দেশবরেণ্য গীতিকবি, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ার। তার কথায় অসংখ্য গান পেয়েছে জনপ্রিয়তা। সেই গানগুলো কালজয়ী হয়ে মানুষের মুখে মুখে। শুধু তাই নয়, এখনো নিয়মিত লিখে যাচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে অনেক আগেই সুনাম কুড়িয়েছেন এই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব। ক’দিন আগে খানিক অসুস্থ হয়ে পড়লেও এখন তিনি বেশ ভালো আছেন। নিয়মিত গান লেখার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কিংবদন্তি এ গীতিকবি বর্তমানে কেমন আছেন? গাজী মাজহারুল আনোয়ার উত্তরে বলেন, আমি বেশ ভালো আছি।
আল্লাহর রহমত ও সবার দোয়া অনেকটাই সুস্থ। তবে মনটা একদমই ভালো নেই। কারণ, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। আবার শুনলাম আলাউদ্দিন আলী হাসপাতালে। আমি তার সুস্থতার জন্য দোয়া করি। আর বুলবুলের চলে যাওয়াটা মেনে নেয়া কষ্টকর। কারণ, চলেতো সবারই যেতে হবে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি সে চলে যাবে ভাবতে পারিনি। বুলবুল চলে যাওয়ায় যে কত বড় ক্ষতি হলো সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সে আমার অত্যন্ত প্রিয় স্নেহভাজন একজন সুরকার ও সংগীত পরিচালক ছিল। গাজী মাজহারুল আনোয়ার আরো বলেন, আমাদের সংগীতাঙ্গনে যদি ভিন্ন ধারার সংগীত পরিচালক এসে থাকে, সে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। তার ভেতর একটা বিদ্রোহী সত্তা সব সময় লক্ষ্য করা গেছে। জীবনের শেষ পর্যন্ত সেটা দেখেছি। আমার ছবিতে সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ শুরুর মাধ্যমে চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালক হিসেবে বুলবুলের অভিষেক হয়। আমার নির্মিত চলচ্চিত্রে নিয়মিত সংগীত পরিচালক ছিলেন সত্য সাহা। কিন্তু আমি যখন ‘নান্টু ঘটক’ ছবির নির্মাণ শুরু করি, তখন সত্য সাহা কী একটা কাজে মুম্বই গিয়েছিলেন। আমি বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম। কারণ, তার বিকল্প খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তখন সাবিনা ইয়াসমীন আমাকে বললেন বুলবুলের কথা। তিনি অনেক প্রশংসাও করেছিলেন বুলবুলের। তার প্রশংসা শুনে বুলবুলকে আমি ডাকলাম। তার প্রতিভা ও মেধায় আমি মুগ্ধ হলাম। অন্যরকম একটা কিছু পেলাম আমি তার মধ্যে। এরপর ‘নান্টু ঘটক’ ছবিতে সংগীত পরিচালনা করে বুলবুল।
আরেকটা বিষয় আমি বলতে চাই। সেটা কি? গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, আমি মনে করি সে সবার চেয়ে আলাদা ছিল আরো একটি কারণে। তার মধ্যে দারুণভাবে দেশাত্মবোধ কাজ করতো।
তার কথা, কাজে সেটা প্রমাণ পাওয়া যেত। একজন মুক্তিযোদ্ধার এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। সে যে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছে, পরে সেই দেশের জন্যই সংগীত করেছে। বুলবুলের সব কিছুতেই ছিল গভীর দেশপ্রেম। এ বিষয়টি তাকে অন্য অনেকের চাইতে আলাদা করেছে। তাছাড়া গানে আলাদা কিছু করার প্রত্যয়ও ছিল তার মধ্যে। গাজী মাজহারুল আনোয়ার স্মৃতিচারণ করে বলেন, বুলবুল সব সময় বলতো, আমি যদি আর সবার মতো কাজ করি, তাহলে মানুষ আমাকে কি কারণে মনে রাখবে? আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল আমাদের সংগীতকে সমৃদ্ধ করেছে। সে যে গান সুর করেছে, সংগীত করেছে সেগুলো যুগের পর যুগ, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বেঁচে থাকবে। বুলবুলকে মনে রাখার অনেক কিছু আছে। আমি বিশ্বাস করি তরুণ প্রজন্ম তার গানের মাধ্যমে তাকে সব সময় মনে রাখবে। কারণ, তার মতো শিল্পী হয়তো চলে গেছে, কিন্তু তার সৃষ্টি বেঁচে থাকবে আজীবন।