× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আবার কি মেতে উঠবে মুম্বইয়ের ড্যান্স বার?

এক্সক্লুসিভ

মানবজমিন ডেস্ক
২৩ জানুয়ারি ২০১৯, বুধবার

মুম্বইয়ের রাতের জীবনের এক বড় অধ্যায় ড্যান্স বার। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব বার-এ জমে উঠতো নর্তকীদের কোমর দোলানো। সেই সঙ্গে নেচে উঠতেন নামি-দামি তারকারা। আবার জুয়াড়িরা পেতে বসতেন ব্যবসা। দেহ পসারিণীদেরও সেখানে অবাধ যাতায়াতের কথা শোনা যায় মিডিয়ায়। অনেকবার পুলিশ এমন বার-এ হানা দিয়ে আটক করেছে যুবতীদের। তারা মুখ ঢেকে সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছেন। সেই ড্যান্সবারগুলোর আলো নিভে গেছে।
সেখানে আর যাতায়াত নেই নর্তকী বা তাদের খদ্দেরদের। ড্যান্সবারকে কেন্দ্র করে যেসব দোকান গড়ে উঠেছিল আশপাশে তাও বন্ধ হয়ে গেছে। তবে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের দেয়া এক রায়ে নতুন জীবন পেতে পারে মুম্বইয়ের ড্যান্স বার। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ড্যান্সবার চলতে এবং সেখানে পানীয় চলতে পারে। এখন কি তবে জমে উঠবে আবার সেই ড্যান্সবার। এ নিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া একটি বিশাল প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

২০০৫ সাল। তারই এক রাতে মুম্বইয়ের ভিলে পারলেতে অবস্থিত দীপা বার-এ অভিযান চালায় পুলিশ। ওই বারটির সঙ্গে বলিউড-ক্রিকেটার-জুয়াড়ি, আন্ডারওয়ার্ল্ডের কানেকশন থাকার কথা বেরিয়ে আসে পুলিশের তদন্তে। আটক করা হয় কয়েকজন নামিদামি তারকাকে। তদন্তে দেখা যায়, ওই বারটির একজন নর্তকী তারান্নুম জুয়াড়ি ও ক্রিকেটারদের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের মাধ্যম হয়ে উঠেছেন।

এক সময় মুম্বইয়ের দাদার এলাকায় বিখ্যাত ছিল কারিশমা নামের ড্যান্স বার। তা এখন একটি পারিবারিক রেস্তোরাঁয় রূপ নিয়েছে। তবে গ্রান্ট রোডে অবস্থিত টোপাজ এখন একটি ‘অর্কেস্ট্রা বার’। ওয়ারলির কার্নিভাল ও দাদার এলাকার বেওয়াচ নামের বারগুলো এখন সব ‘অর্কেস্ট্রা বার’। তারা প্রতিবছর প্রায় ৪ কোটি রুপির বড় ব্যবসা করছে। এর প্রতিটিতে কর্মরত ১৩০ জন মানুষ। তাদের আগে যে ব্যবসা ও কর্মী ছিল তা এখন অর্ধেক হয়ে গেছে। রাতারাতি চাকরি হারিয়েছেন ৬৫ হাজার নারী ও ৪৫ হাজার পুরুষ। তাদের অনেকেই শহর ছেড়ে গেছেন।

‘অর্কেস্ট্রা বার’গুলোতে লাইভ বিনোদনের ব্যবস্থা থাকে। সেটা হয় আইনগতভাবে অথবা চতুরতার সঙ্গে। এসব বার-এ গায়ক বা গায়িকা নয় এমন ব্যক্তিরা লাইভ ব্যান্ডের সঙ্গে অঙ্গ নাচান। গোঁ গোঁ শব্দ করেন। মঞ্চের পাশে নাচতে থাকেন উত্তেজিত ব্যক্তিরা। চলে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা অথবা কোনো গোপন চুক্তি করার চেষ্টা।

সাম্প্রতিক সময়ে মুম্বইয়ের এই বর্ণিল ড্যান্সবারগুলোর শাটার যখন বন্ধ হয়ে যায় তার আগে এটা ছিল মুম্বইয়ের বিনোদন শিল্পের এক অখণ্ড অংশ। যাদের বয়স ৭০ এর কোঠায় তারা শহরে ড্যান্স বারের আবির্ভাব দেখেছেন। আর নব্বইয়ের কোটায় যারা তারা শহরটি উদারীকরণ হতে দেখেছেন। ১৯৭২ সালে প্রথম ড্যান্স বার সোনিয়া মহল তার দরজা উন্মুক্ত করে। এটি নরিমন পয়েন্টে একটি অফিসের টাওয়ারে ছিল। এর মালিক ছিলেন একজন জগতিয়ান- তিনি হার্টের সমস্যাওয়ালা একজন বয়সী ভদ্রলোক। তিনি মাঝে-মধ্যেই মজা করতেন এ নিয়ে যে, ড্যান্সাররা হলেন তার পেসমেকার। শহরের একেবারে শুরুর ড্যান্স বারটি ডিজাইন করা হয়েছিল গ্লাস ব্যবহার করে। কিন্তু নর্তকীরা উপযুক্ত পরিবেশের অভাব বোধ করতেন। ফলে তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হতো। ড্যান্স বারের ছায়াঘেরা কোণার মধ্যে চুক্তি হতো অথবা চুক্তি ভঙ্গ হতো। ‘ভাই’দের জন্য অপেক্ষায় থাকতেন ‘যুবতীরা’। এসব স্থানে যে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কুখ্যাতরা যেতেন না তেমন না। এখানে উল্লেখ্য, দাউদ ইব্রাহিমের ভাই সাবির ও পাঠান গ্যাংদের মধ্যে প্রথম যে সংঘাত শুরু হয়েছিল তা ওই সোনিয়া মহলেই।

জগতিয়ান যে প্রবণতা শুরু করেছিলেন তা সহজেই লুফে নেয় উচ্চাভিলাষী শেঠিরা। তারা প্রচুর অর্থের মালিক ছিলেন। ঘাটকোপারের সুরেশ শেঠি আরো একধাপ এগিয়ে গেলেন। তিনি খুলে দিলেন একটি ক্লাব। নাম দিলেন মেঘরাজ। সেখানে বনি এমের জন্য নাচ করতেন বিকিনি পরা নর্তকীরা। অন্যদিকে মুম্বইয়ের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে বিলাসবহুল সমুদ্র ড্যান্স বার শুরু করেন শেখর শেঠি। এই ড্যান্স বার এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়ে যায় যে, এর বাইরে একজন পানওয়ালাও এক রাতে ৩০০ পান বিক্রি করতেন। প্রভাদেবীতে সঙ্গম নামে ড্যান্স বারে প্রথম চালু হয় ব্যাটারিচালিত মিনি ফ্যান, যাতে এগুলো দিয়ে ড্যান্সারদের কাছে অর্থ উড়িয়ে আনা যায়। পুলিশও এই বারটিকে খুব পছন্দ করতো।

এই ব্যবসায় কিছুটা ছন্দপতন ঘটায় টোপাজ বার অ্যান্ড রেস্তোরাঁ। এটি গ্রান্ট রোডে নোভেলটি সিনেমা হলের কাছে। এই বারটি মারবেল পাথর, গ্লাস ও মিরর ব্যবহার করে সমৃদ্ধশালী হিসেবে গড়ে তোলা হয়। এখানে ছিল তিনটি ভিআইপি হল। এর একটি ব্যবহার করতে পারতেন সাধারণ মানুষ। যা থেকে প্রতি রাতে গড়ে আয় হতো ৫ লাখ রুপি। এক সময়ে এই বারটি জনপ্রিয় ছিল ডায়মন্ড ব্যবসায়ী, বিদেশি পর্যটক, সফরকারী ক্রিকেটারদের কাছে। সেই বারটি এখন তারপুলিনের শিট ও দোকানপাটে ঢাকা পড়েছে। এখানকার কর্মী সংখ্যা ৭০ থেকে কমে ৩২-এ এসে দাঁড়িয়েছে।  
১৭ই জানুয়ারি সেখানকার একজন কর্মী বলেন, ড্যান্স বার বন্ধ করার রায়ের ফলে আমাদের ব্যবসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টোপাজ কখন আবার তার জীবন ফিরে পাবে তা অনিশ্চিত। আমরা এখন এটা খুলি স্থানীয় সময় বিকাল ৩টায়। আমাদের আছে ১৫ জন সংগীতশিল্পী। তারা রাত সাড়ে ৯টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত গান করেন।
ড্যান্স বারস এসোসিয়েশনের ভারত ঠাকুর বলেন, ভিলে পারলের দীপার মতো অনেক বড় বড় বার বন্ধ হয়ে গেছে। আমার জানামতে, ওই স্থানগুলো ভাড়া দেয়া হয়েছে যোগব্যায়ামের কেন্দ্র হিসেবে। আর মালিকরা চলে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়ে চলে গেছেন রিয়েল এস্টেটের ব্যবসায়।

ওদিকে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ১৭ই জানুয়ারি যে রায় দিয়েছেন তাতে নতুন করে আশা জেগে উঠেছে। তবে বার মালিকরা বলেছেন, রাত সাড়ে এগারোটার মধ্যে বার বন্ধ করতে বলা হয়েছে। কোনো আপত্তিকর নাচ করা যাবে না বলে বলা হয়েছে। এসবই অনুৎসাহিত করার মতো বিষয়। ড্যান্স বার কারিশমার মালিক মানজিৎ সিং শেঠি বলেছেন, আমরা দাদার-এ ভালো ব্যবসা করছিলাম। এখন আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান একটি রেস্তোরাঁয় রূপ নিয়েছে। তা দিয়ে কোনোমতে বেঁচে আছি।

ভারত ঠাকুর বলেছেন, যেসব ড্যান্স বারে নর্তকীরা আপত্তিকর নাচ করবেন সেইসব বারের মালিকদের তিন বছরের জেল অনুমোদন করেছেন সুপ্রিম কোর্ট। তার প্রশ্ন,  কোন নাচটা আপত্তিকর তা নির্ধারণ করতে পারে কে? এ নিয়ে কাজ করা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই জেলে গিয়ে জীবন কাটানোর চেয়ে আমাদের এ ব্যবসা বন্ধ রাখাই ভালো।  

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি। এদিন নতুন সবেমাত্র নিজেদের দরজা খুলেছে তিনটি ড্যান্স বার। তবে এক বছরের মাথায় ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওই তিনটি বারই বন্ধ করে দেয় পুলিশ। অনিয়মের অভিযোগে পুলিশ তাদের লাইসেন্স বাতিল করে। পুলিশের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ১৭ই জানুয়ারি বলেছেন, ওই তিনটি বার-এর কোনোটিকেই এখন পর্যন্ত অনুমোদন দেয়া হয়নি। তাদেরকে নতুন নিয়মের অধীনে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে। ওই বারগুলো চাহিদা পূরণ করতে পারেনি। তাই তাদেরকে লাইসেন্স দেয়া হয়নি- বলেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর