বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও উন্নয়ন একসঙ্গে এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জার্মান রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে তৃণমূল পর্যায় থেকে দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করা। ঢাকাস্থ জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফারেনহোল্টজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম গণমাধ্যমকে জানান, গণভবনে সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রদূত পিটার ফারেনহোল্টজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দেন। ওই বার্তায় টানা তৃতীয় মেয়াদের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে জার্মান চ্যান্সেলর বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি ও সফলতা কামনা করেছেন। পারস্পরিক অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে জার্মানি বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলেও চ্যান্সেলর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন সচিব। ইহসানুল করিম জানান, জার্মান দূতের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার সরকার দেশব্যাপী সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বিস্তৃত করেছে এবং আগামী দিনগুলোতে এটি আরো জোরদার করা হবে। যোগাযোগ খাত নিয়ে আলাপকালে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার রেল, নৌ ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করছে এবং রেল যোগাযোগ উন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
সরকার প্রধান বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে সরকার, যেখানে জাপান, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ অন্যান্য দেশ বিনিয়োগ করেছে। তাদের জন্য সেখানে জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ সময় তিনি জার্মান বিনিয়োগকারীদেরও শিল্প কারখানা স্থাপনে তাদের পছন্দ অনুযায়ী জমি নেয়ার প্রস্তাব করেন। এ সময় বাংলাদেশকে ‘বিপুল সম্ভাবনার দেশ’ উল্লেখ করে জার্মান দূত প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার পড়েছেন এবং তা বাস্তবায়নে তার দেশ সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাবে। রাষ্ট্রদূত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থানের প্রশংসা করেন জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, বৈঠকে জার্মান কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী বলেও জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত। একই সঙ্গে তিনি বলেন, অনেক খাতে দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা আরো এগিয়ে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। রাষ্ট্রদূত জানান, জার্মান সংসদ সদস্যদের সমন্বয়ে একটি এবং জার্মান সংসদের ভাইস প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে পৃথক আরেকটি প্রতিনিধিদল শিগগির বাংলাদেশ সফর করবে। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলাপকালে ফারেনহোল্টজ বলেন, তিনি তিনদিন কক্সবাজারে অবস্থান করেছেন এবং ওই সময়ে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন ছাড়াও সেখানকার মানুষজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ ও প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মো. জয়নুল আবেদীন উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, মধ্য ফেব্রুয়ারিতে প্রথম বিদেশ সফরে জার্মানি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশটির মিউনিখ শহরে অনুষ্ঠেয় (১৫-১৬ই ফেব্রুয়ারি) মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে যোগ দিচ্ছেন তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মিউনিখ সম্মেলনে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল ছাড়াও সাইড লাইনে কাতারের আমীর শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি, মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ আল-সিসি, অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর সেবাস্টিয়ান ক্রুজ, নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী এমা সোলবার্গ, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এবং ইইউ’র জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি (পররাষ্ট্র বিষয়ক) ফেদরিকা মোঘেরিনির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের প্রস্তাব এবং প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে ঢাকা।