বিপিএলের ৬ষ্ঠ আসর শুরু হয়েছিল রানের আক্ষেপ নিয়ে। প্রথম ২২ ম্যাচে দেশি-বিদেশি কোনো ব্যাটসম্যানই দেখা পাননি সেঞ্চুরির। সিলেট পর্বে আসরের সর্বোচ্চ ৮৫ রান আসে সাব্বির রহমান রুম্মানের ব্যাট থেকে। অবশেষে ঢাকার দ্বিতীয় পর্বে সেঞ্চুরির আক্ষেপ ভোলালেন ইংলিশ ক্রিকেটার লরি ইভান্স। রাজশাহী কিংসের হয়ে গতকাল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে এই আসরের প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকান ৩১ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান। ৬২ বলে ৯ চার ও ৬ ছয়ে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ১০৪ রানে। গত আসরে সেঞ্চুরি এসেছিল ৩টি। যার দুটিই করেছিলেন ক্রিস গেইল ও অপরটি চার্লস।
এখন পর্যন্ত ৬ আসরে মোট দর্শকরা দেখেছে ১৩টি সেঞ্চুরি। সব মিলিয়ে সর্বাধিক সেঞ্চুরির মালিক ক্যারিবীয়ান টি-টোয়েন্টি দানব গেইল। দেশিদের মধ্যে সেঞ্চুরি আছে শাহরিয়ার নাফীস, মোহাম্মদ আশরাফুল ও সব শেষ সাব্বিরের। এই সেঞ্চুরিতে বিপিএলের ক্রিকেট ইতিহাসে হয়েছে আরো এক রেকর্ডও। রায়ান টেন ডেসকাটাকে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে সর্বোচ্চ ১৪৮ রানের জুটি গড়েন ইভান্স। আগের জুটি ছিল ১২৩ রানের। ২০১৫ তে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজা ও মারলন স্যামুয়েলসের। শুধু তাই নয়, এটি বিপিএলের ৬ষ্ঠ সর্বোচ্চ জুটিও। অন্যদিকে দু’জনের ব্যাটে রাজশাহী কিংস পেয়েছে আসরে তাদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ১৭৬ রান তাও ৩ উইকেট হারিয়ে। আগের ৬ ম্যাচে যেখানে তাদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ছিল ১৩৬ রান ৬ উইকেট হারিয়ে।
বিপিএলের চলতি আসরে রাজশাহী কিংসে নেই বড় কোনো তারকা। বেশির ভাগই দেশি তরুণ ক্রিকেটার। আর বিদেশি যারা আছেন তারাও খুব একটা পরিচিত নন। আর দলের নেতৃত্বে মেহেদী হাসান মিরাজ তো সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়ক। সেই দলই দেখিয়ে যাচ্ছে একের পর এক চমক। আগের ৫ ম্যাচে ইভান্সের সংগ্রহ ছিল সব মিলিয়ে ১৩ রান। এই ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলেন লরি ইভান্স, এটাই ছিল বিস্ময়কর। কিন্তু আরো বড় চমক লুকিয়ে ছিল ইভান্সের ব্যাটে। এর আগে ১০৭ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে এই ইংলিশ ব্যাটসম্যানের কোনো সেঞ্চুরিই ছিল না। তবে খেলেছিলেন ৯৬ রানের একটি ইনিংস। তবে বিপিএলে তার ক্যারিয়ারে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। লন্ডনে জন্ম নেয়া এই ক্রিকেটারের কখনো জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ হয়নি। কিন্তু খেলেছেন ৬০ প্রথম শ্রেণির ও ৫৫টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ।
গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে রাজশাহী কিংস। মিরপুরের উইকেট নিয়ে ছিল দারুণ সমালোচনা। কিন্তু ঢাকার দ্বিতীয় পর্বে এসে উইকেট দিয়েছে রান উপহার। যদিও ব্যাট করতে নেমে কুমিল্লার বিপক্ষে শুরুতে ধুঁকছিল কিংসরা। ওপেনার শাহরিয়ার নাফীস ৫ রান করে বিদায় নিয়েছেন সাজঘরে। এরপর অধিনায়ক মিরাজ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন। আরো বড় ধাক্কা লাগে মার্শাল আইয়ুব স্পিনার লিয়াম ডসনের বলে আউট হয়ে ফিরে গেলে। ৭ ওভারে তখন রাজশাহীর ২৮ রান তাও ৩ উইকেট হারিয়ে। ধারণা করা হচ্ছিল খুব বড় স্কোর দেখবে না এই ম্যাচ। কিন্তু নাটকের তখন অনেক বাকি। এমন পরিস্থিতি থেকে ইভান্স ও ডেসকাটার ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় কিংসরা। ১৩ ওভার শেষেও রাজশাহীর রান ছিল ৭০। এরপর শুরুর ধাক্কা সামলে এগিয়ে যান দারুণ গতিতে। ম্যাচের ১৪তম ওভারে থিসারা পেরেরা বল হাতে আসলে বদলে যায় চিত্র। ওই ওভারে দুই ছক্কা হাঁকান ইভান্স, ডেসকাট একটি। এরপর দু’জন উড়েন চার-ছক্কার ডানায়। ওয়াহাব রিয়াজকে এক ওভারে দুটি ছক্কা মারেন ইভান্স। এরপর পৌঁছে যান সেঞ্চুরিতে। অন্যপাশে ডেসকাটা ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৪১ বলে ৫৯ রান করে অপরাজিত থাকেন।
‘আস্থা রাখায় কৃতজ্ঞ’
বিপিএলে নিজের প্রথম আসরে পাঁচ ম্যাচে মাত্র ১৩ রান। এরপরও রাজশাহী কিংস ভরসা হারায়নি ইংলিশ ব্যাটসম্যান লরি ইভান্সের ওপর। সেই আস্থার প্রতিদান দারুণভাবে দিয়েছেন এই ক্রিকেটার। আর ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে ইভান্স বলেন, ‘আমি মনে করি আজ দলে সুযোগ পাওয়ার জন্য আমি উপযুক্ত ছিলাম না। আমি এর আগের ম্যাচগুলোতে কোনো রান করিনি। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ, তারা আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছে।’
১০৮ টি-টোয়েন্টি খেলা ইভান্স বিপিএলে আসার আগে ফর্মে ছিলেন না। তবে করে গেছেন কঠিন পরিশ্রম। শেষ পর্যন্ত তার ফলও পেয়েছেন এখনো ইংল্যান্ড জাতীয় দলে সুযোগ না পাওয়া এই ব্যাটসম্যান। তিনি বলেন, ‘এখানে আসার পর গতকাল অনুশীলনে আমি প্রথমবারের মতো ভালো অনুভব করেছি। আমি ঘরের মাঠে মৌসুম শেষে, এপিএল খেলেছি। এরপর বিশ্রাম নিয়েছি কিছুদিন। বিবাহ সম্পন্ন করেছি। এরপর আমি এখানে এসেছি, কোনো ফর্ম ছিল না। এই উইকেটে রান করা কঠিন ছিল আমার জন্য। এখানকার ক্রিকেটের মান ভালো। আমাকে বেসিক ব্যাটিংয়ে ফিরে যেতে হয়েছে, নিজেকে ভালো জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। আজ টপ অর্ডারে সুযোগ পাওয়া বড় ব্যাপার ছিল। কঠোর পরিশ্রমই হয়তো রানে ফেরার কারণ।