× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

লোভের জিহ্বা কেটে ফেলা হবে

শেষের পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, সোমবার

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং লোভের জিহ্বা কেটে ফেলা হবে। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে দেশের ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে বহুমাত্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারাই দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সবচেয়ে যোগ্য এবং মেধাবী সন্তান। তাই কমিশনের কর্মকৌশল প্রণয়নে সর্বপ্রথম আপনাদের সঙ্গেই আলোচনা করা হচ্ছে। তাই আমরা আপনাদের কাছ থেকে দুর্নীতি প্রতিরোধে নতুন ধারণা, সৃজনশীল আইডিয়া এবং সর্বোপরি কর্মপন্থা গ্রহণ করতে চাই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতিনিধি তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতামত ও পরামর্শ গ্রহণের এ জাতীয় মতবিনিময় সভা এটাই প্রথম। চেয়ারম্যানের সূচনা বক্তব্যের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তামান্না রিফাত আরা বলেন, দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এমন কোনো পদ্ধতি নেই, যার সাহায্যে দুর্নীতি করার সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. সাইদুর রহমান বলেন, অপরাধীদের দ্রুত বিচার করা না গেলে অপরাধ দমন করা সম্ভব  নয়।
তিনি দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেন। শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিরা রহমান বলেন, খাদ্য ভেজাল দুর্নীতি। ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা এ দুর্নীতি করছে এবং তারাই নিরাপদ খাদ্যের জন্য হুমকি।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. ফারুক হোসেন বলেন, কৃষি ভর্তুকির অর্থ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিকট পৌঁছানোর আগেই বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি সংঘটিত হয়। আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মো. আশিকুর রহমান মিয়া বলেন, আমরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছি কিনা এটি বড় প্রশ্ন। দুর্নীতিকে একটি চেইন অপরাধ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি  আরো বলেন, নিচের দিকে কর্মরত কর্মকর্তারা জানেন তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও দুর্নীতিপরায়ণ। তাই দুর্নীতি করলে কিছু হবে না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শম্পা গুহ বলেন, পদ্ধতিগত কারণেই দুর্নীতি অপ্রতিরোধ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামস আসিফ চৌধুরী বলেন, দুদক স্কুল পর্যায়ে সততা সংঘ গঠন করলেও, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এ ধরনের কোনো সংগঠন নেই। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এথিকস্‌ ক্লাব গঠনের আহ্বান জানান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্পিতা মহাজন বলেন, আইনি সংস্কার এবং প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। তিনি বলেন,  দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ এবং তাৎক্ষণিক ফল চাই। শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী টোটন  চন্দ্র দেবনাথ বলেন,  দুর্নীতি যারা করেন তাদের ভয় ও লজ্জার ব্যবস্থা করতে হবে। দুর্নীতি দমনে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের আহ্বান জানান তিনি।

শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এক সময় বলা হতো অর্থই অনর্থের মূল, কিন্তু সব সময় অনর্থের মূল নয়। অনেক সময় অর্থই অর্থের মূল। অর্থ মানেই ক্ষমতা। অনেক সময়  মানুষ অর্থের পিছনে ছুটে।  এটাতে তারা এখন  আর লজ্জা পায় না, তাই দুর্নীতিবাজদের লজ্জা ফিরিয়ে আনতে হলে প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষা। মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষা এবং মূল্যবোধসম্পন্ন উন্নয়নের প্রয়োজন। তিনি বলেন, দুদককে ভয় পায় না এমন লোক হয়তো সমাজে নেই। তবে ভয় দিয়ে সবকিছু জয় করা যায় না। এ সময় দুর্নীতিবাজদের হুঁশিয়ারি দিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখা হবে এবং  লোভের  জিহ্বা কেটে ফেলা হবে। আপনার বলছেন শাস্তি হয় না, তথ্যটি সঠিক নয় এবারও ৬৩ শতাংশ মামলায় সাজা হয়েছে। আমরা হয়তো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দুর্নীতি কমাতে পারিনি। এই ৬৩ শতাংশ সাজা  কিন্তু এমনিতে হয়নি। এটি আমাদের সবার ঐকান্তিক চেষ্টার ফসল। আমি আগেও বলেছি, আজও বলছি কোনো একক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দুর্নীতি দমন সম্ভব নয়। দুর্নীতি দমনের সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন। তিনি বলেন, সব দুর্নীতিই দুদকের ম্যান্ডেটভুক্ত নয়। দণ্ডবিধির কতিপয় ধারা এবং অবৈধ সম্পদ অর্জন দুদকের তফসিলভুক্ত। দুর্নীতির উৎস বন্ধেও সরকারের  নিকট সুপারিশ করার আইনি দায়িত্ব দুদকের রয়েছে। কমিশন স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ  বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি প্রতিরোধ এ জন-হয়রানি রোধে বিভিন্ন সুপারিশমালা সরকারের কাছে প্রেরণ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া দুর্নীতি দমন সম্ভব নয়,  বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলো অনুধাবন করেই তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতি দমনের বিষয়টি প্রাধান্য দিয়েছে। দুর্নীতিবিরোধী সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে বলেন, একদিন বা এক বছরেই দুর্নীতি থেকে পরিত্রাণের উপায় নেই।

এটি একটি ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় দুর্নীতি অবশ্যই সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে। দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে শিক্ষাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি  বলেন, প্রায় ৭৫ শতাংশ ফেল করা শিক্ষার্থীর প্রমোশন দিয়ে মানসম্মত শিক্ষাকে কলুষিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশ-কে ২০৩০ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতৃত্ব দিতে এবং ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড পেতে হলে মানসম্মত শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই, এটা আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে।

দুদক কমিশনার এএফএম আমিনুল ইসলাম বলেন, দুর্নীতি দুটি পর্যায়ে বেশি হয়। একটি প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপরটি ব্যক্তি পর্যায়ে। তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে দুর্নীতি অবশ্যই কমে আসবে।
 মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) সারোয়ার মাহমুদ। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুদক সচিব মোহাম্মদ দিলোয়ার বখ্‌ত, মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী, মহাপরিচালক (তদন্ত) মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর