× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

কষ্টার্জিত এ জয় কবে উদ্‌যাপন করবেন আসাদ?

বিশ্বজমিন

অনিম আরাফাত
(৫ বছর আগে) মার্চ ১৭, ২০১৯, রবিবার, ৯:২৭ পূর্বাহ্ন

সিরিয়া যুদ্ধের গত ৮ বছরে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ তার সকল শত্রুকেই পরাজিত করেছেন। রাশিয়া ও ইরান অকৃত্রিম বন্ধুত্বের পরিচয় দিয়ে আসাদকে শক্তপোক্তভাবে টিকিয়ে রেখেছে। সিরিয়া এখন তার নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। কিন্তু এরপরেও তিনি এ অর্জন উদযাপন করছেন না। গত মাসে তিনি তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের ভুলভাবে চিন্তা করলে চলবে না। আমরা মনে করছি যে, গত বছর যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে। শুধু নাগরিকরাই নয়, সরকারি কর্মকর্তারাও তাই ভাবছেন। এরপরই আসাদ বলেন, এই ধরনের সুন্দর চিন্তা আমাদের মাথায় আসছে, মনে হচ্ছে জয় তো পেয়েছিই! কিন্তু না, যুদ্ধ এখনো বাকি আছে।
এখনো সিরিয়ার কিছু অংশে বিদেশি সেনারা অবস্থান করছে, তাদের হটাতে হবে। এর আগে আসাদ এই বাহিনীকে সিরিয়া থেকে হটানোকে যুদ্ধের অংশ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

সিরিয়ার শহরগুলোতে গোলাগুলি হয়েছে সেই দিনগুলো এক বছরেরও অধিক সময় আগেই চলে গেছে। সিরিয়ানরা এখন স্বাধীনভাবে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। রাস্তাঘাটে কাজে বেরুচ্ছেন নারী-পুরুষ। সিরিয়ার চিরচেনা উদার পরিবেশ ফিরে আসছে। কিন্তু এর মধ্যেও পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর নিষেধাজ্ঞায় নানা সমস্যায় পড়ছে দামেস্ক। দেশটির অর্থনীতি ধ্বংসের এ চেষ্টা পুরোপুরি সফল না হলেও এর প্রভাব এড়াতে পারছেন না সিরিয়ানরা।

যুদ্ধে বাশার আল-আসাদের সব থেকে কাছের বন্ধু হিসেবে সব সময় পাশে ছিল ইরান ও রাশিয়া। দেশ দুটির সেনাবাহিনী নিজের রক্ত দিয়ে আসাদকে রক্ষা করেছে। প্রয়োজনে অর্থ সহযোগিতা করেছে। ধ্বংস হওয়া শহরগুলো পুনর্নির্মানে সহযোগিতা করছে। অপরদিকে আসাদকে সরাতে ব্যর্থ হওয়া পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো সিরিয়ার পাশে দাঁড়াবে না সেটাই স্বাভাবিক। আসাদের দৃষ্টিও এখন বাইরের দেশের সেনাদের সিরিয়া থেকে হটানো। আর এ জন্য তিনি আবারো পাশে পাচ্ছেন রাশিয়াকে।

রুশ সেনাদের সহযোগিতায় ২০১৮ সালে সিরিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ বিজয় পেয়েছেন বাশার আল-আসাদ। দামেস্কের কাছেই অবস্থিত গৌতা নিয়ন্ত্রণে এনেছেন। এর আগে কুনেইত্রা পুনরুদ্ধারও তার গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। কিন্তু এখনো উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে রয়েছে তুরস্কের সেনারা। আবার উত্তর-পূর্বে রয়েছে মার্কিন সেনারা। এটিই আসাদের এখন প্রধান মাথা ব্যথার কারণ। গত বছরের ডিসেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রামপ ঘোষণা দিয়েছিলেন যে তিনি সিরিয়ায় অবস্থিত সকল মার্কিন সেনাদের দেশে ফিরিয়ে আনবেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও একে স্বাগত জানিয়েছেন। ফলে আসাদের সামনে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল কুর্দি নিয়ন্ত্রিত এলাকা পুনরুদ্ধারের। কিন্তু পরবর্তীতে কিছু মার্কিন সেনা অবস্থান করবে বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্র। এতে করে এ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নিতে চ্যালেঞ্জ থেকেই যাচ্ছে আসাদের সামনে।
এদিকে আরব রাষ্ট্রগুলো দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়ার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে। সমপ্রতি কিছু রাষ্ট্র পুনরায় সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করলে তাদের পড়তে হয়েছে মার্কিন রোষানলে। ফলে সিরিয়ার আরব লীগে ফেরার যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল তাতে আবারো ভাটা পড়েছে।

সত্যিই বাশার আল-আসাদের যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। তার ক্ষমতা এখন আর কোনো ঝুঁকির মধ্যে নেই। তবে এখনো তার সামনে রয়েছে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাসহ অসংখ্য চ্যালেঞ্জ।
বাশার আল-আসাদকে প্রধানত ৪টি যুদ্ধ করতে হবে। প্রথমটি হলো সামরিক সংঘাত, যেটি সবাই জানে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার। তৃতীয়টি হচ্ছে অন্যান্য আরব রাষ্ট্রগুলোর মতো সিরিয়ায় থাকা প্রচণ্ড দুর্নীতি। আর সর্বশেষ হচ্ছে তার বিরুদ্ধে চলা বিশ্বব্যাপী নানা প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে লড়াই করা। আসাদ ভালো করেই জানেন, এরকম একটি যুদ্ধের মধ্যে তার দেশের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে সেখান থেকে পশ্চিমা দেশগুলো তাকে সহজে বের হতে দেবে না। আসাদ এ বিষয়ে বলেন, আমরা যদিও জয়লাভ করেছি কিন্তু আগ্রাসী রাষ্ট্রগুলো নিত্যনতুন কৌশল গ্রহণ করবে। তাই এখনই যুদ্ধের জয় পরাজয় নির্ধারণের সময় আসেনি। যেদিন সত্যিকার অর্থেই এসব যুদ্ধে জয়ী হবেন, সেদিনই এ জয় উদযাপন করবেন বাশার আল-আসাদ।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর