ক্রমশই বাড়ছে বইপ্রেমী নানা বয়সী মানুষের ভিড়। শেষ সময়ে জমে উঠেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। গতকাল বিকাল তিনটায় মেলার গেট খোলার পর থেকেই মানুষের ঢল নামে। ভিড়ের সঙ্গে বেড়েছে বইয়ের বিক্রিও। মেলা ফটকে কথা হয় আসলামুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ছেলেমেয়েসহ তিনি মেলায় এসেছেন। উদ্দেশ্য বই কেনা এবং ঘোরাঘুরি। মেলার আয়োজন সম্পর্কে তিনি জানান, এবারের মেলার আয়োজন অন্যান্যবারের চেয়ে অনেক ভালো।
সবকিছুই ভালো লাগছে। সরকারি চাকরিজীবী আবুল খায়ের বলেন, বাঙালির প্রাণের মাস ফেব্রুয়ারি। এ মাসের জন্য আমরা বছরজুড়ে অপেক্ষা করি। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও সময়ের কারণে বইমেলায় নিয়মিত আসা হয় না। ছেলেমেয়েদের জন্যই বেশির ভাগ বই কিনেছি। নিজেরও পছন্দের কিছু বই কিনেছি। রাজধানীর মুগদা এলাকা থেকে দুই সন্তান দিপা ও নিপাকে নিয়ে বইমেলায় এসেছিলেন শিক্ষক আব্দুল হাই। তিনি বলেন, প্রতিদিনই ইচ্ছা করে বইমেলায় আসতে। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে আসা হয় না। নিজেও বই কিনলাম, বাচ্চাদেরও কিনে দিলাম। তবে আজ বইমেলায় বইপ্রেমী ক্রেতা দর্শনার্থীদের খুব ভিড়।
লেভেল পাবলিশিং হাউজের বিক্রেতা জাকির হোসেন বলেন, আমাদের স্টলে মূলত ইতিহাসভিত্তিক বইগুলো পাওয়া যায়। মানুষের যে ইতিহাস সম্পর্কে জানার আগ্রহ রয়েছে এবার মেলায় এসেই বুঝতে পারছি। আমাদের স্টলে ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, গবেষণামূলক, ইসলামের ইতিহাস, রাজনৈতিক ও ইসলামী বই পাওয়া যায়। মেলা শুরুর দিন থেকেই আমার স্টলে বিক্রি ভালোই হচ্ছে।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী আফিফা মেলায় এসেছে তার মামার সঙ্গে। মেলার স্টলগুলো ঘুরে রূপকথার বই, ছোটবেলার তথ্য ও ছবির অ্যালবামের মতো বই কিনেছে সে। আফিফা জানায়, মা বলেছে, আজ স্কুলের পর গিয়ে ঘুরে আসো। আর যে যে বই পছন্দ হয় কিনে নিতে বলেছে।
একাডেমি অংশে দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক (এসআই) মাহফুজ বলেন, মেলা শুরুর পর থেকেই আমি এখানে দায়িত্বে রয়েছি। আমরা সব বিষয়ে বেশি সজাগ থাকি। বাচ্চারা যেন হারিয়ে না যায়, ভিড়ে ব্যথা না পায়- এসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয়। এছাড়া স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা আসেন। তাদের বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে।
গল্পকার স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধি মো. আল আমিন বলেন, গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ (গতকাল) পাঠকের সংখ্যা বেশি। মেলার গেট উন্মুক্তের সঙ্গে সঙ্গেই লোকজনের ভিড় বাড়ছে। পাশাপাশি বই বিক্রির পরিমাণও বেড়েছে। তিনি জানান এখন পর্যন্ত গল্প, উপন্যাসের চাহিদা বেশি।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে বাংলা একাডেমি প্রতি বছর শিশু-কিশোরদের যে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে, সোমবার এ বছর প্রথমবারের মতো (২০০৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত) শিশু-কিশোরদের পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবিগুলো নিয়ে বাংলা একাডেমির ড. মুহম্মদ এনামুল হক ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। বিকাল সাড়ে ৪টায় প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। প্রদর্শনী চলবে ২৮শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, প্রতিদিন মেলা চলার সময়।