পাঁচ মাসের অবোধ শিশুকে কোলে নিয়ে হন্যে হয়ে স্বামী নুরুজ্জামানকে খুঁজছেন স্ত্রী শিরীন। পুরান ঢাকার অগ্নিকাণ্ডের কিছুক্ষণ আগে শিরীন বেগমকে বলেছিলেন, ‘আমি চকবাজারে জ্যামে আছি। অনেক শব্দ। কিছুই বুঝতে পারছি না। পরে ফোন দাও। আমার ফিরতে দেরি হবে।’ কিন্তু নুরুজ্জামানের আর ফেরা হয়নি।
কী ঘটেছে তার ভাগ্যে তাও জানেন না কেউ। রাত ১১টার দিকে আবার কল দিলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বুধবার পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টার আগুনে পুড়ে মারা গেছে অনেক মানুষ। সেই আগুনে কি দগ্ধ হয়েছেন নুরুজ্জামান, তিনি কি বেঁচে আছেন? এরকম অনেক প্রশ্ন শিরীনের। বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরছেন। না, কোথাও নেই নুরুজ্জামান। শিরীন বলেন, বার্ন ইউনিটে গিয়ে খুঁজেছি পাইনি। মর্গে গিয়ে অনেক লাশ দেখেছি কিন্তু লাশগুলো চেনাই যায় না। নাক, মুখ কিছুই বুঝা যায় না।
গতকাল ঢামেক হাসপাতালের মর্গে গিয়েছিলেন শিরীন। তার কোলে ছিল পাঁচ মাস বয়সী শিশু আবুল হোসেন। শিরীনের কান্না দেখে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে শিশুটি। শিরীন জানান, জেলা প্রশাসক অফিসে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ডিএনএ নমুনা রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। গতকাল তার রক্ত ও শিশুর লালা রেখেছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা।
শিশু সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার দেলপাড়া থাকতেন নুরুজ্জামান। তিনি ময়মনসিংহের তারাকান্দার বোয়ালকান্দির সোহরাব হোসেনের একমাত্র ছেলে। ঢাকায় রিকশা চালাতেন। ঘটনার দিনও সকালে রিকশা নিয়ে বের হয়েছিলেন। প্রতিদিনের মতো রাতে বাসায় ফিরলেও সে রাতে আর বাসায় ফেরা হয়নি নুরুজ্জামানের।