আগামী রোববার রাতে অস্কার অনুষ্ঠানে সবার চোখ থাকবে ৪৫ বছর বয়সী বৃটিশ অভিনেত্রী অলিভিয়া কোলম্যানের দিকে। কারণ, তিনি ‘দ্য ফেভারিট’ ছবিতে কুইন অ্যানের চরিত্রে অভিনয় করে সেরা অভিনেত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। এটা হবে কোলম্যানের জন্য একটি স্মরণীয় রাত। কিন্তু ১০ বছর আগে হলিউডে নতুন যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলেন রুবিনা আলী তার সঙ্গে এর তুলনা হয় না। রুবিনা আলী ‘স্লামডগ মিলিয়নিয়ার’- অভিনয় করে জগতজোড়া খ্যাতি পেয়েছেন। মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি মুম্বইয়ে ছালা দিয়ে তৈরি বস্তি থেকে সরাসরি গিয়েছিলেন হলিউডের ৮১তম একাডেমি এওয়ার্ড অনুষ্ঠানে। যখন ড্যানি বোয়েল’সের ওই ছবিটি অস্কারে আটটি পুরস্কার জেতে তখন সবার চোখ ছিল তার ওপর।
আগামী রোববার রাতে লস অ্যানজেলেসে অনেক তারকা থাকবেন।
জগদ্বিখ্যাত সব তারকায় ভরে উঠবে অনুষ্ঠান। কিন্তু এক দশক পরে সেই রুবিনা আলী থাকবেন না সেখানে। তিনি মুম্বইয়ের পশ্চিম বান্দ্রা এলাকায় এক বেডরুমের একটি ফ্লাটে টেলিভিশনের পর্দায় অবলোকন করবেন সেই দৃশ্য। এই বান্দায় পূর্ব বান্দ্রা বস্তিতেই তার জন্ম। সেখান থেকে অল্প দূরেই তার অবস্থান এখন।
কেমন ছিল অস্কার? এ প্রশ্নের জবাবে রুবিনা আলী বলেন, অস্কার ছিল অবশ্যই অবিস্মরণীয়। এটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন। আমার বয়স তখন এতটাই কম ছিল যে, ওই অনুষ্ঠানটি আমার কাছে স্বপ্ন মনে হয়েছিল। হলিউডের সব তারকার সঙ্গে সাক্ষাত হওয়ায় আমি খুব খুশি হয়েছিলান। লাল গালিচার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি। কখনো ভাবতে পারি নি এমন দিন বা সময় কখনো আসবে আমার জীবনে।
<
বিস্তৃত চোখের রুবিনা ‘স্লামডগ’ মিলিয়নিয়ারে অভিনয় করেছিলেন লতিকা চরিত্রে। তিনি প্রেমে পড়েছিলেন জামালের। আর এই জামাল হলেন দেব প্যাটেল।
রুবিনা এখন একজন ছাত্রী। পড়াশোনা করছেন। একটি অফিসে পার্টটাইম চাকরি করেন। কিন্তু লস অ্যানজেলেসের সেই অভিজ্ঞতার কথা কখনো ভুলতে পারেন না। তিনি বলেন, আমি মার্কিন খাবার পছন্দ করতাম না, মনে আছে। দেব প্যাটেল তার হাত দিয়ে আমাকে পিৎজা, বার্গার খাইয়ে দিতো। ভারতীয় মশলাযুক্ত খাবারের মতো নয় সেগুলো।
সেই দিনগুলোতে রুবিনা বাস করতেন তার পিতা রফিক ও সৎমা মুন্নি, দুই ভাই ও দুই বোনের সঙ্গে ইটের তৈরি ছোট্ট একটি ঘরে। তখন তার এক বন্ধু শুনতে পান যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রযোজক হলিউডের ছবির জন্য বস্তির শিশু খুঁজছেন।
রুবিনার জন্মদাত্রী মা হলেন খুশি। যখন রুবিনার বয়স চারবছর তখন তিনি পরিবার ছেড়ে বেরিয়ে যান। রুবিনা এখন যে কাজ করেন তাতে তাকে দেয়া হয় ৬২৪ পাউন্ডের মতো। তার পিতার মাসে আয় ১১০ পাউন্ড। তার চেয়ে রুবিনার এ আয় অনেক বেশি।
পরে রুবিনা ও ওই বস্তির আজহারুদ্দিন মোহাম্মদ ইসমাইলের মতো শিশুদের সাহায্য করার জন্য ‘জয় হো ট্রাস্ট’ গঠন করেন প্রযোজক ড্যানি বোয়লে। তাদের শিক্ষা ও থাকার ব্যবস্থা করে দেন। একটি করে ফ্ল্যাট কিনে দেন। এ সম্পর্কে রুবিনা বলেন, আঙ্কেল ডানি ভীষণ ভাল একজন মানুষ। তিনি আমাকে অনেক সাপোর্ট করেছেন। আমার শিক্ষার খরচ দিয়েছেছন। আমাকে দেখতে প্রতি বছর আসেন। হোটেলে গিয়ে আমি তাকে দেখে আসি। আমার জীবন সম্পর্কে তিনি জানতে চান। তিনি আমাকে প্রচুর সহায়তা করেন। তিনি খুবই দয়ালু। আমি তাকে খুব ভালবাসি।
রুবিনা আলী ও আজহারুদ্দিন দু’জনেই পড়াশোনা করছেন বান্দ্রা পশ্চিম এলাকার একটি ইংলিশ স্কুলে। বয়স ১৮ বছর হলে তারা তাদের প্রয়োজনীয় অর্থ তুলতে পারবেন। হাতে পাবেন ফ্ল্যাটের চুক্তি। মাঝে মাঝেই সেই বস্তিতে ফিরে যান রুবিনা। তিনি বলেন, ওই স্লামডগের কারণেই তিনি এত দ্রুত এতটা পরিচিতি পেয়েছেন। ওই ছটিটি আমার কাছ থেকে শৈশবকে কেড়ে নিয়েছে। আমার পিতামাতা খুব কিছু জানেন না। তারা অশিক্ষিত। এই পরিচিতি তাদের কাছে ছিল বিশাল।