নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে আসাম সহ উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এই সব রাজ্যে বিজেপি দলের মধ্যেও অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রবল হয়ে উঠেছে। একাধিক বিজেপি বিধায়ক বিলের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রামমাধব ছুটে গিয়েছেন গুয়াহাটিতে। এবার আসরে নেমেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আধিকারিকরা। রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক আধিকারিক বলেছেন, খুব সামান্য সংখ্যক বাংলাদেশি নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল থেকে উপকৃত হবেন। কেননা, ২০১৫ সালে চালু হওয়া দীঘমেয়াদী ভিসার জন্য মাত্র ২০০ জন বাংলাদেশি আবেদন করেছেন। এক হিসেবে মন্ত্রক জানিয়েছে, ২০১১ সাল থেকে এ বছরের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ১৮৭ জন বাংলাদেশি দীর্ঘ মেয়াদী ভিসা পেয়েছেন।
এই সময়ের মধ্যে পাকিস্তান থেকে এসেছেন এমন প্রায় ৩৪ হাজার ৮১৭ জন সংখ্যালঘু মানুষ দীর্ঘ মেয়াদী ভিসা পেয়েছেন। দীর্ঘ মেয়াদী ভিসার মতই প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল অনুযায়ী ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতে, বাংলাদেশিরা যদি ভারতীয় নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদন করাতে আগ্রহী হতেন তাহলে তারা ইতিমধ্যেই দীর্ঘ মেয়াদী ভিসা নিতেন। অথচ ২০১৮ সালে মাত্র ২ জন বাংলাদেশি নাগরিক, ২০১৭ সালে ৩জন, ২০১৬ সালে ৫০ জন. ২০১৫ সালে ২৬ জন,২০১৪ সালে ৭৪ জন, ২০১২ সালে ২৭ জন এবং ২০১১ সালে ৪ জন দীর্ঘ মেয়াদী ভিসার জন্য আবেদন করে তা পেয়েছেন। ২০১৩ সালে কোনও বাংলাদেশিকেই দীর্ঘ মেয়াদী ভিসা দেওয়া হয়নি। লোকসভায় পাশ হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি রাজ্য সভায় পাশের অপেক্ষায় রয়েছে। এই বিল অনুযায়ী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে নির্যাতিত হয়ে যে সব সংখ্যালঘুদের ( হিন্দু, শিখ, জৈন, পার্সি, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান) ভারতে গত ৬ বছর ধরে বসবাস করছেন তাদের নাগরিকত্ব দেবার কথা বলা হয়েছে। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যে সব বাংলাদেশি নাগরিক এসেছেন তাদের ক্ষেত্রে এই বিল অনুয়ায়ী নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। আর এই নাগরিকত্ব লাভের জন্য ভিসার প্রতিলিপি, পাসপোর্টের প্রতিলিপি, রেসিডেন্সিয়াল পারমিট, ছবি এবং কোন ভারতীয়র কাছ থেকে গ্যারান্টি হিসেবে ইনডেমনিটি বন্ড দাখিল করতে হবে।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিং ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, বিলটি ভারতের সব রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে প্রযোজ্য হবে। যারা বিল অনুযায়ী নাগরিকত্ব পাবেন তারা ভারতের যে কোনও স্থানে বসবাস করতে পারবেন। মন্ত্রী আরও বলেছেন, নির্যাতিতদের দায়ভার গোটা দেশই বহন করবে। শুধুমাত্র আসামকেই বহন করতে হবে না। তিনি আরও বলেছেন, ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবার পর কেউ যদি উত্তর পূর্ব ভারতের বাইরে থাকতে রাজি হন তাদের অর্থনৈতিক সুবিধা দেবার বিষয়টিও ভেবে দেখা হচ্ছে।