বাংলাদেশ সুশাসনের বিষয়টিতে কীভাবে উন্নতি করবে তা জানতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে সদ্য সমাপ্ত একাদশ সংসদ নির্বাচনের বিষয়েও জানতে চেয়েছেন ট্রাম্প প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। ওয়াশিংটন সফররত পররাষ্ট্র সচিব এম. শহীদুল হকের সঙ্গে ইউএসএইড প্রধান মার্ক গ্রিন ও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ডেভিড হ্যালের বৈঠকে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। মঙ্গলবার বৈঠক দু’টি হয় বলে ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ মিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মার্কিন প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব জানিয়েছেন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের নতুন সরকার সুশাসনে অগ্রাধিকার ঠিক করেছে। প্রাথমিকভাবে এটির বাস্তবায়ন ঘটবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে। উল্লেখ্য, ৭ই জানুয়ারি বাংলাদেশে নতুন সরকার গঠনের পর স্টেট ডিপার্টমেন্টে পররাষ্ট্র সচিবের এটি প্রথম সফর। তার এ সফরের প্রধান উদ্দেশ্য আওয়ামী লীগ সরকার নতুন মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ার পর বিদ্যমান সম্পর্ক আরও পোক্ত করা।
ওয়াশিংটন দূতাবাসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সফরে পররাষ্ট্র সচিব স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রিন্সিপ্যাল ডেপুটি এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এলিস ওয়েলস; গণতন্ত্র, অধিকার ও শ্রম বিষয়ক দপ্তরের প্রধান রাষ্ট্রদূত মাইকেল কোজাক; ভারপ্রাপ্ত এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ক্যারোল থমসন ও’কনেল; অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ জন কটন রিজমন্ড এবং অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ নাথান সেলসের সঙ্গেও বৈঠক করেন। সফরে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করার বার্তা দেন তিনি। এই বার্তাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে মার্কিন প্রশাসন।
সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব গণমাধ্যমকে বলেন, অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। ভবিষ্যতে কীভাবে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাবো তা নিয়ে কথা হয়েছে। এদিকে কূটনৈতিক সূত্র বলছে, রাজনীতি ও সুশাসন প্রশ্নে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকগুলোতে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন সচিব। বাংলাদেশে যে নির্বাচন হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সে বিষয়ে জানতে চেয়েছে এবং তারা নির্বাচনের অনিয়মগুলোর বিষয়ে উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করে এর বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত চেয়েছে। সুশাসনের বিষয়ে ঢাকা ও ওয়াশিংটন একমত এবং এ বিষয়ে উভয়পক্ষ একসঙ্গে কাজ করবে বলে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। সূত্র মতে, মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিবের সিরিজ বৈঠকে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, দুইপক্ষই বিদ্যমান সম্পর্ক আরও গভীর করতে চায়। উভয়ে সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়াতে আগ্রহী। যার মধ্যে- বাণিজ্য, জ্বালানি, রাজনীতি, রোহিঙ্গা, অভিবাসন উল্লেখযোগ্য। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রকে অন্যতম বাণিজ্যিক অংশীদার উল্লেখ করে সচিব বলেছেন, আমরা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছি এবং মার্কিন বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগ করে সুবিধা নিতে পারেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সেখানে সচিব বলেছেন, উত্তর রাখাইনের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গা সংকট বিশেষত প্রত্যাবাসন জটিলতা দিনে দিনে আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
রাখাইন সংকট সমাধানে মিয়ানমার সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে এবং সেখানে প্রত্যাবাসনের সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বানও জানানো হয়। জবাবে মার্কিন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে বাংলাদেশকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এছাড়া দুর্নীতি রোধ, সন্ত্রাসবাদ দমন এবং মানবপাচার রোধে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্র সন্তোষ প্রকাশ করে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ জিয়াউদ্দিন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।