ধর্ষণের বিচারের ফতোয়া নিয়ে গাইবান্ধায় ব্যাপক তোলপাড় চলছে। সমাজপতিরা ধর্ষিতার পরিবারকে বাড়ি ছাড়ার ফতোয়া দেয়। একই সঙ্গে ধর্ষকদের জরিমানা দিয়ে খালাস দেয়া হয়। গাইবান্ধা পৌর এলাকার কুঠিপাড়ায় এই ঘটনাটি ঘটেছে।
সমাজপতিদের দেয়া রায়ের পর বাড়িঘর ছেড়ে ধর্ষিতাসহ তার মা বাড়ি ছেড়েছেন। কোথায় গেছেন কেউ জানে না। ধর্ষিতার দরজায় তালা ঝুলছে।
ধর্ষণের শিকার গাইবান্ধা শহরের কুঠিপাড়ার বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি আমিনুর রহমানের ৬ষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে।
দুই বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। এক বোনের বিয়ে হয়েছে। দারিদ্র্যেতার কারণে তার পিতা ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করে। আর মা মিনি খাতুন নিজের ঘরের এক পাশের বেড়া কেটে মুদির দোকান দেন। বেচাকেনা করে যা আসে তাতে মা-মেয়ের সংসার খেয়ে না খেয়ে চলে যায়। মেয়েটি পূর্বকোমরনই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গেলোবছর ৫ম শ্রেণি পাস করে এ বছর পড়ালেখা করছে দক্ষিণ কামারজানি হাইস্কুলে। স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় ওই এলাকার চার বখাটে মুসা, ফারদিন, মুরাদ ও হাসুর নজরে পড়ে মেয়েটি। বিত্তবান পরিবারের সন্তান বলে পরিচিত এই চার বখাটে। প্রেমের ফাঁদে ফেলে একদিন তাকে ফুসলিয়ে নিয়ে যায় ঘাঘট নদীর নির্জন স্থানে। তারপর পালাক্রমে ধর্ষণ করে তারা। অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরে তার মা মিনি বেগমকে জানালে তিনি স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর ইউনুস আলীকে জানান। তিনি বিষয়টি আমলে নিয়েও ধর্ষকদের পক্ষ হয়ে বিচারের নামে টালবাহানা শুরু করেন। তবে ইউনুস আলী পক্ষ নেয়ার কথা অস্বীকার করেন।
ইতিমধ্যে ৫ মাস অতিবাহিত হলে বিষয়টি এককান-দু’কান করে ছড়িয়ে পড়ে মহল্লায়।
ধর্ষণ ও গর্ভবতী হওয়ার বিষয়ে ওই চার ধর্ষকের নাম প্রকাশ হলে এলাকার কয়েকজন সমাজপতি ও কাউন্সিলর বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করেন। সমাজপতিরা ও পৌর কাউন্সিলর নির্দেশ দেন- ধর্ষিতা ও তার মা’কে। তারা যেন বিষয়টি থানা পুলিশকে না জানান। চার ধর্ষকের স্বজনদের নিয়ে গত ৬ই ফেব্রুয়ারি একটি বাড়িতে সালিশ বৈঠক হয়। বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন শাহিন কাউন্সিলর। তিনি ধর্ষিতাকে অপরাধী চিহ্নিত করে ধর্ষিতাকে বাড়ি ছাড়ার রায় দেন। রায়ে ধর্ষণে জড়িত যাদের নাম উঠেছে তাদের সবাইকে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানারও নির্দেশ দেন। রায় অনুযায়ী টাকাও জমা করা হয় ইউনুস আলী শাহিনে কাছে। রায়ে বলা হয়, অনাগত সন্তানকে হত্যা করতে হবে। যতো দিন না পেটের সন্তানকে নষ্ট করবে না ততদিন এই গ্রামে তাদের থাকা যাবেনা। বিচারের সময় ধর্ষিতা ও তার মা মিনি বেগম বুক চাপড়িয়ে চিৎকার করে কেঁদেও কোনো প্রতিকার পায়নি। আরো বলা হয়, এই শেষ রায়। এরপর আর থানা পুলিশ করা যাবে না। বিচারের রায় কার্যকর করতে বলা হয় ৭ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে ধর্ষিতা ও তার মাকে বাড়ি ছাড়তে হবে। লোজলজ্জা ও ভয়ে রাতারাতি মা মেয়ে দু’জনেই বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। গাইবান্ধা সদর থানার ওসি খান মো. শাহরিয়ার জানান, বিষয়টি পুলিশের নজরে আসেনি। কেউ অভিযোগ করেনি। তবে সাংবাদিকদের কাছে শুনে পুলিশ বুধবার মা মেয়ের সন্ধান চালিয়েছে। কিন্তু বাড়িতে তালা দেয়া দেখা গেছে।