প্রায়ই শোনা যায় শুটিং নেই, ভালো ছবি প্রেক্ষাগৃহে নেই। এমনকি এফডিসিতে আগের মতো শুটিংয়ের ব্যস্ততাও নেই। মাঝে-মধ্যে আশার আলো দেখা দিলেও স্থায়ী হচ্ছে না চলচ্চিত্রের সুদিন। বারবার আকালের কবলে পড়ছে এই শিল্প। আর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এফডিসি। যেখানে রাত-দিন প্রতিটি ফ্লোরে শুটিং হতো সেখানে আজ হতাশার ছাপ। ফ্লোরগুলোতে নিয়মিত লাইট জ্বলছে না। প্রতিটি ফ্লোরই বেহাল।
স্পট ঘুরে ও তথ্য নিয়ে জানা যায়, মাসে ৩০ দিনের জায়গায় ১৫ দিনও নিয়মিত শুটিং হচ্ছে না এখন। ঢালিউডের শীর্ষ তারকা শাকিব খান ও নুসরাত ফারিয়া অভিনীত ‘শাহেনশাহ’ এবং শাহিন সুমনের ‘একটু প্রেম দরকার’ ছবির শুটিং কয়েকদিন আগে এফডিসিতে হয়। এরপর চিত্রনায়িকা মুনমুন ও আঁচলের ‘রাগী’ ছবির শুটিং হয় চারদিন। এই হচ্ছে একটি পুরো মাসের চিত্র। গত মাসে মাত্র কয়েকদিন শুটিং ফ্লোর কর্মব্যস্ততায় পূর্ণ ছিল। তবে মাসের বেশিরভাগ দিনই ফাঁকা পড়ে থাকে সেসব। ছবি নির্মাণ ও মুক্তি কমছে, ব্যবসায়িক সফলতা নেই, শুটিং-ডাবিং না থাকায় ক্রমশ শূন্য হয়ে পড়ছে এফডিসি। প্রয়াত চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন তার মৃত্যুর কিছুদিন আগে চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা নিয়ে বলেছিলেন কিছু কথা। তিনি বলেছিলেন, নানা অনিয়ম এই সেক্টরটিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। নতুন কিছু নির্মাতা ডিজিটাল ছবির নামে নাটক মার্কা ছবি নির্মাণ করে দর্শকদের সিনেমা হলবিমুখ করছে। আমাদের চলচ্চিত্র এখন ডেড বেডে চলে গেছে। চলচ্চিত্র নির্মাণের সূতিকাগারখ্যাত এফডিসি ও বর্তমান চলচ্চিত্রের হালচাল নিয়ে প্রযোজক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, বেশিরভাগ শুটিং ঢাকা, আশপাশের এলাকায় ও দেশের বাইরে হচ্ছে। প্রাইভেট কোম্পানিগুলো এফডিসির তুলনায় কম টাকায় শুটিংয়ের ক্যামেরা-লেন্সসহ অন্যান্য জিনিস ভাড়া দেয়। এফডিসি যে জিনিস তিন হাজার টাকায় ভাড়া দেয় তা প্রাইভেট কোম্পানি ২৫০০ টাকায় ভাড়া দিতে পারে। এজন্য এফডিসির ক্যামেরা ভাড়া নিতে চায় না অনেকেই। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এফডিসির কারিগরি ও প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, এফডিসির যেকোনো জিনিস ভাড়া নেয়ার সময় তার সঙ্গে ট্যাক্স সংযুক্ত থাকে। তাই প্রতিটি জিনিসের ভাড়া বাড়ে। তাই অনেক নির্মাতা বাইরে থেকে ক্যামেরা-লেন্সসহ অন্যান্য জিনিস ভাড়া নেয়। এখানে তো আমাদের কিছু করার নেই। এফডিসিতে দীর্ঘদিন ধরে চলচ্চিত্রের চেয়ে বিজ্ঞাপন ও টিভি অনুষ্ঠান নির্মাণের কাজই বেশি চলছে। সংস্থার কয়েকটি ফ্লোর দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের কাছে ভাড়া দিয়ে রাখা হয়েছে। নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকার ছটকু আহমেদসহ কয়েকজন নির্মাতা এ বিষয়ে প্রায়ই একই কথা বলেছেন। তাদের মতে, এখন চলচ্চিত্রের কাজের জন্য অনেক প্রাইভেট স্টুডিও নির্মাণ হয়েছে। সেখানে কম মূল্যে কাজ করা যায়। সুযোগ-সুবিধাও বেশি। তাছাড়া এফডিসিতে প্রতিবছর ফ্লোর ভাড়াসহ নানা ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়। এসব দেখে নির্মাতারা সচরাচর এফডিসিতে আসতে চান না। প্রযোজকরাও একই কথা বলেছেন। চলচ্চিত্রের নবীন প্রযোজক মাসুম পাটোয়ারী বলেন, এফডিসিতে কাজ করতে গেলে প্রাইভেট স্টুডিওর চেয়ে বেশি ব্যয় করতে হয়। এ কারণে অনেকেই এখন এফডিসিতে কাজ করতে চায় না। এ অবস্থায় এফডিসির ফ্লোর ভাড়া যদি অর্ধেক কমিয়ে দেয়া হয় তাহলে নির্মাতারা অবশ্যই সেখানে কাজ করবে। মধুমিতা সিনেমা হলের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের ছবিতে গল্পের খরা চলছে। ভালো গল্প দিয়ে দর্শকদের ফিরিয়ে আনতে হবে। মাঝে মাঝে ভালো গল্প নির্মাতারা দর্শকদের উপহার দিচ্ছেন। তবে সেই সংখ্যাটা বাড়ানো খুবই প্রয়োজন। আর এফডিসিতে শুটিং ব্যস্ততা আবারো ফিরে আসুক-এটাই কামনা করছি। এদিকে কিছুদিন পর পরিবর্তন হবেন এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসার পর কিছু সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করছেন চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট অনেকে।