আশরাফুল হক। ছিলেন বাংলাদেশ ডেন্টাল মেডিকেলের শিক্ষার্থী। তার আরেক বন্ধু ইমতিয়াজ ইমরুল রাশু। রাশু চকবাজারে চুড়িহাট্টার নন্দ কুমার দত্ত রোডে মদিনা মেডিকেল সেন্টার অ্যান্ড ডেন্টাল কেয়ারে করতেন প্রশিক্ষণ। রাশু অনেকবার আশরাফুলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ক্লিনিকে আসার জন্য। কিন্তু সময় করে উঠতে পারছিলেন না।
আশরাফুল অবশেষে সময় করে উঠলেন। ঠিক করলেন ২০শে ফেব্রুয়ারি যাবেন বন্ধুর ক্লিনিকে। বিকাল ৪টার দিকে বের হন বাড়ি থেকে।
বের হবার সময় মাকে বলে যান, মা আজ ফিরতে দেরি হবে।
সেদিন রাতেই ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। আশরাফুলের পরিবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা জানতে পারেন টেলিভিশনের মাধ্যমে। এরপর আশরাফুলকে ফোন দেয়া হলে বন্ধ পান তার মোবাইলটি। এমনটাই বলছিলেন আশরাফুলের ভাই ফকরুল হক সুজন। তিনি আরো বলেন, সঙ্গে সঙ্গে রাতেই ছুটে যান ঘটনাস্থলে। সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অসুস্থদের তালিকা খোঁজ করেন। সেখানেও খুঁজে না পেয়ে যান হাসপাতালের মর্গে।
মর্গে থরে থরে সাজানো লাশ। অনেক পোড়া লাশের মাঝে নিজের ভাইয়ের লাশ খুঁজে পান। আশরাফুল মায়ের কোলেই ফিরলেন। মাকে বলা কথামতো দেরি করেই ফিরলেন। তবে লাশ হয়ে।
২৫শে ফেব্রুয়ারি সোমবার থেকে শুরু আশরাফুলদের ফাইনাল পরীক্ষা। কিন্তু পরীক্ষায় আর অংশ নেয়া হলো না। তার আগে গত বৃহস্পতিবার নিজ কলেজ প্রাঙ্গণে হলো জানাজা। এরপর নিজ গ্রামে পরদিন শুক্রবার হয় দ্বিতীয় জানাজা। জানাজার পর সম্পন্ন হয় আশরাফুলের দাফন। তাদের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ফরদাবাদ গ্রামে। সেখানেই হয় আশরাফুলের শেষ ঠিকানা।
রাজধানীতে আশরাফুলের পরিবার থাকেন মগবাজারে। ৫ ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন তিনি। বাবা জামশেদ মিয়া অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। বাবার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যেই ভর্তি হয়েছিলেন মেডিকেলে। বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে ডাক্তার হয়ে নিজ গ্রাম ফরদাবাদে দরিদ্রদের মাঝে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেবেন। দাঁড়াবেন গরিব-দুঃখীদের পাশে। সেই স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল বাবার। আর বাবার চোখে স্বপ্নটাকে লালন করা অশরাফুল বিদায় নিলেন অকালেই।
চকবাজারের ভয়াবহ আগুনের লেলিহান শিখা সেদিন আশরাফুলের সঙ্গে কেড়ে নিয়েছিল তার বন্ধু রাশুর জীবনও। আর ১১ মাস বয়সী যমজ দুই সন্তানের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী কাউসার আহমেদ ও এক রোগী এনামুলসহ অনেক মানুষের জীবন। জানা যায়, আগুনের হাত থেকে রক্ষা পেতে ক্লিনিকের সাটার ফেলে দেন তারা। এ সময় ধুয়ার কারণে অক্সিজেন ঘাটতিতে মারা যান তারা।