোদিন কিছু করার কথা নয়, সেই ছেলে ক্রিকেট খেলে এখন সংসার চালায়। এখন আমাদের দেশে ২০০ জন ক্রিকেটার হুইল চেয়ারে ক্রিকেট জয় করতে এগিয়ে এসেছে। তাই আমার স্বপ্ন একটাই- দেশের জন্য এমন কিছু করে যাওয়া যেন কোনো মানুষ শরীরের অক্ষমতাতে নিজেকে হারিয়ে
না ফেলে।’
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর