চকবাজার ট্র্যাজেডিতে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ সদ্য বিধবা মা আলেয়া বেগম ও মেয়ে বিবি হাজেরা বেগমের সামনে। দুই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে শোকে হতবিহ্বল মা-মেয়ে। বৃহস্পতিবার রাতে ২ জনের লাশ সোনাগাজীর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে মা-মেয়ের গগনবিদারী আর্তনাতে যেন কেঁপে উঠে আকাশ বাতাস।
বুধবার রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয়েছে সোনাগাজী নবাবপুর ইউপির গোয়ালিয়া গ্রামের আবু মিয়ার ছেলে সুজাউল হক। একই সময় সুজাউল হকের বড় মেয়ে বিবি হাজেরার স্বামী ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া ইউনিয়নের নেয়ামতপুর গ্রামের ভূঞাবাড়ীর ইব্রাহিম নিহত হয়েছে। সুজাউল হক ৩ বছর ধরে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ওয়াহিদ ম্যানশনের দারোয়ান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ইব্রাহিম ওয়াহিদ ম্যানশনের রাস্তার অপর পাশে অবস্থিত রাজমহল হোটেলের সামনে পান-সিগারেটের দোকান করতো।
অগ্নিকাণ্ডে ইব্রাহিমের আত্মীয় একই গ্রামের আনোয়ার হোসেনও নিহত হয়েছেন। মেয়ের জামাই ইব্রাহিমের মাধ্যমে ঢাকাতে দারোয়ানের চাকরি নেয় শ্বশুর সুজাউল হক।
অগ্নিকাণ্ডে শ্বশুর ও জামাই লাশ হয়ে গ্রামে ফিরেন আর শুক্রবার বিকালে সুজাউল হককে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে ও ইব্রাহিমকে নিজ গ্রামে দাফন করা হয়। সুজাউল হকের মুখমণ্ডল চেনা গেলেও আগুনের লেলিহান শিখায় ইব্রাহিমের লাশ বিকৃত হয়ে গেছে।
সুজাউল হকের স্ত্রী আলেয়া বেগম, ছেলে নুরনবী, মেয়ে বিবি হাজেরা বেগম, বিবি কুলসুমা বেগম, বিবি আয়েশা বেগম, আফরিন সুলতানাকে নিয়ে পরিবার। ৭ বছর আগে পার্শ্ববর্তী ইব্রাহিমের কাছে বড় মেয়ে হাজেরাকে বিয়ে দেয়। ইব্রাহিমের মাইমুনা (৬) ও মাহি (৩) নামে দুই মেয়ে রয়েছে। পরিবারের অভাব দূর করতে ৩ বছর আগে সুজাউল হক মেয়ে জামাই ইব্রাহিমের মাধ্যমে ওয়াহিদ ম্যানশনে দারোয়ানের চাকরি নেয়। ইব্রাহিম গত ১০ বছর ধরে পুরাতন ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা মসজিদের সামনে রাজমহল হোটেলের পাশে পান-সিগারেটের দোকান দিয়ে ব্যবসা করছিল। একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া ও একই রুমে থাকতো শ্বশুর-জামাই।
সুজাউল হকের ছেলে নুরনবী বলেন, বুধবার রাতে টিভিতে চকবাজারে আগুন লেগেছে খবর দেখতে পেয়ে বাবা মোবাইলফোন ব্যবহার করতো না বলে দুলাভাই ইব্রাহিমের মোবাইলে ফোন দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর দুলাভাইয়ের সঙ্গে ব্যবসা করে আনোয়ারের নম্বরে ফোন দিলেও সেটি বন্ধ পাই।
তারপর ওয়াহিদ ম্যানশনের পাশে অপর দোকানিকে ফোন দিলে তার কাছে জানতে পারি আগুন লাগার কিছুক্ষণ আগে বাবাকে ওয়াহিদ ম্যানশনের গেটের ভেতর ঝাড়ু দিতে দেখেছে। আগুন লাগার পর থেকে বাবার সন্ধান পাচ্ছে না। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই দুলাভাই ইব্রাহিম ও আনোয়ার বাঁচার জন্য দোকানের ভেতরে ঢুকেছে। তারপর বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের লাশের সন্ধান পাই।
ফেনী-৩ (সোনাগাজী-দাগনভূঞা) আসনের সংসদ সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী শনিবার সুজাউল হকের বাড়িতে গিয়ে সান্ত্বনা প্রদান করেন এবং তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ১০ হাজার টাকা অনুদান দেন।