× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নিমতলী থেকে চকবাজার / আড়াই মাসের আলটিমেটাম বাস্তবায়ন হয়নি ৯ বছরেও

এক্সক্লুসিভ

নূর মোহাম্মদ
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, শুক্রবার

পুরান ঢাকা। যেন এক মৃত্যুপুরী। ঘেঁষাঘেঁষি বাড়ি। সরু গলি। গিঞ্জি পরিবেশ। নিচ তলায় কারখানা অথবা খাবার হোটেল। ওপরের তলায় কেমিক্যালের গুদাম। কোথাও প্লাস্টিক বা অন্যান্য কারখানা।
তার ওপরের তলায় থাকছেন বাসিন্দারা। বাড়িতে কোনো অগ্নি নিরাপত্তা। আগুনসহ যেকোনো দুর্ঘটনায় নিরাপদে বের হওয়ার নেই পর্যাপ্ত রাস্তা। এলাকাবাসীর ভাষ্য ও সরজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর পুরান ঢাকা হিসেবে খ্যাত লালবাগ, চুড়িহাট্টা, চকবাজার, ইসলামবাগ, হাজারীবাগ, কোতোয়ালি, বংশাল, কামরাঙ্গীরচর, শ্যামপুর ও কদমতলী, নবাব কাঁটারাসহ বিভিন্ন এলাকায় অলিগলিতেই গড়ে উঠেছে হাজার হাজার কারখানা।

অবৈধ এসব কারখানার মধ্যে রয়েছে ব্যাটারি তৈরি, নকল ওষুধ, পারফিউম, কসমেটিকস, স্প্রে, নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ, প্লাস্টিক সরঞ্জাম, নকল বৈদ্যুতিক ক্যাবল, ঝালাই, খেলনা ও জুতা-স্যান্ডেলসহ শতাধিক পণ্য তৈরির কারখানা। এসব কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় কেমিক্যাল। বাসা-বাড়িতেই এসব কেমিক্যাল মজুত রাখার গুদাম রয়েছে। ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ এসব রাসায়নিক দাহ্যবস্তুর কারণে ২০১০ সালে ৩রা জুন পুরান ঢাকার নবাব কাঁটারার নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেখানে শিশুসহ ১২৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য রান্নার পাশেই ছিল কেমিক্যালের গুদাম। চুলার তাপে কেমিক্যালের প্লাস্টিকের ড্রাম গলে আগুন ধরে স্মরণকালের ভয়াবহ সেই মর্মান্তিক ঘটনার সূত্রপাত বলে ধারণা করা হয়। এ ঘটনার পর শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি পুরান ঢাকা থেকে আড়াই মাসের মধ্যে সব কেমিক্যাল কারখানা সরানোর সুপারিশ করে।

সে সময় মোটাদাগে সাড়ে চার শ’ কেমিক্যাল কারখানা সরানোর সুপারিশ করা হয়। সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি ৯ বছরেও। এলাকাবাসীর দাবি, ঢাকার বাজার বেড়েছে, কারখানাও বেড়েছে। সেই হিসেবে কেমিক্যাল গুদাম তো কমেনি বরং বেড়েছে। কিছু ব্যবসায়ী কারখানা কেরানিগঞ্জ ও কামরাঙ্গীরচরে চলে যাওয়া গুদাম সেখানে সরিয়ে নিয়েছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) এক হিসেবে দেখা গেছে, পুরান ঢাকায় কেমিক্যাল গোডাউন বা রাসায়নিক দাহ্য বস্তুর গুদাম বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজারের মতো। এসবের মধ্যে ১৫ হাজার আছে খোদ বাসা-বাড়িতেই। মাত্র আড়াই হাজার গুদামকে ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে সিটি করপোরেশন। বাকি ২২ হাজারের বেশি গুদামই অবৈধ। ২০০ ধরনের ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিকের ব্যবসা রয়েছে এলাকাজুড়ে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাসায়নিক কারখানা দিতে হলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অনুমোদন নিতে হয়। এর মধ্যে বিস্ফোরক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের পর সিটি করপোরেশন থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। সেই লাইসেন্স প্রতিবছর নবায়ন করতে হয়। ভবনে কারখানা করতে হলে রাউজকের অনুমতি নিতে হয়। করকারখানা করার জন্য শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কলকারখানা অধিদপ্তরের অনুমোদন। এলাকাবাসী বলেন, এসব কারখানা একটি দপ্তরের অনুমতি নিয়ে গড়ে ওঠেনি। মাঝে মধ্যে এসব দপ্তরের লোকজন আসে। তারপর ম্যানেজ হয়ে চলে যায়।

অভিযানের মধ্যে শুধু মোবাইল কোর্টের অভিযান হলে কিছু দিনের জন্য বন্ধ থাকে। তারপর আবার শুরু। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব সংস্থা সমন্বিত উদ্যোগ নিলে নিমতলীর ঘটনার পর এত বড় দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হতো। এমন পরিস্থিতি টনক নড়েছে সরকারের। দুর্ঘটনা স্থল পরিদর্শন করে এসব কেমিক্যাল কারখানা সরানোর কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সরকারের র্স্বোচ্চ মহল থেকে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এ ঘটনার জন্য দায়ী যারা কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তদন্ত কমিটি হয়েছে তাদের সুপারিশে পর ব্যবস্থা। শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেছেন, নিমতলীর ঘটনার পর আমরা বসে থাকিনি। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কমিটি হয়েছে। একটি প্রকল্প ইতিমধ্যে অনুমোদন হয়েছে। খুব কাছাকাছি কেরানিগঞ্জে সব কারখানা স্থানান্তরিত হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেছেন, কেমিক্যাল কারাখান সরাতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছি।

সম্প্রতি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছি। এবার শক্তভাবে বলতে চাই, পুরান ঢাকায় কোনো ধরনের দাহ্য পদার্থ ও কেমিক্যালের গোডাউন থাকবে না, থাকবে না, থাকবে না। কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। বার্ন ইউনিট পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পুরো এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা বা গোডাউন কোথায় কোথায় আছে এ ধরনের একটি জরিপ চালানো হবে। এরপর পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকায় অবৈধ কারখানা উচ্ছেদে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বয়ে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালানো হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর