জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ৪২৬ নং কক্ষে জন্ম নেয়া শিশুটি মারা গেছে। ওই কক্ষের এক আবাসিক ছাত্রী শিশুটি প্রসব করে ট্রাংকে রেখে নিজে হাসপাতালে চলে যান। ট্রাংক থেকে কান্নার শব্দ এলে তালা ভেঙে নবজাতককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। রাত সাড়ে
১০টার দিকে হাসপাতালে নবজাতকের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে নবজাতকের মা আশঙ্কামুক্ত বলে জানা গেছে।
সূত্রমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের মাস্টার্সের (৪৩ ব্যাচ) এক ছাত্রের সঙ্গে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল ঐ ছাত্রীর। বাচ্চা প্রসবের পর ওই ছাত্রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তবে শনিবার রাতে সে তার বন্ধুদেরকে অন্য ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার দরুন ওই ছাত্রীর সঙ্গে তার ৬/৭ মাস আগে ব্রেকআপ হয় বলে জানায়।
রোববার সকালে ওই ছাত্র ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জানায়, তারা বিবাহিত।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে ওই ছাত্রী নবজাতক প্রসব করে কাউকে না জানিয়ে নিজের ট্রাংকে লুকিয়ে রাখেন। পরে ট্রাংক থেকে বাচ্চার কান্নার শব্দ আসলে সে রুম থেকে বের হয়ে হাসপাতালে চলে যান। পরে হলের গার্ডরা তালা ভেঙে নবজাতক শিশুকে উদ্ধার করে। ছাত্রীরা বিষয়টি হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে জানান। চিকিৎসাকেন্দ্রের নার্স সিকগার্লদের সহায়তায় বাচ্চাটিকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে নেয়া হয়। পরে শিশুটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে এনাম মেডিকেলে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের দায়িত্বরত চিকিৎসক আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ বলেন, ‘বাচ্চাকে যখন মেডিকেলে নিয়ে আসা হয় তখন তার শরীর সম্পূর্ণ নীল রং ধারণ করেছিল। পরে তাকে অক্সিজেন দিয়ে স্বাভাবিক করে এনাম মেডিকেলে পাঠানো হয়।’
ওই হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মুজিবুর রহমান জানান, ‘ঘটনা শুনে সঙ্গে সঙ্গে হলে যাই। রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাচ্চাটি মারা যায়। তবে বাচ্চার মা ওই ছাত্রী আশঙ্কামুক্ত।’
তিনি জানান, ‘তথ্য গোপন করে মেয়েটি অপরাধ করেছে। এই ঘটনা তদন্তের জন্য হলের সহকারী আবাসিক শিক্ষক লাবিবা খাতুন তানিয়াকে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে এলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ওই ছাত্রীর বাবা-মা এসে তার চিকিৎসার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে মৃত নবজাতক বাচ্চাটির দাফনের ব্যবস্থা করার দায়িত্বও নিয়েছে।
এ নিয়ে সারাদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা সমালোচনা চলতে থাকে। অনেকে এটাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করছেন।