বাতাসে শীতের তীব্রতা নেই। নেই কুয়াশার আচ্ছাদন। স্নিগ্ধ কোমল পরশই জানান দিচ্ছে এসে গেছে বসন্ত। শিমুল, পলাশ, কৃষ্ণচূড়ার বর্ণিল আভা রাঙিয়ে দিচ্ছে বিরহ-ক্লান্ত মন। দূরের দিগন্ত থেকে ভেসে আসছে কোকিলের কুহুকুহু কলতান। রঙিন ডানায় ফুলের পরাগ মেখে হাওয়ায় হাওয়ায় দোল দিচ্ছে বর্ণিল প্রজাপতি। মাঘের শেষে ফাল্গুনের প্রথমদিনে বরণ করা হয়েছে ঋতুরাজ বসন্তকে। পরনে বাসন্তী রঙের শাড়ি।
কপালে লাল টিপ। হাতভর্তি কাঁচের চুড়ি, গলায় পুঁতির মালা। চোখে, ঠোঁটে, মুখে এমনকি হাতের ব্যাগেও রঙের প্রলেপ। খোঁপায় গাঁদা ফুলের মালা। নানারঙের পাঞ্জাবি, ফতুয়ায় বসন্ত রাঙা তরুণের দল। সবাই ঘুরে বেড়াচ্ছে মনের আনন্দে। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় সকাল ৭টা থেকে শুরু হয় দিনব্যাপী বসন্ত উৎসব। জাতীয় বসন্তবরণ উদযাপন পরিষদ এ আয়োজন করে। উৎসবকে ঘিরে নানা বয়সের মানুষ ভিড় করে বকুলতলায়।
ধ্রুপদী সুরের মূর্ছনায় শুরু হয় অনুষ্ঠান। একক আবৃত্তি ও একক সংগীতের মধ্য দিয়ে চলে মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা। এছাড়াও ছিল উচ্চাঙ্গ সংগীতে দলীয় নৃত্য ও আদিবাসীদের নাচ। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন সৈয়দ হাসান ইমাম, ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, বেলায়েত হোসেন ও নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলি। দলীয় পরিবেশনায় ছিল সুরতীর্থ, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, বহ্নিশিখা, রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ ও বাফার নানা পরিবেশনা। বকুলতলা ছাড়াও পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ্ পার্ক, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর ও উত্তরার তিন নম্বর সেক্টরের রবীন্দ্র সরোবরের উন্মক্ত মঞ্চে একযোগে অনুষ্ঠান হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তরুণ-তরুণীদের স্রোত গিয়ে মিশেছিল অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। ঘোরাঘুরির সঙ্গে অনেকে কিনেছেন বই। পছন্দের উপন্যাস, কাব্যগ্রন্থ কিনে উপহার দিয়েছেন একে- অন্যকে।
ধানমন্ডি থেকে পরিবার নিয়ে উৎসবে এসেছেন রাকিব হাসান। তার সঙ্গে এসেছে ৪ বছরের শিশু লামিয়া এবং স্ত্রী। তিনি মানবজমিনকে বলেন, পরিবার নিয়ে প্রতিবারই আসি এখানে। আমার স্ত্রীর খুব পছন্দ এই অনুষ্ঠান। তাছাড়া বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে আমার সন্তান পরিচিত হচ্ছে।
রাজধানীতে চারুকলার সামনে বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা বসন্ত উৎসবে আগত দর্শনার্থীদের কপালে এঁকে দেয় বসন্তের আলপনা। পাবলিক লাইব্রেরি, সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক, টিএসসি থেকে শুরু করে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর, চন্দ্রিমা উদ্যান এলাকা মুখরিত হয়ে উঠে অফুরান প্রাণের বন্যায়। পথে পথে পশরা সাজিয়ে বসে বিক্রেতারা। ডুগডুগি, ঢোল-বাঁশিসহ নানারকম খেলনা শোভা পায় কিশোর-কিশোরীদের হাতে। তরুণ-তরুণীদের হাতে লাল গোলাপ কিংবা রজনীগন্ধা। বসন্ত বরণ উৎসবকে ঘিরে আয়োজিত হয় নানা অনুষ্ঠান। এদিকে দেশজুড়ে নানা আয়োজনে বরণ করা হয়েছে বসন্ত। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে সারা দেশে আয়োজন করা হয় নানা অনুষ্ঠান।