× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

গ্যাসের আহাজারি চট্টগ্রামেও

এক্সক্লুসিভ

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, মঙ্গলবার

চট্টগ্রাম মহানগরীর অধিকাংশ এলাকায় গ্যাস নেই তিনদিন ধরে। ফলে  হোটেল-মোটেল ও বাসাবাড়ির সবখানে গ্যাসের জন্য আহাজারি চলছে গৃহিণীদের। কলা-পাউরুটি খেয়ে দিন কাটাচ্ছে নগরীর লাখো মানুষ।   শুক্রবার রাতে নগরীর ইপিজেড থানার আকমল আলী রোড এলাকায় একটি খাল খনন করার সময় গ্যাস সরবরাহের প্রধান লাইন কাটা পড়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সরবরাহ লাইন কবে নাগাদ মেরামত শেষ হবে এবং কবে নাগাদ গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হবে এ ব্যাপারে কিছুই বলতে পারছে না কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোমপানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) কর্তৃপক্ষ। বরং কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ শনিবার বলেছিল রোববার বিকালে গ্যাস সরবরাহ সম্ভব হবে। রোববার বলেছে, সোমবার গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সরবরাহ লাইন মেরামতের কোনো কাজই হয়নি এখনো। ফলে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে চট্টগ্রামবাসী।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোমপানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার খায়ের আহমদ   মজুমদার জানান, শুক্রবার রাতে নগরীর ইপিজেড মাইট্টাল্লা খালে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের সময় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোমপানি লিমিটেডের ২৪ ইঞ্চি ব্যাসের সরবরাহ লাইন ফেটে যায়। খবর পেয়ে সরবরাহ লাইনের বাল্ব বন্ধ করে দেয় কেজিডিসিএল। পরবর্তীতে পুরো পাইপটিকে গ্যাস শূন্য করা হয়।
এরপর খালের নিচে মাটির প্রায় ১৪ ফুট গভীরে থাকা পাইপটির ফেটে যাওয়া অংশ বের করে কাজ করার জন্য খালের দু’দিকে বাঁধ দিয়ে পানি সেচ করা হয়। এসময় খালের গভীরে প্রায় ১৫-১৬ ফুট মাটি খোঁড়া হয়। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে আবার মাটি ধসে পড়ায় সব পরিশ্রম বৃথা হয়ে যায়।
তিনি জানান, মাটি ধসে পড়ায় আবারো নতুন করে কাজ করা হচ্ছে। তবে এবার মাটি কাটার আগে প্রতিরোধ ব্যবস্থা মজবুত করা হচ্ছে, যাতে আবার ধসে না পড়ে। এতে পাইপ মেরামত করে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করতে একটু সময় লাগতে পারে। তবে কত সময় লাগবে- এ ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেন নি তিনি।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোমপানির জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) আনিছ উদ্দিন আহমেদ জানান, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও লোকবল নিয়ে সংস্কার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু খালের নিচের মাটিগুলো নরম হওয়ায় পাইপ লাইনের সংস্কার কাজের কিছুই হয়নি এখনো। তবে আশা করছি, শিগগিরই সংস্কার কাজ শেষ করে পুনরায় গ্যাস সরবরাহ শুরু করতে পারবো।
এদিকে গ্যাস সরবরাহ লাইন ফেটে যাওয়ায় চট্টগ্রাম ইপিজেড, কর্ণফুলী ইপিজেড, বন্দর, পতেঙ্গা, আগ্রাবাদ, সদরঘাট ও হালিশহরসহ নগরীর দুই-তৃতীয়াংশ এলাকায় গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এতে কয়েক লাখ মানুষের জীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে আসে। গ্যাস না থাকায় ওইসব এলাকার পাশাপাশি শহরের অন্যান্য এলাকায়ও গ্যাসের প্রেসার অস্বাভাবিকভাবে কমে  গেছে।
ইপিজেড এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহমান জানান, ভয়াবহ অবস্থা চলছে ইপিজেডের খেটে খাওয়া মানুষগুলোর জীবনে। রান্না করতে না পারায় অনেককেই না খেয়ে কাজে যেতে হয়েছে। এ ছাড়া ইপিজেডসহ বিভিন্ন এলাকায় রেস্টুরেন্ট থেকে অনেককে খাবার কিনে খেতে হয়েছে। তবে রেস্টুরেন্টেও খাবার সংকট দেখা গেছে বলে জানান আবদুর রহমান। তিনি বলেন, টাকা দিয়েও খাবার পাওয়া যাচ্ছে না। রেস্টুরেন্টগুলোতেও গ্যাস না থাকায় খাবার রান্না করতে সমস্যা হচ্ছে।
একই এলাকার একটি ভবনে মাটির চুলায় রান্নারত গৃহিণী মিনারা বেগম জানান, ‘তিনদিন ধরে গ্যাস নাই। কাইল রাইতও না খাইয়া ঘুমাইছি। হোটেলে গিয়াও কোনো খাবার পাই নাই। তাই আইজ সকালে মাটি দিয়া চুলা বানাইছি। এরপর লাকড়ি যোগাড় কইরা রান্না কইরতেছি। খুব কষ্টে আছি বাবা।’
এসময় ইট দিয়ে চুলা বানিয়ে রান্না করতে দেখা যায় জেসমিন নামে এক গার্মেন্টস কর্মীকেও। তিনি জানান, ‘গত শনিবার অফিস থেকে বাসায় এসে দেখি গ্যাস নাই। ভেবেছিলাম কিছুক্ষণ পরেই চলে আসবে। কিন্তু পরে জানতে পারি গ্যাসের লাইন ফেটে গেছে। গ্যাস না থাকায় কাল রাতে কিছুই খাইনি। সকালেও গ্যাস না আসায় আর অফিসে যাইনি। এখন কিছু রান্না করে খাওয়ার পর দুপুরে অফিসে যাবো।’
হালিশহর এলাকার মোহাম্মদ বাবুল জানান, ‘পরিস্থিতি ভয়াবহ। বাসার ছাদের উপরে ইট দিয়ে চুলা তৈরি করে লাকড়ি দিয়ে রান্না করছি। কিন্তু  রোববার বিকালে আকস্মিক বৃষ্টিতে সেটাও ভিজে গেছে।’
এ ছাড়া সিএনজি স্টেশনেও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় নগরীর সিএনজি স্টেশনগুলোতেও বিভিন্ন পরিবহনের দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও গ্যাস পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর