তৌকীর আহমেদ। জনপ্রিয় অভিনেতা ও নির্মাতা। এরইমধ্যে ‘জয়যাত্রা’, ‘রূপকথার গল্প’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘অজ্ঞাতনামা’, ‘হালদা’ এবং সবশেষ ‘ফাগুন হাওয়ায়’ ছবি পরিচালনার মধ্য দিয়ে দর্শকের কাছে দক্ষ নির্মাতার প্রমাণ দিয়েছেন। তার পরিচালিত কয়েকটি ছবি দেশে-বিদেশে পুরস্কৃতও হয়েছে। গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি দেশের ৫২টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় তার পরিচালিত ছবি ‘ফাগুন হাওয়ায়’। ছবিতে মূল চরিত্রে নুসরাত ইমরোজ তিশা ও সিয়াম আহমেদ অভিনয় করেছেন। ছবিটি প্রযোজনা করেছে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। এটি মুক্তির পর কেমন সাড়া পেলেন জানতে চাইলে তৌকীর আহমেদ বলেন, সিনেপ্লেক্সগুলোতে বেশ ভালো চলছে ছবিটি।
শুক্রবার আমি বসুন্ধরা সিটি, শ্যামলী, সীমান্ত স্কয়ার, ব্লকবাস্টার ঘুরে দেখলাম খুব ভালো রেসপন্স। তবে ঢাকার বাইরে অতটা ভালো যায়নি। কারণ যেসব এলাকায় ভালো সিনেমা হল আছে সেসব এলাকায় দর্শকরা ছবিটি দেখেছে, যেখানে নেই সেখানে দেখছে না। তবে দর্শকরা বেশ উৎসাহী ছবিটি দেখার জন্য। ছবির টেকনিক্যাল কোয়ালিটি নিয়েও দর্শকরা খুব খুশি। এ বিষয়টি আমাকে বেশ মুগ্ধ করেছে। আরো ভালো রেসপন্স আশা করেছিলেন কি? জবাবে এই নির্মাতা বলেন, যদি বলি আরো ভালো আশা করেছিলাম সেটা ভুল কথা হবে। কারণ আশা করার কোনো কারণ তো নেই। সবচেয়ে বড় বিষয় সে রকম সিনেমা হলের সংখ্যা বা পরিবেশ আমাদের নেই। মফস্বলে এসব ছবি চলে না। মানুষ এই ধরনের ছবি দেখার জন্য তৈরি না। হয়তো তাদের চাহিদা অন্যকিছু। তিনি আরো বলেন, মানুষ অনেক বেশি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গেছে এখন। অনেকে এটি ইউটিউবে বা অনলাইনে দেখার অপেক্ষায় থাকেন। তাতে বোঝা যায়, দর্শকের রুচি ও ভাবনার জায়গাটাও ঠিক রাখতে পারিনি। এটা কার ব্যর্থতা? এমন প্রশ্নে তৌকীর আহমেদ বলেন, এটা সময়ের সঙ্গে আমাদেরই ব্যর্থতা। তাদের দোষ দিয়ে কি হবে? তাদের তো বছরের পর বছর বস্তাপচা জিনিসগুলো দেখানো হয়েছে। এই ইন্ডাস্ট্রির মানুষরা তো এসব দেখিয়েছে। ‘ফাগুন হাওয়ায়’ ছবিটি সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি নিজে দেখেছেন। এ বিষয়ে তৌকীর আহমেদ বলেন, তিনি ছবিটি খুবই পছন্দ করেছেন। এ বিষয়টি আমার কাছে পজিটিভ মনে হয়েছে। যখন তিনি ছবি দেখার সম্মতি জ্ঞাপন করেন তখন সেখানে একটি পরিষ্কার বার্তা থাকে যে, রাষ্ট্র আসলে সুষ্ঠু সংস্কৃতিকে পৃষ্ঠপোষকতা করে বা করতে চায়। এই ধরনের গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন, এই চিন্তা কবে এসেছিল? জবাবে তৌকীর আহমেদ বলেন, টিটো রহমানের ‘বউ কথা কও’ গল্পটা আমি ২০০৬ সালের দিকে যখন পড়ি তখনই চিন্তাটা মাথায় আসে। গল্পটি ছিল দুই পাতার। সেটা থেকে রূপকভাবে চিত্রনাট্য সাজানো ও বিস্তৃত করার চিন্তা মাথায় আনি। গল্পে পাখির বিষয়টি ছিল। তবে আমি চলচ্চিত্রে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র হাস্য রসাত্মকভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। কারণ ৫২ মনে করে দর্শকদের কাছে বিরক্তিবোধ যেন না আসে। দর্শকরা যেন ছবিটি দেখে উপভোগ করতে পারে সেভাবে সহজ করে বিনোদনের মধ্য দিয়ে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। এ ছবিটি নির্মাণ করতে গিয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে কি- জানতে চাইলে এই নির্মাতা বলেন, এ ধরনের ছবি নির্মাণে অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকে। আমি ‘হালদা’ ছবির চেয়ে দ্বিগুণ বাজেটে এ ছবিটি নির্মাণ করতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছি। কারণ, ১৯৫২ সালের রেডিও থেকে শুরু করে পুলিশের পোশাকসহ বেশকিছু জিনিস সংগ্রহ করতে হয়েছে। তবে দর্শকরা ছবিটি দেখতে আসছেন এবং কাঁদছেন। তাতে বোঝা যায় প্রতিটি দর্শকের মধ্যে দেশপ্রেম বিষয়টি আছে। আমেরিকায় ২২শে ফেব্রুয়ারি থেকে মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। সামনে সুইডেন, ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়ায়ও এটি দর্শকরা দেখতে পাবেন। তার এ সময়ের অন্যান্য কাজ নিয়ে তৌকীর আহমেদ বলেন, অনুদানের জন্য ‘অদ্ভুত আঁধারে’ নামে একটি ছবি জমা দিয়েছি। এটা আমার নিজের লেখা। আর ভারতের হইচই অরজিনালের জন্য রওনক ও মমকে নিয়ে ‘বিরহ উত্তর’ নামে একটি ওয়েব সিরিজ বানিয়েছিলাম। ভালোবাসা দিবসে তা প্রচারের পর বেশ সাড়া পাচ্ছি।