চম্পা বেগম। আগুনে পুড়ে নিহত ভ্যানচালক এসহাক বেপারির স্ত্রী। জীর্ণশীর্ণ কাপড়ে দূর থেকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন জীবনসঙ্গীর কবরের দিকে। কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানিও শুকিয়ে গেছে। শব্দ বের হচ্ছে না কণ্ঠে। তারপরও বিলাপ করে যাচ্ছেন। তার পাশে দাঁড়ানো দুই সন্তান পাঁচ বছরের আলিফ ও তিন বছরের আরাফাত। বিমর্ষ চেহারায় তারাও মায়ের সঙ্গে সঙ্গে কাঁদছে।
চম্পা বেগম ও এসহাক বেপারির গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের লৌহজং। ঢাকায় থাকেন কামরাঙ্গীর চরে। লাশ শনাক্ত হওয়ার পরে বাড়িতে নেয়া হয়নি এসহাক মিয়াকে।
এখানেই রাত দশটার মধ্যে দাফন করা হয়েছে। চম্পা বেগম বলেন, আলিফের বাবার সঙ্গে শেষ কথা হয়েছে আলিফকে নিয়েই। রাত নয়টায় ফোন দিয়ে জানতে চেয়েছিল আলিফ পড়তে গিয়েছে কিনা। এরপর শেষ দেখা পোড়া এক মাংসপিণ্ডের সঙ্গে। শনাক্ত হয়েছে ঘাম মুছার গামছা দেখে। আজিমপুর কবরস্থানের আরেক পাশে বিলাপ করছিলেন টিটু। ভাই ভাইও আর ফোন দিবি না? দেরী হলে বলবি না কোন সময় বাসায় আসবা। বলবি না এক সঙ্গে খাবো, তারাতারি আসো। ছোট ভাইকে হারিয়ে দুইদিন ধরে বিলাপ করে যাচ্ছেন টিটু। একমাত্র ছোট ভাই মিঠুকে হারিয়ে তার সঙ্গে পুরনো স্মৃতিগুলো মনে করছিলেন আর বিলাপ করছিলেন তিনি।
গতকাল জুমার নামাজের পর আজিমপুর কবরস্থানে ঢল নামে চকবাজারে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া স্বজনদের। ২১শে ফেব্রুয়ারি চকবাজারে চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে রিকশায় মারা যান তার ছোট ভাই মিঠু, তার স্ত্রী সোনিয়া ও দুই বছরের সন্তান সাহির। বন্ধুর গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন তারা। কিন্তু ঘটনাস্থলে যানজটই কাল হলো তাদের। টিটু বলেন, মিঠু পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়তো। শুক্রবার একসঙ্গে আমরা মসজিদে যেতাম। কে জানতো আজ নামাজ পড়ে তার কবর জেয়ারত করতে আসতে হবে আমার।
শুধু টিটু নয়, তার মতো নিহত অন্যদের স্বজনরাও ভিড় জমিয়েছেন আজিমপুর কবরস্থানে। তাদের কান্না আর বিলাপে ভারি হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ।
গতকাল জুমার নামাজের পর আজিমপুর কবর স্থানে গিয়ে দেখা যায়, কেউ কবর ছুঁয়ে কেঁদেই চলেছেন, কেউবা স্বজনের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে একমনে করছেন প্রার্থনা, কেউ কেউ আপজনদের পুরনো স্মৃতিগুলো মনে করে করছেন বিলাপ।