× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

লাল ফিতায় আটকে আছে ইনানীর জাতীয় উদ্যান প্রকল্প

বাংলারজমিন

সরওয়ার আলম শাহীন, উখিয়া থেকে
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, শনিবার

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্যটন স্পট উখিয়ার উপকূলীয় এলাকা সাগর, পাহাড় ও প্রকৃতির নৈসর্গিক মেলবন্ধন ইনানীর ১০ হাজার হেক্টর বনভূমি নিয়ে গড়ে তোলা প্রস্তাবিত জাতীয় উদ্যান কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ রয়েছে যুগ যুগ ধরে। বন্যপ্রাণী, জীববৈচিত্র্যের উন্নয়নসহ ইকো ট্যুরিজম স্পটের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলেও জাতীয় উদ্যানের স্বীকৃতি অজ্ঞাত কারণে লাল ফিতায় আটকে রয়েছে। যে কারণে সম্ভাবনাময় আয়ের উৎস পর্যটন স্পটটি মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে বলে দাবি করছেন স্থানীয় পরিবেশবাদী সচেতন মহল।

ইনানী রক্ষিত বনাঞ্চলসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, ইনানীর ১০ হাজার হেক্টর বনভূমিকে পর্যটন শিল্পে রূপান্তর করে সরকারের প্রবৃদ্ধি অর্জনসহ দেশি বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার উদ্যোগ নিয়ে জাতীয় উদ্যান হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি প্রাপ্তির জন্য ইতিপূর্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বেশ কয়েকবার আবেদন আকারে পরিপত্র প্রেরণ করা হলেও কার্যত কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. মহি উদ্দিন প্রস্তাবিত জাতীয় উদ্যান পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করে এ বনটিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে খুব সহসা অনুমোদন দেয়ার আশ্বস্ত করলেও তা এ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। উপরন্তু এদেশে রোহিঙ্গা আশ্রয়ের পর থেকে বিভিন্ন নেতিবাচক অন্তরায়ের মাধ্যমে জাতীয় উদ্যানের উপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তিনি বলেন, জাতীয় উদ্যানের নির্ধারিত জায়গা দখল করে জনবসতি গড়ে উঠার কারণে বন্যপ্রাণী লোকালয়ে আসছে। জালিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী জানান, ২০০৮ সাল পর্যন্ত ইনানীর ১৯ হাজার হেক্টর বনভূমির ৮০শতাংশ বনসম্পদ উজাড় হয়ে যাওয়ার ফলে বন্যপ্রাণী আবাসস্থল হারিয়ে লোকালয়ে চলে আসতে শুরু করে।
বনভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে বসতি স্থাপন ও কৃষি জমিতে রূপান্তরসহ নির্বিচারে পাহাড় কেটে মাটি পাচার, বনসম্পদ ধ্বংসের ফলে জীববৈচিত্র্য বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। তিনি বলেন, এখানে বন বিভাগ থাকলেও কার্যত তাদের ভূমিকা রহস্যজনক।

যে কারণে সরকারের গৃহীত পর্যটন পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ইনানী বনরেঞ্জ কর্মকর্তা ইব্রাহিম হোসেন মিয়া জানান, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের ছত্রছায়ায় জাতীয় উদ্যানের আওতাধীন বনভূমি দখল করে স্থাপনা তৈরির কথা স্বীকার করে বলেন, এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ পাহাড় কেটে মাটি পাচার প্রতিরোধ করতে গেলে মুঠোফোনে হুমকি প্রদর্শন করা হয়। যে কারণে বনের  ভেতর অনৈতিকতা বন্ধ করা বনকর্মীদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। ২০০৯ সালে স্থানীয় বনবিভাগ, বেসরকারি এনজিও সংস্থা আরণ্যক ফাউন্ডেশন, স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা শেড যৌথ উদ্যোগে এলাকার বন নির্ভরশীল বিশাল জনগোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়ে ‘বন বাঁচায় আমাদেরকে, আমরা বাঁচাবো বনকে’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে ইনানীর বন উন্নয়নে একটি বন রক্ষা কমিটি গঠন করা হয়। তিনি বলেন, ইনানী বন সংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারী বননির্ভরশীল প্রায় ২৪টি গ্রামভিত্তিক বন সংরক্ষণ ফোরাম গঠন করা হয়। তাদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে নগদ সহায়তা প্রদান করে বিভিন্ন পেশায় সম্পৃক্ত করা হলে তারা বাঁশ, গাছ, পশু প্রাণী শিকার বন্ধ করে নিজেরাই আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়ে। এতে বনের উপর চাপ কমে যায় বলে ওই কর্মকর্তা স্বীকার করে বলেন, ইনানীর ন্যাড়া বনে গাছ-গাছালি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বনে রূপান্তরিত হয়েছে। যা জাতীয় উদ্যান স্বীকৃতির উপযোগী। তবে, গত ১ বছর ধরে ইনানীর সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অপতৎপরতা বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে ওই বনভূমির জায়গা দখল করে বসতি স্থাপনের ফলে জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের উপর প্রভাব পড়েছে।  
মনখালী রক্ষিত বনাঞ্চল সহায়ক কমিটির সভাপতি নুরুল আবছার জানান, স্থানীয় বনবিভাগের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ইনানীর বন থেকে কাঠ পাচার অব্যাহত রয়েছে।

 পাহাড় কেটে মাটি পাচারের ফলে জাতীয় উদ্যান কর্মসূচি হুমকির মুখে পড়েছে। তিনি আরো জানান, ইনানীর বনকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে অনুমোদন দেয়া হলে বন বিভাগের কর্তৃত্ব থাকে না। বছর বছর বন সৃজনের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যাবে। এ ছাড়াও বন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অনৈতিক ফায়দা থেকে বনকর্মীরা বঞ্চিত হবে। যার প্রেক্ষিতে জাতীয় উদ্যান অনুমোদনে তারা বেঁকে বসেছে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। যার ফলে যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ইনানীয় ১০ হাজার হেক্টর বনভূমিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে অনুমোদন দিতে গড়িমসি করছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, দেশের ২য় বৃহত্তম পর্যটন স্পট ইনানীর ১০ হাজার হেক্টর জমিতে প্রস্তাবিত জাতীয় উদ্যান বাস্তবায়নসহ ইনানীকে পর্যটন শিল্পে আধুনিকায়ন করার জন্য জেলা প্রশাসক ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে কিছু কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত জাতীয় উদ্যানের উন্নয়নের ব্যাপারে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর