× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

কোথায় হারালো দুই বোন

শেষের পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, শনিবার

ফাতেমা-তুজ জোহরা বৃষ্টি ও রেহেনুমা তারান্নুম দোলা খালাতো বোন। শাড়ি ছিল তাদের   দু’জনের ভীষণ প্রিয়। উৎসব, উপলক্ষ কিংবা যেকোনো আয়োজনে শাড়ি থাকতো তাদের পছন্দের তালিকায়। দোলা আর বৃষ্টির ফেসবুক টাইমলাইনজুড়ে থাকা বেশিরভাগ শাড়ি পরা ছবি তারই প্রমাণ দেয়। আপন বোন না হলেও দু’জনের চালচলনে ছিল বেশ মিল। দু’জনেই চশমা পরতেন, তাও প্রায় একই রকম ফ্রেমের। শিল্প-সাহিত্যেও আগ্রহ ছিল বেশ। আবৃত্তিতে ঝোঁক কিছুটা বেশি।
দু’বোন মিলে ভর্তিও হয়েছিলেন প্রজন্মকণ্ঠ নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির একটি আবৃত্তি সংগঠনে। শিল্প-সাহিত্যের প্রতি দারুণ ঝোঁক থাকায় পরিবারও দু’জনকে বেশ উৎসাহ দিতো। ‘একা থাকার এই ভালো লাগায় হারিয়ে গিয়েছি, নিঃসঙ্গতা আমাকে আর পাবে না...’ গত ৩রা জানুয়ারি ফেসবুকে এমন একটি লেখা পোস্ট করেছিলেন রেহেনুমা তারান্নুম দোলা।

অথচ তার প্রায় দেড় মাস পর বোন ফাতেমা-তুজ জোহরা বৃষ্টিকে নিয়ে সত্যিই হারিয়ে গেছেন দোলা। গত বুধবার চকবাজারের চুড়িহাট্টার আগুনের ঘটনার পর থেকে দোলা আর বৃষ্টিকে হন্যে হয়ে খুঁজছে তাদের পরিবার। দলিলুর রহমান দুলাল ও সুফিয়া কামালের কন্যা রেহনুমা তারান্নুম দোলা থাকতেন ১৩৮/৯ লালবাগ রোড এলাকায়। এর ঠিক পাশেই ৪১/১ হাজী রহিম বক্স লেনে থাকতো জসিম উদ্দিন ও শামসুন্নাহারের মেয়ে ফাতেমাতুজ জোহরা বৃষ্টি। পড়তেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের তৃতীয় বর্ষে। আর দোলা আইন নিয়ে পড়তেন মিরপুরের বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে। গত বুধবার বিকালে সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমিতে নিজেদের আবৃত্তি সংগঠন প্রজন্ম কণ্ঠের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে একসঙ্গে বাসা থেকে বের হয় দোলা ও বৃষ্টি। সেদিনও দু’জনে শাড়ি পরাই ছিলেন। খোঁপায় ছিল ফুলও। দুপুরের পর বাসা থেকে চলে যান শিল্পকলা একাডেমির অনুষ্ঠানে। দ্রুত অনুষ্ঠান শেষ করে বাসায় ফিরে আসবে বলেও জানায় দু’জনে। অনুষ্ঠান শেষ করে রাতে রিকশায় করে বাসায় ফিরছিলেন দুই বোন। কেবি রুদ্র রোড এলাকায় পৌঁছালে মুঠোফোনে কথা হয় ভাই সাজিদুল ইসলাম সাজিদের সঙ্গে। ১০টার কিছুক্ষণ পরেই তাদের সঙ্গে কথা হয় বলে জানান সাজিদ। তিনি বলেন, আমাকে ফোনে বলেছিল আর মিনিট দশেকের মধ্যে তারা বাসায় চলে আসবে। অথচ দু’দিন হয়ে গেল এখনো আমার বোনদের খুঁজে পেলাম না।

প্রজন্মকণ্ঠ আবৃত্তি সংগঠনের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুমন জামান জানান, বুধবার শিল্পকলায় একুশের প্রথম প্রহর উদযাপনের অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠান শেষ করে বাসার ফিরে যাবার সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে লালবাগ শাহী মসজিদ এলাকা থেকে নিখোঁজ হয় দু’জনে। মাঝে আমার সঙ্গে কথা হয়। ওরা শিল্পকলা একাডেমি থেকে রিকশায় করে যাচ্ছিল। দোয়েল চত্বর দিয়ে ঢুকতে না পেরে চানখারপুল, হোসেনি দালান ও লালবাগ মসজিদ হয়ে বাসার দিকে যাচ্ছিল তারা। দোলা ও বৃষ্টি দু’জনের মুঠোফোনের সবশেষ লোকেশন লালবাগ শাহী মসজিদ এলাকাতেই দেখাচ্ছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের সামনে অশ্রুসজল নয়নে বোনদের ফেরার অপেক্ষায় ভাই সাজিদ। কথা বলতে গিয়েই ঢুকরে কেঁদে উঠেন। জানান পড়াশোনা নিয়ে তেমন খুনসুটি ছিল না দু’জনের। তবে, কবিতা ও আবৃত্তি নিয়ে দোলা ও বৃষ্টি বেশ প্রতিযোগিতা করতো। অনেক সময় বাসাতেই নিজেরা অনুশীলন করতো। কোনোখানে ভুল করলে একজন আরেকজনকে বেশ ক্ষেপাতো। আর টিভিতে কারো আবৃত্তি দেখলে এক বোনকে আরেক বোনকে বলতো, একদিন দেখিস আমিও এরকম হবো...
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর