× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

এমন ভয়াল দৃশ্য আর দেখতে চান না বাসিন্দারা

শেষের পাতা

মারুফ কিবরিয়া
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, রবিবার

রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার এরই মধ্যে চারদিন কেটে গেছে। এই ঘটনার পর থেকে এলাকার বাসিন্দারা একদিকে যেমন শোকে স্তব্ধ, তেমনি আতঙ্কও ভর করেছে তাদের মনে। প্রতিনিয়ত চোখে ভাসছে সেই ভয়াবহ দৃশ্য। এখনো কারো কারো বিশ্বাসই করতে কষ্ট হচ্ছে, হঠাৎ বিস্ফোরণে এতগুলো প্রাণ ঝরে যাবে। তবুও এসব মেনেই সেখানে থাকতে হবে দীর্ঘদিন থেকে বাস করে আসা মানুষগুলোকে। কিন্তু থাকার জন্য জায়গাটিও করতে হবে নিরাপদ। চুড়িহাট্টা আর নিমতলী ট্র্যাজেডির মতো এমন ভয়াল দৃশ্য আর দেখতে চান না তারা। তারা চান না আর কোনো প্রতিবেশী যেন দগ্ধ না হন, কেউ যেন আর অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে না পড়েন।


গতকাল চকবাজার ও তার আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরের পর বছর কেমিক্যালের গুদাম থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হন সাধারণ মানুষ। প্রতিনিয়ত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয় তাদের। অনেক আবাসিক ভবনে গুদাম রয়েছে সেটা জানতেও পারেন না বাসিন্দারা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এসব নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান হলেও মোটাদাগে কোনো প্রতিকার নেই। অপসারণ করা হয় না ওইসব ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যালের গুদাম। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তখনই টনক নড়ে সবার। আবার কিছুদিন পর স্বাভাবিক হয়ে যায় বলে জানান বাসিন্দারা। চকবাজারের আজগর লেনের আবদুস সালাম নামের এক বাসিন্দা বলেন, বড় হওয়ার পর থেকে এখানে দেখে আসছি অনেক বাড়িতে বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহার করার কেমিক্যালের গুদাম। এগুলো এমনিতে কোনো ক্ষতি করছে না। কিন্তু আগুন লাগলে এই কেমিক্যাল দ্রুত ছড়াতে সাহায্য করে। এসবের কারণে আমরা নিরাপদে থাকতে পারি না।

অনেক বাড়ির মালিক আছে যারা বিদেশে থাকেন। মানুষকে বাসা ভাড়া দিলে গ্যাস বিল পানির বিল এটা ওটার খরচ করতে হবে। তাই গুদাম ভাড়া দিয়ে রাখছেন। কিন্তু ওই বিল্ডিংয়ের পাশে যে আমরা থাকি সেটা নিয়ে কারো চিন্তা হয় না। এই এলাকার বাসিন্দা হিসেবে আমি চাই এখান থেকে যত দ্রুত সম্ভব বৈধ-অবৈধ সব কারখানা, গুদাম তুলে নেয়া হোক। এই রকম মৃত্যু আর দেখতে ভালো লাগে না। একই এলাকার শরিফুল ইসলাম জানান, এটা ব্যবসার জায়গা। এখানে আশপাশে গুদাম থাকা অস্বাভাবিক না। কিন্তু আমাদের নিরাপত্তাও তো দিতে হবে। এমন কোনো কিছুর কারখানা বা গুদাম রাখা উচিত না যা আমাদের ক্ষতি হইতে পারে। নাম প্রকাশ না করে উর্দু রোডের এক বাসিন্দা বলেন, আমার এখানেই জন্ম। এখানকার কোথায় কি আছে খুব ভালো করে জানি। বড় বড় বিল্ডিংগুলোতে মানুষ থাকে ৩০ ভাগ। বাকিটা স্প্রের কারখানা, সাবানের কেমিক্যালের গুদাম। এগুলোর জন্য ভয়ে থাকি। চুড়িহাট্টায় যে আগুন লাগলো সেটা এত বেশি ছড়াতো না, যদি স্প্রের গুদাম না থাকতো। চুড়িহাট্টার জামিল নামের এক বাসিন্দা বলেন, আগুনের ঘটনা তো ঘটবেই। তাই বলে এভাবে ক্ষতি হবে? আমরা কত অসহায় সেদিন আগুন লাগার পর বুঝতে পারছি। প্রশাসন এসব নিয়ে একদম ভাবে না। একটা বড় ঘটনা ঘটলে কয়দিন দৌড়াদৌড়ি করে।

পরে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হয়ে গেলে আর কারো আওয়াজ পাওয়া যায় না। সব কারখানা গুদামের কাজ নিয়মিত চলতে থাকে। এবার এই এলাকা থেকে সত্যি সত্যিই এসব সরানো উচিত। আমরা নিরুপায়। এখানে মানুষ থাকতে পারে না। নিমতলীর পর এই চুড়িহাট্টায় এতবড় ঘটনা ঘটছে, এরপরও যদি এসব কেমিক্যালের গুদাম থাকে তাহলে আমাদের বারবার মরতে হবে। মো. সালাউদ্দিন নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, আমি এখানে ২৮ বছর ধরে চালের ব্যবসা করি। ওই দিন রাতে মাত্র ১৫ সেকেন্ডের জন্য বেঁচে গেছি। আর একটু হলেই শেষ হয়ে যেতাম। কতগুলো মানুষের প্রাণ গেল। আমাদের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। চুড়িহাট্টার পাশেই রয়েছে ওয়াটার ওয়ার্কস রোড। এই এলাকাও অনেকটা ঘনবসতিপূর্ণ। সঙ্গে রয়েছে হরেক রকমের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। এখানকার বাসিন্দাদের মাঝেও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। ওই এলাকার সাইফুদ্দিন নামের এক প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবসায়ী বলেন, আমি নিজেও ব্যবসায়ী। কিন্তু এখানকার মানুষের কথা চিন্তা করতে হবে।

এমন কিছু গুদামে রাখবো না যা এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষতির কারণ হতে পারে। আশেপাশের কয়েক গলি গেলেই দেখবেন বাড়িগুলোতে মানুষের পাশাপাশি কেমিক্যালের গুদাম। কিন্তু এগুলো কত ভয়ঙ্কর হতে পারে সেটা তো আগেই কয়েকবার দেখেছে সবাই। সচেতন কেউ হয় না। মানুষেরও ভয় কাটবে না। ওয়াটার ওয়ার্কস রোডের পাশের রহমতগঞ্জ এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তারাও প্রতিনিয়ত আতঙ্কে ভুগছেন। সাজ্জাদুল হক নামের একজন বলেন, আমি ২৫ বছর ধরে এখানে আছি। বাড়ি নোয়াখালীতে। এই এলাকায় গোপনে অনেক বাড়িতে কেমিক্যালের অবৈধ গুদাম আছে। এগুলো খুব ভয়ঙ্কর। একবার আগুন লাগলে কেউ রেহাই পাবে না। এত নিরাপত্তাহীনতায় থাকি যা বলার বাইরে।

কিন্তু প্রভাবশালী মানুষদের জন্য কখনো কিছু বলতে গিয়েও পারি না। পুুরান ঢাকার মানুষের জীবনযাত্রা নিরাপদ করতে এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সেখানকার কেমিক্যালের গুদাম অপসারণ শুরু হয়েছে। গতকালই ওয়াহেদ ম্যানশনের বেজমেন্টও অক্ষত থেকে যাওয়া একটি গুদাম থেকে কেমিক্যাল অপসারণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এ ছাড়া অতি দ্রুত পুরান ঢাকায় স্থাপিত সব ধরনের গুদাম অপসারণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন মেয়র সাঈদ খোকন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর