× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ইজতেমা শেষ /তুরাগতীরে ফরিয়াদ

প্রথম পাতা

এম.এ হায়দার সরকার, টঙ্গী থেকে
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, বুধবার

দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ, মুক্তি কামনা ও বিশ্ব শান্তির জন্য মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো টঙ্গীর তুরাগ তীরের দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমা। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা  সা’দ অনুসারী দিল্লি মারকাযের শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা শামীম আহমদ।

তুরাগ তীরের এই জমায়েতে লাখ লাখ মুসল্লি মোনাজাতে অংশ নেন। মোনাজাতে আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করতে আল্লাহর দরবারে রহমত প্রার্থনা করেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।

 মোনাজাতে মাওলানা শামীম আহমদ আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে দ্বীনের ওপর সবাই যেন চলতে পারে সে দোয়া করেন। আল্লাহর কাছে সবার ভেতর যেন দ্বীনের ফিকির দান করেন সে দোয়া করেন। ঐক্যবদ্ধ থাকার তওফিক দেন। আমাদের বিভেদকে মিটিয়ে দেন।
আমাদের মনে হিংসা-বিদ্বেষ থেকে হেফাজতে রাখুন। এ ছাড়া দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে মানুষকে হেফাজত করতে আল্লাহর কাছে সাহায্য চান। তার সঙ্গে দু’হাত তুলে আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন ধ্বনি তুলে কান্নায় ভেঙে পড়েন উপস্থিত মুসল্লিরা।

 মোনাজাতের আগে তাবলীগ জামাতের সাথীদের উদ্দেশে হেদায়েতি বয়ান করেন তিনি। শীর্ষস্থানীয় অনেক আলেম ইসলামের পথে সঠিকভাবে চলার জন্য মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বয়ান করেন। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে হেদায়েতি বয়ান শুরু করেন মাওলানা শামীম আহমদ। বয়ান শেষে সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে শুরু হয় দীর্ঘ প্রতীক্ষিত আখেরি মোনাজাত। শেষ হয় ১২টা ২ মিনিটে। মোনাজাত শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই হঠাৎ নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। যে যেখানে ছিলেন, সেখানেই দাঁড়িয়ে কিংবা বসে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। কান্নায় বুক ভাসান ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।

প্রায় ১৭ মিনিটের মোনাজাতে মাওলানা শামীম প্রথম ৪ মিনিট পবিত্র কোরআনে বর্ণিত দোয়ার আয়াতগুলো উচ্চারণ করেন। শেষের দিকে দোয়া করেন উর্দু ও হিন্দি ভাষায়। মুঠোফোন ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি সমপ্রচারের সুবাদে দেশ-বিদেশের লাখো মানুষ একসঙ্গে হাত তোলে দোয়ায় শরিক হন। তাবলীগ জামাতের আয়োজনে মুসলমানদের অন্যতম এই বৃহত্তম সমাবেশের আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে সোমবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেন মুসল্লিরা। আবহাওয়া ভালো থাকায় সকাল ১০টায় মোনাজাত হওয়ার সম্ভাবনা মাথায় রেখে মঙ্গলবার ভোর থেকে রাজধানী ও এর আশেপাশের এলাকার লোকজন রওনা হয় ময়দানের দিকে। আটটার আগেই ইজতেমা ময়দানসহ আশেপাশের এলাকার সড়ক-মহাসড়ক, অলি-গলি ও খালি জায়গায় মুসল্লিদের অবস্থান করতে দেখা গেছে।

ইজতেমাস্থলে পৌঁছতে না পেরে অনেক মুসল্লি আখেরি মোনাজাতের জন্য খবরের কাগজ, পাটি, বস্তা ও পলিথিন বিছিয়ে কামারপাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং অলিগলিসহ বিভিন্নস্থানে অবস্থান নেন। নানা বয়সী বিভিন্ন পেশার মানুষের পাশাপাশি নারীদেরও মোনাজাতে অংশ নিতে দেখা যায়। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বেও আখেরি মোনাজাতে কয়েক লাখ মুসল্লি অংশ নেন। পাশাপাশি বিশ্বের ১৬টি দেশের প্রায় ২শ’ মেহমান ইজতেমার এ পর্বে অংশ নেন বলে আয়োজকরা জানান।

মোনাজাত শেষে ভোগান্তি: আখেরি মোনাজাত শেষ হওয়ার পরপরই বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়া মানুষ একযোগে নিজ নিজ গন্তব্যে ফেরার চেষ্টা করেন। মোনাজাত করতে আসা মানুষগুলো শুরু করে দেয় হুড়োহুড়ি এবং আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতা। এতে টঙ্গীর আশেপাশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে সৃষ্টি হয় তীব্র জনজট ও যানজট। ফলে বাধ্য হয়েই ফের পায়ে হেঁটে রওনা দেন অনেকেই। আর পায়ে হাঁটা মানুষের চাপে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মুসল্লিদের যানবাহন সোমবার বিকাল পর্যন্ত থেমে থাকে ইজতেমা মাঠের আশেপাশের এলাকায়।

দ্বিগুণ ভাড়া আদায়: আখেরি মোনাজাত শেষে দূর-দূরান্তের মুসল্লিরা নিজ নিজ গন্তব্যের দিকে একযোগে যাত্রা করে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যাত্রীবাহী কোনো গাড়ি না থাকায় বাধ্য হয়েই অনেকে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া দিয়ে পিকআপ ভ্যান ও রিকশা ভ্যানে করে যেতে দেখা গেছে। এদিকে গাজীপুর চৌরাস্তার যাত্রী মেরাজ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, টঙ্গী মিলগেট থেকে গাজীপুর চৌরাস্তার গাড়ি ভাড়া ১৫ টাকা। কিন্তু পিকআপ ভ্যানের চালক আমাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫০ টাকা করে নিচ্ছে।

 শেষদিনে বয়ানকারী: মঙ্গলবার বাদ ফজর উর্দুতে বয়ান করেন দিল্লির হাফেজ ইকবাল নায়ার। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উর্দু ভাষায় হেদায়েতি বয়ান শুরু করেন দিল্লির মাওলানা শামীম এবং বাংলায় তা তরজমা করেন মাওলানা আশরাফ আলী। পরে দিল্লির মাওলানা শামীম হেদায়েতির কিছু কথা বলে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন। এবারের বিশ্ব ইজতেমায় বিভিন্ন দেশ ছাড়াও ভারতের নিজামউদ্দিন মারকাজের শীর্ষ মুরব্বি তাবলীগ জামাতের বিশ্ব আমীর মাওলানা সা’দ কান্ধলভীর পক্ষে নেতৃত্ব দিতে ৩২ সদস্যের একটি দল টঙ্গীর ইজতেমায় যোগ দেন। এতে জিম্মাদারের নেতৃত্ব দেন দিল্লির মাওলানা শামীম।

টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সা’দ অনুসারী মাওলানা আশরাফ আলী জানিয়েছেন, এবারের ইজতেমা আদর্শগত ভিন্নতার কারণে ভিন্নভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যার ফলে এই ইজতেমায় শ্রোতা ভিন্ন, বক্তা ভিন্ন, দোয়া ভিন্ন এবং আদর্শও ভিন্ন। তিনি বলেন, ফলে এটাকে সবদিক থেকে এক ইজতেমা বলার উপায় নেই। কিন্তু আবার একদিক থেকে বলা যায়। কারণ পৃথক হলেও দুটি ইজতেমা একই প্যান্ডেলে হচ্ছে। এবারের ইজতেমা আয়োজনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ধর্মমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টা ছিল।

২০২০ সালের বিশ্ব ইজতেমার তারিখ ঘোষণা: আখেরি মোনাজাত শেষে মাওলানা সা’দ কান্ধলভী অনুসারীদের ইজতেমার তারিখও ঘোষণা করা হয়েছে।

বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির এ অংশের মুরব্বি মো. হারুন-অর-রশিদ জানান, আগামী ২০২০ সালে তাদের অংশের ইজতেমা একপর্বে ৩, ৪ ও ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে চলতি বছরের ২২-২৬শে নভেম্বর টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানের পাঁচ দিনব্যাপী জোড় অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে, মাওলানা জোবায়ের আহমদপন্থিদের ২০২০ সালের বিশ্ব ইজতেমা ১০ থেকে ১২ই জানুয়ারি ও ১৭ থেকে ১৯শে জানুয়ারি এই দুইপর্বে অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়াও তাবলীগের এ অংশের জোড় ইজতেমা চলতি বছরের ২৯ ও ৩০শে নভেম্বর এবং ১লা, ২রা ও ৩রা ডিসেম্বর এই পাঁচ দিন অনুষ্ঠিত হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর