× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

‘চুড়িহাট্টা যেন এক মৃত্যুপুরী’ /সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চকবাজার ট্র্যাজেডি

অনলাইন

অনলাইন ডেস্ক
(৫ বছর আগে) ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৯, শনিবার, ১২:১২ অপরাহ্ন
ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যখন একুশের ভাষা দিবস উদযাপনের তোড়জোড়, শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা, মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে, পুরান ঢাকার চকবাজার চুড়িহাট্টা তখন যেন এক মৃত্যুপুরী। আকাশে বাতাসে তখন ভাসতে শুরু করেছে অগ্নিদগ্ধ লাশের গন্ধ। মুহূর্তেই সেই খবর গণমাধ্যমের কল্যাণে ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। ভয়াবত এই আগ্নিকা-কে কেন্দ্র করে গভীর রাত থেকেই সরব হয়ে ওঠে দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তুপ থেকে বের করে আনতে থাকে একের পর এক লাশ। তা দেখে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ তাদের অতঙ্ক-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে সামাজিক মাধ্যমে। কেউ শোক প্রকাশ করেন, কেউ সরকারকে দোষারোপ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন, কেউ নিহতদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে পোস্ট করেন ফেসবুক, টুইটরে। সোশাল মিডিয়ায় সাধারণত লিখেন, অথচ চকবাজার ট্র্যাজেডি নিয়ে লিখেননি- এমনটা লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
দেশের তারকা খেলোয়ার, অভিনেতা-অভিনেত্রী, রাজনীতিক, প্রায় সবার সামাজিক মাধ্যমেই ছিল চকবাজার ট্র্যাজেডি নিয়ে মর্মবিদারক বার্তা।

দেশ সেরা ক্রিকেটার ও সদ্য নির্বাচিত এমপি মাশরাফি বিন মর্তুজা ভাষা দিবস নিয়ে কোনো পোস্ট না দিলেও বৃহস্পতিবার নিজের ফেসবুকে চকবাজার দুর্ঘটনার একটি ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘চকবাজারে অগ্নিকা-ের ঘটনায় শোক জানানোর কোনো ভাষা আমার জানা নেই। আমি গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত। হতাহতদের জন্য প্রার্থনা করছি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে। জানি, তাদের পরিবারের জন্য কোনো সান্ত¦নাই যথেষ্ট নয়। আল্লাহ তাদের এই শোক সইবার শক্তি দিন।’ উদ্ধার কাজে নিয়োজিতদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান তিনি।
সাকিব আল হাসান তার আইডিতে ইংরেজিতে লিখেছেন, ‘চকবাজারের ঘটনা বর্ণনা করার মতো কোনো ভাষা আমার জানা নেই। নিহত ও তাদের পরিবারের জন্য আমার আত্মা বেরিয়ে যাচ্ছে। কল্পনাও করতে পারছি না (স্বজনহারা) পরিবারগুলো এখন কী অবস্থায় আছে। আল্লাহ তাদের স্বজন হারানোর শোক সহ্য করার শক্তি দিন। আমীন!’
অভিনেতা তাহসানও ভাষা দিবস নিয়ে কোনো পোস্ট করেননি। তবে চকবাজার ট্র্যাজেডি নিয়ে তিনি পরপর দুটি পোস্ট করেছেন। একটিতে শোক প্রকাশ করেছেন। পরে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের ‘নিরাপত্তা নির্দেশিকা’ শিরোনামে একটি প্রচারপত্রের ছবি পোস্ট করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আমেনা রিংকি অভিমানের সুরে তার ফেসবুকে বৃহস্পতিবার লিখেছেন, ‘আসুন আমরা নিজেরা ঢাকাকে পরিত্যক্ত নগর ঘোষণা করি। নিজেরা নিজেদের জীবন রক্ষায় অগ্রগামী হই। আমরা বিকারহীন এক জাতি। সংশ্লিষ্ট অথরিটি সব কিছুর জন্য দায়ী, নাগরিক হিসেবে আমি কিছুই জানিনা - এই উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো খেলা বন্ধ হোক।’

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হাসান রাহাত চাপা কষ্ট নিয়ে তার ফেসবুকে লিখেন, ‘মৃত্যু দেখতে দেখতে আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। বাংলাদেশে এইসব ঘটনা নতুন নয়। ঢাকা মৃত্যু নগরীতে পরিণত হবে যদি একটা মাঝারি ভুমিকম্প হয়। কিন্তু আগে থেকে সাবধান থাকার কোনো তৎপরতা চোখে পড়ছে না।’
তিনি লিখেন, ‘পত্রিকাগুলোর আবেগ মিশ্রিত প্রতিবেদনগুলো কাঁদাচ্ছে। কাঁদতে ভুলে যাওয়া মানুষগুলোও কাঁদতে পারবে এগুলো দেখলে।’

‘কালো লাশের মিছিল বনাম নগর পরিকল্পনা’ শিরোনামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল্লাহ নামের এক শিক্ষার্থী ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ গ্রুপে বৃহস্পতিবার পোস্ট করেছেন, ‘লাশের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। একেকটা কালো লাশ বের করে আনা হচ্ছে। সংখ্যা একটা করে বাড়ছে। কোনো উৎসুকের মনে একটা কালো দাগ। কারও দু’টো, তিনটে কারও, কারও তারও বেশি কালো দাগ। পাশাপাশি ৭০ টা লাশ কিংবা তারও বেশি। যুৃদ্ধক্ষেত্র ভেবে দেখতে যাওয়া মানুষগুলো আবিষ্কার করল কয়লার খনি। একটা জীবন্ত মানুষ আগুনে নিজের ভাগ্য পরীক্ষা করল। কেমন হতে পারে সে মৃত্যু!’
অল্পের জন্য বেঁচে আসা মাস্টার্সের আরেক শিক্ষার্থী মার্জিয়া সাথী তার ফেসবুকে শুরুতেই লিখেছেন, ‘বাতাসে লাশের গন্ধ।’
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে তিনি লিখেন, ‘গতকাল সন্ধ্যার পর আসলাম চকবাজারের ওই রাস্তা দিয়ে। রাতেই সেটা মৃত্যুপুরীতে পরিণত হলো। ঘন্টা তিনেক আগে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে হয়ত আমিও এখন মর্গে পড়ে থাকতাম। আল্লাহর রহমতে বেঁচে আছি। নিহতদের রূহের মাগফেরাত কামনা করছি।’

এমনিভাবে নানাজন তাদের মনের অবস্থা প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন মাধ্যমে। সময় গড়াতে গড়াতে দেখা যায় প্রায় ৭০টি জীবন কেঁড়ে নিয়ে যায় ওই কালো রাত। হাসাতালের বিছানায় কাৎরাচ্ছে আরও প্রায় অর্ধশত লোক। অতঙ্ক, উৎকণ্ঠা আর মৃত্যু ভয় ভাষা দিবসকে যেন শোক দিবসে পরিণত করে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর