× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মহাদেবপুরে অবাধে চলছে লাইসেন্সবিহীন এলপি গ্যাসের ব্যবসা

বাংলারজমিন

এম সাখাওয়াত হোসেন, মহাদেবপুর (নওগাঁ) থেকে
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, শুক্রবার

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় যত্রতত্র বিভিন্ন দোকানে অবাধে চলছে ফায়ার লাইসেন্স বিহীন এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের খুচরা ব্যবসা। যেকোনো ধরনের বিপর্যয় রক্ষার নেই কোন অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, মাছের খাবারের দোকান, সার-বিষ, মুদি ও রড-সিমেন্ট দোকান, এমনকি পানের দোকানেও প্রকাশ্যে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে এই সব দোকানিদের ফায়ার লাইসেন্স তো দূরের কথা, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রও তাদের নেই। মহাদেবপুর উপজেলা সদরসহ ১০টি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি বাজারেই বর্তমানে গ্যাস সিলিন্ডার কম-বেশি বিক্রি করা হচ্ছে। ১০টির কম সিলিন্ডার দোকানে থাকলে লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে না এমন আইনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে মহাদেবপুরের অধিকাংশ এলপি গ্যাস ব্যবসায়ী লাইসেন্স না নিয়েই অবৈধভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। লাইসেন্স আছে এমন গ্যাস ও দাহ্য পদার্থ ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিলের জন্য ট্রাকে করে বিপজ্জনক গ্যাস সিলিন্ডার সাজিয়ে ভাঙাচুরা পাকা-আধাপাকা সড়ক দিয়ে দ্রুতগতিতে চালিয়ে দোকানে দোকানে সরবারহ করছে। ৮টি সিলিন্ডার মজুদ করতে হলেও অধিকতর নিরাপত্তার জন্য অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক হলেও তা মানছেন না খুচরা গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ীরা।
মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চোখে পড়লেও জনস্বার্থে তা সন্তোষজনক নয় বলে সচেতন মহল মনে করেন।

স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই ধরনের ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ জোরালো করতে পারলে অনেক বড় ধরনের জানমালের ক্ষতি থেকে জনসাধারণ রেহাই পাবে বলে তারা মনে করেন । খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা সদরের বিভিন্ন দোকানে, মাতাজিহাট, চকগরীবাজার, চৌমাসিয়া (নওহাটা) মোড়, ছাতুনতলী বাজার, মহিষবাথান, কুঞ্জবন বাজার, বাগডোব বাজার, চান্দাশ বাজার, খাজুর বাজার, জিগাতল, পাহাড়পুর বাজার, পাটাকাটা বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার দোকানে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের মধ্যে আইনগত বাধ্যবাধকতা বিষয়ে ধারণা নেই। সংশ্লিষ্টদের তদারকির অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা জেনেও তারা সরকার অনুমোদিত লাইসেন্স ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়াই ব্যবসা করছে। বিভিন্ন কোম্পানির ডিলারদের বিক্রয়ের প্ররোচিত হয়ে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ীরা আইন অনুসরণ থেকে দূরে থাকছে। এসব দোকানগুলোতে বিভিন্ন ব্যান্ডের ১৫ থেকে ২০ পিস পর্যন্ত গ্যাস সিলিন্ডার দোকানে মজুদ করে ব্যবসা করছে। এসব ব্যবসায়ীদের মধ্যে বেশ কিছু ব্যবসায়ী লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় না থেকে সিলিন্ডার ব্যবসা শুরু করেছে। দোকানের ভিতরে বেশি পরিমাণ মজুদ রেখে বিক্রয়ের নয়া কৌশল হিসেবে দোকানের সামনে ফুটপথের ধারে দুই-চারটি সিলিন্ডার রেখে বিক্রিয় করছে। রাস্তা দিয়ে চলাচলরত জনসাধারণেরও মারাত্মক ঝুঁকি পোহাতে হয়। কেননা, এই ধরনের বিস্ফোরক দ্রব্য যেকোনো সময় বিস্ফোরণের আশঙ্কা রয়েছে।

উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে নির্ধারিত তালিকাভুক্ত পরিবেশকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পর তারা আবার খুচরা ব্যবসায়ীর মাধ্যমে সরাসরি গ্রামীণ জনপদের ভোক্তাদের কাছে এলপি গ্যাস পৌঁছায়। সংশ্লিষ্ট পরিবেশক কোনো আইনের বলে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে ট্রাকযোগে পৌঁছ দেয়, এটা নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। এই ধরনের ব্যবসার সকল ক্ষেত্রেই বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক। বিস্ফোরক আইন ১৮৮৪ এর দ্য এলপি গ্যাস রুলস ২০০৪ এর ৬৯ ধারার ২ বিধিতে লাইসেন্স ব্যতীত কোনো ক্ষেত্রে এলপিজি গ্যাস মজুদ করা যাবে তা উল্লেখ আছে। একই বিধিতে ৭১নং ধারায় বলা আছে, আগুন নিভানোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণ অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি রাখতে হবে। এই আইন অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর দুই বছর এবং অনধিক ৫ বছরের জেল এবং ৫০ হাজার টাকা দণ্ড  িেেত হবে এবং অর্থ অনাদায়ী থাকলে অতিরিক্ত আরো ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। সেই মোতাবেক ৮টি গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার মজুদের ক্ষেত্রে লাইসেন্সের প্রয়োজন নেই। আইনের এই ফাঁকফোকরটিই কাজে লাগাচ্ছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। মহাদেবপুর উপজেলা সদরের মেসার্স সরদার ট্রেডার্স স্বত্বাধিকারী মো. আব্দুল বারী সরদার জানান, আমার জানা মতে উপজেলায় গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ী হিসেবে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স একমাত্র আমার রয়েছে। সেই মূলে আমরা খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে গ্যাস সিলিন্ডার সরবারহ করি।

এ বিষয়ে মহাদেবপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন অফিসার মো. রোস্তম আলী জানান, উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন হাটে-বাজারে ছোটখাটো দোকানে গ্যাস বিক্রি হলেও মাঠ পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের বৈধ কোনো লাইসেন্স আছে বলে আমার জানা নেই। অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপন আইন-২০০৩ এর ৪ ধারা মোতাবেক সরকার ঘোষিত ফায়ার সার্ভিসের কোনো জ্বালানি নিয়ে কেউ ব্যবসা করলে (মজুদ প্রসেসিং প্রক্রিয়াকরণ অ্যাক্ট:) তাকে উক্ত বিধান অনুযায়ী ফায়ার লাইসেন্স করতে হবে। অন্যথায় উক্ত আইনের ১৭ ও ১৮ ধারা মোতাবেক ৩ বছরের কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড ও উক্ত প্রতিষ্ঠানের বা স্থানের মালামাল সরকার বরাবর বাজেয়াপ্ত করা হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর