× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ঢামেকের বার্ন ইউনিটে কাতরাচ্ছেন ৯ জন

দেশ বিদেশ

স্টাফ রিপোর্টার
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, শুক্রবার

চকবাজার ট্র্যাজেডির ঘটনায় অগ্নিদগ্ধে আহত ৯ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক ইনস্টিটিউটে কাতরাচ্ছেন। বুধবার রাত থেকেই বার্ন ইউনিটের সামনে তাদের স্বজনরা আহাজারি করছেন। তাদের আর্তচিৎকারে বার্ন ইউনিটের বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাদের অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ। আহতদের গলার ভেতরে ধোঁয়া ঢুকেছে। শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। চারজনের অবস্থা খুবই খারাপ। এদের মধ্যে সোহাগ নামের একজনকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে।
সোহাগের শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে। রেজাউলের শরীরের ৫১ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।  চুড়িহাট্টার রাজ্জাক ভবনে লাগা আগুনের ঘটনায় ঢামেকের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিতে এসেছেন ১৮ জন। এদের মধ্যে বার্ন ইউনিটে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ৯ জন চলে গেছেন। বাকি ৯ জন চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ। বুধবার রাত ১১টা থেকেই এখানে দগ্ধ মানুষ আসতে থাকেন। অন্যদিকে ওই ঘটনায় সাধারণ আহত হয়ে ঢামেকের জরুরি বিভাগ দিয়ে আরো ৩২ জন চিকিৎসা নিতে আসেন। এদের মধ্যে ৩০ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে যান। দুইজন হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
ঢামেকে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন এই বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, চিকিৎসাধীন ৯ জনের কেউই ঝুঁকিমুক্ত নন। এদের মধ্যে চারজন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। একজনকে আইসিইউ নেয়া হয়েছে। খুব দ্রুত আরো দু’জনকে আইসিইউতে নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, নিমতলী ট্র্যাজেডি থেকে আমরা কেউই শিক্ষা নেইনি। বছরে ছয় লাখ মানুষ নানাভাবে অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন হাসপাতালে। যা পৃথিবীর কোনো দেশেই হয় না। তিনি বলেন, কেমিক্যালের আগুন আর সাধারণ আগুনে পোড়ার মধ্যে ব্যাপক তফাত রয়েছে। কেমিক্যালের আগুন ভয়াবহ। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, কেন পুরান ঢাকায় কেমিক্যালের ফ্যাক্টরি থাকতে হবে।
আহত যারা বার্ন ইউনিটে ভর্তি আছেন তারা হলেন-আনোয়ার (বয়স-৫৫, তার ২৮ শতাংশ দগ্ধ), মাহমুদুল (বয়স-৫২,তার ১৩ শতাংশ পুড়ে গেছে), সেলিম (বয়স-৪৪, তার ১৪ শতাংশ দগ্ধ), হেলাল (বয়স-১৮, তার ১৬ শতাংশ পোড়া), রেজাউল (বয়স-২১, তার ৫১ শতাংশ দগ্ধ), জাকির (বয়স-৩৫, তার ৩৫ শতাংশ আগুনে পুড়ে গেছে), মোজাফ্‌ফর (বয়স-৩২, তার ৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে), সোহাগ ( বয়স-২৫, তার ৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে) ও সালাউদ্দীন (বয়স-৪৫, তার ১০ শতাংশ দগ্ধ)।
জীবনের তাগিদে রাজবাড়ী থেকে ঢাকায় এসে রিকশা চালাচ্ছিলেন আনোয়ার। তিন ছেলে এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। চুড়িহাট্টার ওই গলি দিয়ে রাত ১০টার পর রিকশা নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। রাস্তায় ছিল তখন প্রচণ্ড জ্যাম। হঠাৎ বিকট শব্দ। আগুনের গোলা তার শরীরে এসে পড়ে। ঝলসে যায় তার শরীর। দ্রুত আশপাশে লোকজন তাকে উদ্ধার করে ঢামেকে নিয়ে আসেন বলে তার ভাই মো. শহিদুল জানান। আহত আরেকজন সেলিম। পায়ে হেঁটে রাত সাড়ে ১০টার দিকে চুড়িহাট্টার ওই রাস্তা দিয়ে বাসায় যাচ্ছিলেন। হঠাৎ আগুন তার শরীরে এসে লাগে। এতে ১৪ শতাংশ পুড়ে যায়। বার্ন ইউনিটে কথা হয় সেলিমের আত্মীয় বোন লাকীর সঙ্গে। তিনি জানান, হঠাৎ আগুনের গোলা তার ভাইয়ের পিঠের ওপর পড়ে। কানের এক পাশ পুড়ে যায়। ওই সময় আগুন লেগে আরেকজন তার শরীরের ওপর পড়ে যায়। এরপর খাম্বার সঙ্গে ধাক্কা লাগে। তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলায়। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ থেকে কাজের সন্ধানে ঢাকায় আসেন ১৮ বছর বয়সী হেলাল। নেন চুড়িহাট্টার ওই গলিতে প্লাস্টিকের দানার দোকানে কাজ। আগুন লাগার সময়ে তিনি প্লাস্টিকের ধানা তুলছিলেন। এ সময় হঠাৎ আগুনে ওই এলাকা ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যায়। বার্ন ইউনিটের পোস্ট অভারেটিভ রুমে তার বড় ভাই রাশেদুজ্জামান মানবজমিনকে বলেন, তার ভাই তখন ট্রলিগাড়িতে মাল তুলছিল। হঠাৎ আগুন লাগে। গ্যাস সিলিন্ডার ও ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণ হলে আগুনে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। পরে তার ভাইকে মানুষ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। এদিকে  গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢামেকের বার্ন ইউনিটে আহতদের দেখতে যান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, লালবাগ এলাকার এমপি হাজী সেলিম। এ সময় মন্ত্রীরা আহতদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেয় এবং যথাযথ চিকিৎসার ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন। বার্ন ইউনিটের নিচে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, তদন্ত চলছে। তদন্তের রিপোর্ট দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর