× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

চট্টগ্রামে বস্তিতে আগুন ক্ষোভে জ্বলছে ক্ষতিগ্রস্তরা

দেশ বিদেশ

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, মঙ্গলবার

 চট্টগ্রাম মহানগরীর চাক্তাইয়ে কর্ণফুলী নদীর তীরে সরকারি খাসজমির ওপর গড়ে ওঠা ভেড়া মার্কেট বস্তিতে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে দুই শতাধিক ঘর। জীবন্ত পুড়ে মারা গেছে দুই পরিবারের ৭ জনসহ ৮ জন। স্বজন ও সম্বল হারিয়ে যখন শোকগ্রস্ত বস্তিবাসী তখনো ক্ষোভে জ্বলছে ক্ষতিগ্রস্তরা।
তাদের দাবি- এই অগ্নিকাণ্ড কোনো দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত নাশকতা। কারা এই নাশকতায় জড়িত তাও জানেন তারা। কিন্তু ভয়ে মুখ খুলছে না কেউ। এ বিষয়ে কয়েকজন কিছু বলতে গেলেও তা যেন আবার আটকে যায় গলায়।
আর এসব বিষয় অনুসন্ধানে কোনো মাথাব্যথা নেই প্রশাসনের। জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস এই অগ্নিকাণ্ডের উৎসের কোনো হদিস দিতে পারেনি এখনো।
বরং অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে গঠন করা হয়েছে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি। যারা সোমবার থেকে তদন্ত কাজ শুরু করেছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আবদুল মান্নান বলেন, ভেড়া মার্কেটে আগুনে পুড়ে যাওয়া ৫টি বস্তিতে দুই শতাধিক ঘর ছিল। যার সবগুলোই সেমিপাকা। এখানে অধিকাংশই রান্নায় গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করতো। তাছাড়া বৈধ সংযোগের সঙ্গে প্রচুর অবৈধ বিদ্যুৎসংযোগ ছিল। ফলে ফায়ার সার্ভিস বিদ্যুতের শটসার্কিট বা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে।  
তবে আগুনের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। আশা করছি দ্রুত আসল রহস্য উদঘাটন করে আমরা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারবো।
চট্টগ্রাম জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক পূর্ণচন্দ্র মুৎসদ্দী জানান, রোববার মধ্যরাত ৩টা ৩২ মিনিটে নগরীর চাক্তাইয়ে ভেড়া মার্কেটের বস্তিতে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিটের ২০টি গাড়ি দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে। কিন্তু ততক্ষণে আগুন ৫টি বস্তিতে ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিস শেষ মুহূর্তের আগুন নিভিয়েছে। আগুনে নিহত দুই পরিবারের ৭ জনসহ ৮ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যায়। ডাম্পিংয়ের কাজ করে দুই ঘণ্টার মধ্যে ফিরে যায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো।
পূর্ণচন্দ্র মুৎসদ্দী বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল ঘরগুলো কাঁচা হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরে দেখা যায়, বস্তির সব ঘরগুলো সেমিপাকা। যেখানে দাহ্য বস্তু ছাড়া আগুন এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কথা নয়। এছাড়া এই বস্তি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উচ্ছেদের তালিকায় ছিল। ফলে উচ্ছেদের আগে বস্তিতে কেউ লাগানোর কথা নয়- এমন ধারণা করা হয়েছিল। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের নানা জল্পনা-কল্পনা থেকে এই অগ্নিকাণ্ড নাশকতার বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায় না।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন বলেন, ভেড়া মার্কেট এলাকার বস্তির জায়গাটি সরকারি খাস জায়গা হওয়ায় এটি দখলে রাখতে দুটি গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে বিরোধে লিপ্ত থাকার তথ্য রয়েছে। এরমধ্যে চলমান উচ্ছেদ অভিযানে এই বস্তি তৃতীয় ফেজে রয়েছে। বস্তি খালি করার জন্য ইতিমধ্যে ভাড়াটিয়া ও দখলদারদের কাছে তথ্য পাঠানো হয়েছিল। তবে কি কারণে এতবড় অগ্নিকাণ্ড তা দেখবে তদন্ত কমিটি।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, এ অগ্নিকাণ্ড দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত নাশকতা। আগুন দেয়ার এক ঘণ্টা আগে মুখোশপরা চার-পাঁচজন যুবককে বস্তির চারপাশে পাউডার জাতীয় কিছু ছিটাতে দেখেছেন অনেকে।
এরমধ্যে নাসির বস্তির বাসিন্দা সুফিয়া বেগম বলেন, পাউডার ছিটানোর পর বস্তির প্রবেশ মুখে রহিমা বেগমের (অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয়েছেন) ঘরের সামনে অবস্থান নেয়। রাত সাড়ে তিনটার দিকে তালি বাজিয়ে তারা দ্রুত বস্তি এলাকা ত্যাগ করে। এরপর মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
সুফিয়া বলেন, বিভিন্ন সময় পোশাকধারী বা পোশাকছাড়া পুলিশ আসে এই কলোনিতে। পার্টির ছেলেরাও আসে। শনিবার রাত ১২টার পর নাসির কলোনির পেছন দিক দিয়ে কয়েকজন বস্তিতে প্রবেশ করে। কিন্তু তাদের সবার মুখ ছিল বাঁধা। তাই চেনা যায়নি। আগে যদি জানতাম, একটারেও যাইতে দিতাম না।
এমন কথা শুধু সুফিয়া বেগমের নয়, বস্তির সবার মুখে মুখে। সাত্তার কলোনির বাসিন্দা নুর আয়শা বেগম বলেন, রাত ১টার দিকে আমি টয়লেটে যাওয়ার জন্য উঠেছিলাম। দেখি গলির মুখে তিনজন লোক। সারা শরীরে কালো জামা। মুখটাও কালো রুমালে বাঁধা। এর কিছুক্ষণ পর আমি শুনতে পাই, আগুন আগুন চিৎকার। পাঁচটা কলোনির ২০০ ঘর জ্বলতে আধাঘণ্টাও লাগেনি। পুড়ে অঙ্গার হলো ৮টি তাজা প্রাণ। কীভাবে এত দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ল? কিভাবে ২০ মিনিটে শতাধিক ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেল- এ নিয়ে এখন নানা প্রশ্ন তাদের মুখে।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, বেশ কিছুদিন ধরে বস্তি ছাড়ার হুমকি দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু বাড়ির মালিকরা তাদের বিভিন্ন আশ্বাসে যেতে দেয়নি। শনিবার দুপুরেও এ নিয়ে কানাঘুষা হয়েছে কলোনিতে, আর রাতে আগুন লাগল। স্থানীয়রা জানান, কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী মেরিন ড্রাইভ রোডের উত্তরে রাজাখালী খালের চর দখল করে ২০০০ সালে গড়ে তোলা হয়েছিল নতুন বস্তি। আকতার নামে বক্সিরহাট ওয়ার্ড যুবলীগের এক নেতা ও আবদুল করিমসহ শতাধিক ব্যক্তি মিলে একটি সিন্ডিকেট করে সরকারি খাস জমিটি দখল করে পরষ্পর ভাগবাটোয়ারা করে নেন। পরে সেখানে বস্তি গড়ে তুলে ভাড়া দেন।
সাত্তার, মোরশেদ, হেলাল, ফরিদ, বেলালসহ স্থানীয় কিছু যুবককে ভাড়া আদায়ের দায়িত্ব দেন আকতার ও করিম। বস্তিতে ঘরপ্রতি ভাড়া দেড় থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হতো।
অগ্নিকাণ্ডে নিহত রহিমা বেগমের স্বামী সুরুজ মিয়া বলেন, ১২-১৩ দিন আগে জেলা প্রশাসনের লোক আমাদের চলে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু জমিদার ফরিদ সওদাগর এসে বলেন, তিনি হাইকোর্টে মামলা করবেন। উচ্ছেদ বন্ধ হয়ে যাবে।
তিনি জানান, আগুনে পুড়ে যাওয়া বস্তির পাশে যুবলীগ নেতা আকতারের আরো একটি বস্তি আছে। কর্ণফুলী নদীর চরের জায়গা দখল করে আকতার সেখানে বস্তি গড়ে তুলেছেন।
বক্তব্য জানতে যুবলীগ নেতা আকতারের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর