× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ঘৃণা দিয়ে ঘৃণার বিরুদ্ধে লড়াই নয়

এক্সক্লুসিভ

অনিম আরাফাত
১৮ মার্চ ২০১৯, সোমবার

ব্রেনটন টেরেন্ট নামের এক সন্ত্রাসী নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে কমপক্ষে ৫০ জনকে। স্বঘোষিত শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী এই টেরেন্ট ঘৃণা করতো মুসলিমদের, অভিবাসীদের। তাকে যখন আদালতে তোলা হলো তখনও সে হাসছে। এ হামলার জন্য তার কোনো অনুশোচনা নেই। কারণ তার বিশ্বাসটিই ছিল এমন। আমরা এর আগেও দেখেছি কোনো একজনের ভুল বিশ্বাসের কারণে শেষ হয়ে গেছে হাজার হাজার প্রাণ।
 যে সন্ত্রাসী ক্রাইস্টচার্চে হামলা চালিয়ে নিরীহ মুসলমানদের হত্যা করেছে আর আইএসের যে সদস্য ইউরোপের রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে নিরীহ শিশুকে হত্যা করেছে তাদের মধ্যে কার্যত কোনো পার্থক্য নেই। দুজনই কট্টরপন্থি এবং তারা মনে করে তারা যাদের হত্যা করেছে এটাই তাদের প্রাপ্য।
ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলাকারী নিজের কর্মকাণ্ডকে ইউরোপে ইসলামপন্থি জঙ্গিদের হামলার প্রতিশোধ হিসেবে উপস্থাপন করেছে। অথচ ইউরোপে আইএস জঙ্গিরা যেমন কিছু নিরীহ মানুষকেই হত্যা করেছে, সে নিজেও নামাজরত কিছু নিরীহ মুসলমানকে হত্যা করলো। এরপর যদি এই হামলায় স্বজন হারানো কেউ প্রতিশোধ নিতে আরো কয়েকজন নিরীহ মানুষ হত্যা করতে শুরু করে তাহলে এই পৃথিবীর অবস্থাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?
ঘৃণা দিয়ে ঘৃণার বিরুদ্ধে জয়ী হওয়া যায় না। এমনটাই বলছেন ম্যানচেস্টার বোমা হামলায় বেঁচে যাওয়া একজন রুথ মুরেল। সেখানে এক ধর্মান্ধ মুসলিম বোমা হামলা চালিয়ে হত্যা করেছিল কমপক্ষে ২৩ জনকে। সেই হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া রুথ ক্রাইস্টচার্চে মুসলিমদের ওপর হামলার পর বলেছেন, এ ঘটনা শুনে আমি বারবার সেই ম্যানচেস্টার বোমা হামলার সময়ে ফিরে যাচ্ছি। তিনি এই দুটি হামলাকেই একইভাবে দেখেন। ম্যানচেস্টার হামলার পর রুথ মুরেল সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরব ছিলেন সবসময়। ক্রাইস্টচার্চে হামলার পর তিনি টেরেন্টসহ পৃথিবীর সকল উগ্রবাদীদের জন্য একটি বার্তা দিয়েছেন। এতে তিনি বলেছেন, ‘তোমরা কখনো জয়ী হতে পারবে না।’ ওই হামলায় নিহত তিন বছরের শিশু মুসাদ ইব্রাহিমের বিষয়ে তিনি বলেন, নিরীহ শিশু হত্যা করা অসভ্যতা। ইব্রাহিমের জন্য হলেও আমাদেরকে ওই উগ্রদের কখনো জয়ী হতে দেয়া যাবে না।
তাই কোনো নির্দিষ্ট আদর্শ নয়, লড়াই করতে হবে সকল উগ্রবাদের বিরুদ্ধে। টেরেন্ট হামলার সময় যে বন্দুক ব্যবহার করেছিল তাতে লেখা ছিল, ‘রদারহ্যামে নির্যাতিত শিশুদের জন্য’। স্যামি উডহাউজ একজন যিনি রদারহ্যামে পাকিস্তানি যৌন নিপীড়কদের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। ক্রাইস্টচার্চে তারপক্ষে হামলার পরেও তিনি হামলাকারীর প্রতি ঘৃণা দেখাতে পিছপা হননি। এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, এই হত্যাযজ্ঞ আমার নামে হতে পারে না, এটি একটি পৈশাচিক কাজ। এ ছাড়া ওয়েস্টমিনস্টারে জিহাদি হামলার শিকার হওয়া কেইথ চ্যাপম্যানও মুসলিমদের বিরুদ্ধে হওয়া হামলার বিরোধিতা করেন। তিনি সকল সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে এক হওয়ার আহ্বান জানান বিশ্ববাসীর প্রতি।
মানুষের প্রকৃত ধর্ম হচ্ছে মানবিকতা। যার মধ্যে মানবিকতাই নেই সে মানুষ কি করে হয়? সে পশুর সমতুল্য। তাই বিশ্বজুড়ে যারা ধর্মের নামে অমানবিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত তাদের সকলের বিরুদ্ধে সবাইকে এক হতে হবে। তাদের কর্মকাণ্ডের কোনো ব্যাখ্যা হতে পারে না। সে কৃষ্ণাঙ্গ হোক, শ্বেতাঙ্গ হোক, মুসলমান হোক বা খ্রিস্টান হোক, একজন সন্ত্রাসী সকলের কাছেই ঘৃণ্য। আমরা যদি আজ সকল প্রকার উগ্রবাদের বিরুদ্ধে এক হতে না পারি তাহলে অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে এ সভ্যতা। এ দেশে যখন লেখক-ব্লগারদের ওপর হামলা হয়েছিল তখনও দেখা গেছে অসংখ্য মানুষ এই উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডকে সমর্থন দিয়েছিল। একজন মানবগুণসম্পন্ন মানুষ সব ধরনের উগ্রতাকে ঘৃণা করবে। তাই যারা কোনো ধরনের উগ্রবাদকে সমর্থন করে তাদেরকেও বর্জন করতে হবে। আর আমরা যদি সকল উগ্রবাদীর বিরুদ্ধে সে যে মতাদর্শেরই হোক না কেনো এক হতে না পারি তাহলে এ ধরনের বহু টুইনটাওয়ার হামলা, ক্রাইস্টচার্চ ট্র্যাজেডি কিংবা ব্লগার হত্যার মতো উগ্রবাদী কর্মকাণ্ড চলতেই থাকবে। একইসঙ্গে, আমরা যে বৈষম্যহীন মানবিক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি তা ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর