আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে একসঙ্গে বিশ্ব ইজতেমা করতে সম্মত হয়েছে তাবলীগ জামায়াতের দুই পক্ষ। এর মাধ্যমে দৃশ্যমান দ্বন্দ্বের অবসান হয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে তাবলীগের বিবদমান দু’পক্ষের সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের এ কথা জানান। বৈঠকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ ছাড়াও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন তাবলীগ জামাত দুটি পক্ষ হয়ে গেছে। মাওলানা ওয়াসিফুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি, আরেকটি মাওলানা জুবায়ের সাহেবের নেতৃত্বে। দু’পক্ষের সবাই এসেছিলেন। দীর্ঘ আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসের যেকোনো সময় টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে।
দু’পক্ষই সেই ইজতেমাটা করবে।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সাড়ে ১০টায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর অফিসে আরেকটি সভা হবে- সেখানে কবে, কখন, কীভাবে ইজতেমা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে উভয় পক্ষের দুজন সব সময় বসে সিদ্ধান্ত নেবেন। তারা যৌথভাবে বিশ্ব ইজতেমার নেতৃত্ব দেবেন। যাকে নিয়ে বিরোধ সেই দিল্লি মারকাজের প্রধান মাওলানা সাদ কান্ধলভী সাহেব ইজতেমায় আসবেন কিনা- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উনি এই ইজতেমায় আসবেন না, সেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইজতেমায় নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, প্রতি বছর আমরা কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিই। সম্পূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী করে থাকে, প্রয়োজন বিশেষে সেনাবাহিনীও সহযোগিতা করে থাকে, সেটা থাকবে। বিশ্ব ইজতেমাটা যাতে সুন্দরভাবে হয় প্রতিবারের মতো সে জন্য নিরাপত্তা বাহিনী দায়িত্ব নেবে। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ বলেন, বিষয়টি এতটাই বিতর্কিত হয়ে গেছে আমরা এখন কিছু না বললে এটা পরিষ্কার হচ্ছে না। আপনারা জানেন, ইতিমধ্যে বিষয়টি হাইকোর্টে রিট পিটিশন পর্যন্ত গেছে। সেখানে কথাবার্তাগুলো ভালো আসেনি। যেটার জন্য আমাদের দেশ, আমাদের ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও টঙ্গীর বিশ্ববিখ্যাত ইজতেমার গায়ে একটু কলঙ্ক লাগছে। এটা নিরসনের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে বসেছি। তিনি বলেন, তবে একটা জিনিস আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, এতদিন এই দু’পক্ষ কিন্তু একসঙ্গে বসেনি। এখানে আসছে, আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে আলাদা আলাদাভাবে। এবার আমরা চিন্তা করছিলাম দু’পক্ষকেই এক জায়গায় বসতে হবে।
দু’পক্ষের সবাই একত্রিতভাবে সুন্দরভাবে বসেছিলাম। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হলো, ঐক্যবদ্ধভাবে একটাই ইজতেমা হবে, দুটি হবে না। সারা দেশের গোলমাল যেগুলো হচ্ছে, এটা কাম্য নয়। এটা মেটানোর ফয়সালা হিসেবে আমরা হেড অফিসে ঐক্যবদ্ধভাবে একটা জামাত করবো। আজকে সিদ্ধান্ত ফাইনাল হয়ে গেছে- ইজতেমা গ্রুপে হবে না। সবাই মিলে একসঙ্গে হবে। এক গ্রুপের মাওলানা ওয়াসিফুল ইসলাম ও আরেক গ্রুপের মাওলানা জুবায়ের সাহেবকে আমরা এই দায়িত্ব দিয়েছি। এক হওয়ার জন্য তারা কোনো শর্ত দিয়েছেন কিনা- জানতে চাইলে শেখ মো. আব্দুল্লাহ বলেন, যে সব শর্ত দিয়েছেন মেনে নিয়েছি। তারা কী শর্ত দিয়েছেন- এ বিষয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, শর্ত দরকার নেই। ওনারা একসঙ্গে করবেন- এটা হলো শর্ত। যেকোনো মতাদর্শ যাই থাক এবার একবারে ইজতেমা হবে, এর মধ্যে কোনো মতানৈক্য নেই। প্রতিনিধি দলের দেওবন্দে যাওয়ার বিষয়টি এখন আর থাকলো কিনা- জানতে চাইলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেওবন্দে যাওয়া-না যাওয়ার শর্ত আর নেই। তবে ভবিষ্যতে যাতে স্থায়ী সমাধান করা যায় এ ব্যাপারে যখন যেখানে গেলে ভালো হয় সেই প্রক্রিয়া চালু থাকবে।
মামলা প্রত্যাহার করা হবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার আমরা আলোচনা করবো। বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীসহ তাবলীগ জামাতের দুই পক্ষের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।