সমপ্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো এবং একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ প্রদান করা হলো। অনতিবিলম্বে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী?দের কাছে গ্রহণযোগ্য, মেধাবী, সৃজনশীল ও মানবিক নেতৃত্ব উপহার দিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বদ্ধপরিকর।
২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে তরিকুল ইসলামকে সভাপতি ও শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৯ সদস্যের একটি কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। নতুন কমিটি গঠনের পরে শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা নিজ কর্মীদের মারধর, সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়রানি, চাঁদাবাজি, প্রশ্নফাঁস, যৌন হয়রানি সহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত হতে শুরু করে।
এদিকে জবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রু?পের সংঘর্ষের ঘটনায় চারজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। আসামিরা হলেন, জবি ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি তরিকুল ইসলামের একান্ত আস্থাভাজন কর্মী তরিকুল ইসলাম রিমন ওরফে ছোট তরিকুল, সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেলের আস্থাভাজন কর্মী কামরুল ইসলাম, বিদ্রোহী গ্রুপের ছাত্রলীগ নেতা হাসান আহমেদ খান ও অপরজন ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সহসভাপতি আশরাফুল ইসলাম টিটন।
গত সোমবার এই চার ছাত্রলীগ নেতা ছাড়াও অন্তত আরো ১০০ থেকে ১২০ জনকে অজ্ঞাতনামা রেখে মামলা করা হয়েছে। কোতোয়ালি থানার উপ পরিদশর্ক খালিদ শেখ বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলায় গতকাল দুই ছাত্রলীগ কর্মী?কে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ক?রেছে পু?লিশ। কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান সাংবাদিকদের মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তি?নি ব?লেন, গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডির সহযোগিতায় ক্যাম্পাসে অভিযান চালিয়ে দেশীয় অস্ত্রসহ দুইজন?কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলেন- জবি বাংলা বিভাগের ১৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী নাঈম আল অদম্য, রসায়ন বিভাগের ১৩তম ব্যাচের আবু সায়েম। এ সময় লাটি, লোহার রডসহ বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। তারা ছাত্রলী?গের স?ক্রিয় কর্মী।
এ?দি?কে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ চলাকালে কর্তব্যরত সাংবাদিকদের উপর হামলার প্রতিবাদ, জড়িতদের শাস্তি ও ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা প্রদানের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ক্যাম্পা?সে কর্মরত সব সাংবা?দিক?দের সংগঠন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক জোট। গতকাল বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ক্যাম্পাসে বারবার ছাত্রলীগ কর্তৃক সাংবাদিকরা নির্মম হামলার শিকার হচ্ছেন। সাংবাদিকসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিভাবক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন শিক্ষার্থীদের যাবতীয় নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয়ার কথা। সেখানে জবি প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। কর্তৃপক্ষের অসচেতনতা এবং অবহেলার কারণেও ক্যম্পাসে কিছু উগ্র শিক্ষার্থী সুযোগ পেয়ে যায়। এ সময় কর্তৃপক্ষ অপরাধীদের বিরুদ্ধে যদি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে আরো কঠিন পদক্ষেপ নেয়ার হুঁশিয়ারী দেন বক্তারা। মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের রহস্যজনক ভূমিকার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক জোটের আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম সাদেকের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রবিউল আলমের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন জবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারহানা রাহি, জবি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দিপু রায়হান, বিডি নিউজ টুয়েন্টিফোরের ফখরুল ইসলাম, ইউএনবির আজিজুল হক, দৈনিক করতোয়ার শাপলা সোমা। মানববন্ধন শেষে সাংবাদিকরা কালো ব্যাজ ধারণ করে ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল করেন।
গত সোমবার বেলা ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি তরিকুল ইসলাম-সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের অনুসারী এবং পদপ্রত্যাশী বিদ্রোহী নেতা-কর্মীদের মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় সাংবাদিকসহ উভয়পক্ষের ৪০ জন আহত হয়।