ঝিনাইদহ জেলা সদরসহ উপজেলাপর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে দিনকে দিন রোগীর চাপ বৃদ্ধি পেলেও ডাক্তারের শূন্য পদে কোনো নিয়োগ নেই। ফলে রোগীর অসহনীয় চাপে চিকিৎসকরা হাপিয়ে উঠেছেন। অন্যদিকে, পান থেকে চুন খসলেই আদালত বা থানায় ডাক্তারদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিচ্ছে রোগীর স্বজনরা। ফলে বেশিরভাগ রোগী রেফার্ড করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিসের পরিসংখ্যানবিদ জাহাঙ্গীর হাবিব জানান, ঝিনাইদহ জেলায় ২১১ ডাক্তারের পদে মাত্র ৬৩ জন ডাক্তার কর্মরত আছেন। শূন্য পদ আছে ১৪৮। সূত্র মতে ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সহকারী সার্জনের ২০টি পদে কর্মরত আছেন মাত্র ৭ জন। ১৩টি পদ শূন্য আছে।
এ ছাড়া সিভিল সার্জন অফিসে ১ জন, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ৪০ ডাক্তারের মধ্যে ১৭ জন, কালীগঞ্জ হাসপাতালে ৩১ জন ডাক্তারের মধ্যে ৭ জন, মহেশপুর ৩৪ জন ডাক্তারের মধ্যে মাত্র ৪ জন, শৈলকুপায় ২৬ জনের মধ্যে ৭ জন, হরিণাকুণ্ডুতে ৩০ জনের মধ্যে ৫ জন ও কোটচাঁদপুরে ২৬ জন ডাক্তারের মধ্যে ৮ জন কর্মরত আছেন। বছরের পর বছর এ সব শূন্যপদে কোনো চিকিৎসক পদায়ন করা হয় না। ফলে স্বল্প সংখ্যক ডাক্তার দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসকদের প্রায়ই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। যে কারণে আদালত ও থানায় মামলা করতে দেখা যায় রোগীদের। তবে, রোগীদের অভিযোগ, ডাক্তাররা সময়মতো হাসপাতালে আসেন না। সকাল ৮টার পরিবর্তে আসেন ১০টায় আবার দুপুরের আজান হলেই বাসায় চলে যান। এই ৩/৪ ঘণ্টায় কি রোগী দেখেন ডাক্তাররা। একদিকে ডাক্তার সংকট, অন্যদিকে এত অল্প সময় ডিউটি করে কত জন রোগী দেখেন বলে অভিযোগ করেন রোগীর আত্মীয় স্বজনরা। অথচ এই হাসপাতালের ডাক্তার এখান থেকে বেরিয়েই শহরের বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ডিউটি করেন। অধিকাংশ সময়ই রোগীদের ভালোমানের ওষুধ থাকলেও দেয়া হয় না। একটু ভালোমানের ওষুধ হলেই বলেন এটা আমাদের স্টোরে নাই। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে এক হাজারের বেশি রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নেন। নির্দিষ্ট সংখ্যক বেডের বিপরীতে অসংখ্য রোগী ভর্তি হয়ে হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা নেন। ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ডে এমন চিত্র প্রতিদিনের। অনেক ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও উন্নত পরীক্ষা নিরীক্ষার সুযোগ না পেয়ে রোগীরা দৌড়ান প্রাইভেট ক্লিনিকে। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ খালি রয়েছে। অক্সিজেন বিভাগে কোনো টেকনিশিয়ান নেই। ফলে কোটি টাকার বেশি দামের এই প্রকল্প প্রায় অচল হতে বসেছে। অনেক বিভাগে এক্সপার্ট না থাকার কারণে মেশিনপত্র পড়ে থেকে নষ্ট হতে দেখা গেছে। ডাক্তাররা কোনো পিয়ন পান না। এক গ্লাস পানি খেতে হলেও নিজে নিয়ে খেতে হয়। অজ্ঞানের ডাক্তারের অভাবে উপজেলাপর্যায়ে অপারশেন সম্ভব হয়ে ওঠে না। জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে এমন চিত্র বহু দিনের হলেও শূন্যপদ পূরণের কোনো উপায় দেখা যাচ্ছে না। এত সমস্যা ও ডাক্তার সংকটের পরেও ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আইয়ুব হোসেন ও গাইনি বিভাগের ডা. এমদাদ হোসেনের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে এখানকার রোগীরা যথেষ্ট সেবা পেয়ে থাকেন। এদিকে, উপজেলাপর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন দুই শতাধিক রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসে। ভর্তি থাকেন ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী। এই বিপুল সংখ্যক রোগী ৪/৫ জন ডাক্তারকে সামাল দিতে হচ্ছে। হরিণাকুণ্ডু হাসপাতালে ৩০ জন ডাক্তারের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৫ জন। দু’জন ডাক্তার রাতের ডিউটি করে বিশ্রামে গেলে বাকি তিনজন ডাক্তার সামলান দিনের বেলা। এভাবে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে জেলার চিকিৎসা সেবা। ডাক্তার সংকটের কারণে হাসপাতালগুলো এখন নিজেই রোগী হিসেবে ধুঁকছে বছরের পর বছর। ডাক্তার সংকটের বিষয়ে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. রাশেদা সুলতানা জানান, আমরা একাধিকবার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে শূন্যপদ পূরণের কথা বলেছি। কিন্তু পদ পূরণ হয় না। ফলে কর্মরত চিকিৎসকরা ফুরসত পাচ্ছেন না। তিনি বলেন তারপরও এত কম সংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে আমরা রোগীদের মানসম্মত চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করছি।