× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

জাতীয় শোক পালনের ঘোষণা আসছে /বার্ন ইউনিটে প্রধানমন্ত্রী

প্রথম পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, রবিবার

চকবাজার ট্র্যাজেডি পুরান ঢাকার রাসায়নিক গুদাম মালিকদের জন্য একটি শিক্ষণীয় ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এবার নিশ্চয়ই এসব গুদাম অন্যত্র সরিয়ে নিতে তারা আর আপত্তি করবেন না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আশাকরি এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদামগুলো সরিয়ে নেয়ার যে দাবি উঠেছে তাতে আর মালিক পক্ষ আপত্তি করবেন না।

চকবাজার বা নিমতলীর মতো ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি ঘটতে না পারে সেজন্য সচেতন থাকার জন্যও তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।  গতকাল সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে আহতদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বারবার এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে তার জন্য সবাইকে সচেতন থাকার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটিকে অত্যন্ত দুঃখজনক আখ্যায়িত করে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, আর যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে রোববারে অফিস খুললে আমরা একটি শোক দিবসেরও ঘোষণা দেবো। তিনি এ সময় দমকল কর্মী এবং পুলিশ ও র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং চিকিৎসকদের সচেতনতার এবং রাত-দিন অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তাদের পাশাপাশি তিনি নিজেও নির্ঘুম থেকে সেদিন সারারাত আগুন নিভানোর বিষয়টি তদারকি করেছেন এবং যে সমস্ত রোগী মেডিকেলে এসেছে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের চিকিৎসার সব রকম ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তিনি নিহতদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে বলেন, ইতিমধ্যে অনেকের লাশ শনাক্ত হয়েছে এবং তাদের স্বজনরা নিয়ে গেছেন। কয়েকজন এখনো যে শনাক্ত হতে পারে নি তাদের ডিএনএ টেস্ট করে স্বজনদের কাছে ফেরত দেয়া হবে- সেই প্রক্রিয়াও আমরা শুরু করেছি। প্রধানমন্ত্রী এ সময় পুরান ঢাকায় রাসায়নিকের গুদাম রেখে দেয়ার বিষয়ে তার ক্ষোভ ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, ইতিপূর্বে নিমতলীতে যখন আগুন লাগলো সে সময় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এখান থেকে যত কেমিক্যাল জাতীয় পদার্থ রয়েছে তার সব সরানো হবে। সেজন্য কেরানীগঞ্জে একটি জায়গাও আমরা ঠিক করলাম, উদ্যোগটা নিলাম এবং সকলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনাও করা হলো-এখানকার কেমিক্যালের যত গুদাম আছে (বৈধ বা অবৈধ) সেগুলো কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর করা হবে। যাতে করে এখানে আর এ ধরনের ঘটনা ঘটতে না পারে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় তাদের অনেকেই (মালিকপক্ষ) এতে রাজি হন নাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেরানীগঞ্জে সরকার বহুতল ভবন করে আধুনিক গোডাউন তৈরি করে দিতে চাচ্ছিলো। যাতে করে এগুলো সুরক্ষিত থাকে এবং কোনোরকম দুর্ঘটনা ঘটতে না পারে। আবার ঘটলেও যেন একটা ব্যবস্থা নেয়া যায়। সেভাবেই আধুনিক একটি পদ্ধতিতে এসব সরানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু যেহেতু মালিকরা রাজি হন নাই তাই এটা আর কার্যকর করা যায়নি। এটাই হচ্ছে সব থেকে দুর্ভাগ্যের বিষয়। তিনি বলেন, আশা করি এই দুর্ঘটনার পর যারা তখন এই আপত্তি জানিয়েছিলেন তারা এখন আর সেই আপত্তি করবে না।

পুরান ঢাকার সরু অলিগলির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই রাস্তাগুলোকে আমাদের নতুনভাবে গড়ে তুলতে হবে। যাতে করে দমকলবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় ঢাকার ধোলাইখাল, শান্তিনগর খাল, সেগুনবাগিচা খাল থেকে শুরু করে ঢাকার অনেক খাল এবং জলাধারগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, পুকুর- খাল এগুলো যেন আর বন্ধ করা না হয়। এগুলো যেন রক্ষা পায়। কারণ এ ধরনের আগুন লাগলে পানির অভাবটা যেন আর না থাকে। সে বিষয়টি খেয়াল করেই সংশ্লিষ্ট সকলে কাজ করবেন। উৎসুক জনতার জনসমাগম এবং ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট চ্যানেলে লাইভ প্রচার করতে গিয়ে উৎসুক সাংবাদিকদের নানা ধরনের প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের কাজের ব্যাঘাত সৃষ্টি করে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই উৎসুকের কারণে যারা আগুন নেভানোর কাজে সম্পৃক্ত থাকেন তাদের কাজটি বাধাগ্রস্ত হয়। আমি জানি না এই সময়টা কোনো প্রশ্ন করার সময় কিনা বা সেখান থেকে একটা উত্তর কীভাবে আশা করা যায়?’ টেলিভিশন সাংবাদিক বা নিউজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের কর্তা ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে এই প্রশ্ন উত্থাপন করেন তিনি। এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে সকলকেই মূল কাজ আগুন নেভানোর বিষয়ে আগে সবাইকে দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভদ্রলোক (আগুন নেভানোয় ব্যস্ত সংশ্লিষ্ট দমকল কর্মী) কাজে যাবেন তাকে ধরে রেখে একের পর এক প্রশ্ন, কোনো কোনো চ্যানেল এই কাজটি করেছেন। ভবিষ্যতে দয়া করে সেটা না করে সুস্থভাবে তারা যেন তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে সেই ব্যবস্থাটা সকলে নেবেন। সেটাই আমরা চাই। তিনি এ সময় দায়িত্ব পালনের নামে মেডিকেলে রোগীর কাছেও মিডিয়া কর্মীদের ভিড় করার বিষয়টি নিয়ে বলেন, এ সমস্ত রোগীর ক্ষেত্রে ৪৮ ঘণ্টা বা ৭২ ঘণ্টা না পার হলে সেসব রোগীর কাছে ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া, তাদের দেখানো বা তাদের ছবি তোলা- এসব বন্ধ করতে হবে। আমি দেশবাসীকেও বলবো এই বিষয়গুলোর দিকে একটু বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। এ সময় নতুন রাস্তাঘাট, স্থাপনাসহ বিভিন্ন ভবন নির্মাণের সময় সে সব জায়গায় যেন পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা মজুত থাকে সেদিকে দৃষ্টি দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা আসছে
চকবাজার ট্র্যাজেডি স্মরণে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা আসছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী মন্ত্রিসভা বৈঠকেই রাষ্ট্রীয় শোক পালনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। রাষ্ট্রীয় শোকের দিনে সারা দেশে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার রাতে চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ৭০ জন আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন মহল জাতীয় শোক পালনের দাবি জানায়। ভয়াবহ আগুন লাগায় হতাহতদের নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব, সৌদি বাদশাহ এবং ক্রাউন প্রিন্সসহ বিভিন্ন দেশ শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। এদিকে চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধদের দেখতে এবং তাদের চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজখবর নিতে গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে যান প্রধানমন্ত্রী। বার্ন ইউনিট পরিদর্শন শেষে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণার বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অফিস খোলার পর মন্ত্রিসভায় আলোচনা করে চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর