× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

খাদ্যমন্ত্রীর জামাতার রহস্যজনক মৃত্যু নির্যাতনের অভিযোগ

শেষের পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
১৮ মার্চ ২০১৯, সোমবার

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজন কর্মকারের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। শনিবার রাত ৪টার দিকে ইন্দিরা রোডের বাসা থেকে স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ৩৯ বছর বয়সী এই চিকিৎসক  খাদ্যমন্ত্রী সাধন কুমার মজুমদারের জামাতা। তার স্ত্রী কৃষ্ণা মজুমদারও একই হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। ঘটনার পর শারীরিক অসুস্থতার কারণে মন্ত্রী ও তার মেয়ে চিকিৎসার জন্য স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে, এই চিকিৎসকের মৃত্যুর খবর জানাজানি হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তার পরিবার ও সহকর্মীদের অভিযোগ এই মৃত্যু কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
আর পুলিশ বলছে, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা যাবে।

নিহত চিকিৎসক রাজনের বাড়ি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার এখলাছপুর গ্রামে। তিনি ওই এলাকায় সুনিল কর্মকারের ছেলে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে ডেন্টাল সার্জারিতে পড়ালেখা শেষ করে তিনি পিজি হাসপাতালে কর্মজীবন শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি গ্রিন রোডের গ্রিন লাইফ হাসপাতালেও সময় দিতেন। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারে মেয়ে কৃষ্ণা মজুমদারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এরপর থেকে স্ত্রীকে নিয়ে রাজন ইন্দিরা রোডের ৪৭ নম্বর হাশেম বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার রাতে গ্রিন লাইফ হাসপাতালে একটি অপারেশন শেষ করে তিনি রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাসায় যান।

নিহত এই চিকিৎসকের মামা সুজন কর্মকার মানবজমিনকে বলেন, গতকাল রাত আড়াইটার দিকে আমার বোনকে রাজনের স্ত্রী কৃষ্ণা ফোন করে জানায়, আপনার ছেলে মারা গেছে। কোনো রকম বাড়াবাড়ি করবেন না। বাড়াবাড়ি করলে আমিও সুইসাইড করব। আপনাদের দেখে নেব। আপনাদের শান্তিতে থাকতে দেব না। কৃষ্ণার ফোন পেয়ে আমার বোন আমাকে কাঁদতে কাঁদতে রাত ৪টার দিকে ফোন দেন। পরে স্কয়ার হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার ভাগ্নে রাজন মারা গেছে। তিনি বলেন, আমরা রাজনের এই মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত চাই। রাজনের চাচাত ভাই অভি বলেন, আমার ভাইয়ের সঙ্গে তার স্ত্রীর সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। প্রায়ই ঝগড়াঝাটি হতো। এর আগেও মারামারির ঘটনায় রাজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। তাই এই ঘটনায় আমাদের সন্দেহ হচ্ছে।

সুজন কর্মকার তার ভাগিনা রাজন কর্মকারের মৃত্যুতে নির্যাতনের অভিযোগ এনে শেরে বাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছেন কৃষ্ণা মজুমদারের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর থেকে তার ভাগিনা শারীরিকভাবে বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। শনিবার রাতে তিনি তার বোনের কাছ থেকে জানতে পারেন তার ভাগিনা মারা গেছে। পরে তিনি রাজনের ইন্দিরা রোডের বাসায় যান। বাসার নিরাপত্তাকর্মীর কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন রাত সাড়ে ৩টার দিকে কৃষ্ণা তার স্বামী রাজনকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্য বের হয়ে গেছে। পরে স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন। এজাহারে তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, তার ভাগিনার মৃত্যু স্বাভাবিক না।

রাজনের সহকর্মী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলোজি বিভাগের চিকিৎসক শাহ নেওয়াজ বারী বলেন, এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। তার মৃত্যুর খবর শুনে সহকর্মীরা খুবই উদ্বিগ্ন। এখানে আমরা সবাই ছুটে এসেছি। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। বিএসএমএমইউ হাসপাতালের ম্যাক্সলোফেসিয়াল বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. কাজী বিল্লুর রহমান বলেন, আমরা চাই এই মরদেহের ময়নাতদন্ত করে পুলিশ তার সঠিক তদন্ত করুক। আমরা মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি এ বিষয়ে তার কোনো আপত্তি নাই। মরদেহ দেখে হত্যার কোনো আলামত আছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা রাজনের পুরো শরীর দেখতে পারি নাই। রাজনের আরেক সহকর্মী ডা. শাফি পারভেজ বলেন, আমাদের সহকর্মীকে আমরা খুব কাছে থেকে চিনি। সে অনেকদিন ধরে পারিবারিক সমস্যায় ভুগছিল। আমরা ধারণা করছি তাকে হত্যা করা হয়েছে। যদি হত্যার সত্যতা পাওয়া যায় তবে আমরা আন্দোলনে যাব। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করব।

স্কয়ার হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, পরিবারের সদস্যরা রাত ৩টা ৪৫ মিনিটে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। আমরা পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে দেখতে পাই তিনি মারা গেছেন। তার আগে আমরা তার একটি ইসিজি করি সেখানে স্ট্রেট লাইন আসে। এ ছাড়া তার লাইফ সাইনও খুঁজে পাইনি। নিহত চিকিৎসক রাজনের ডেড সার্টিফিকেট তৈরি করেছেন ডা. নাজনিন নাহার। তিনি সেখানে নিহতের মৃত্যুর সময় রেকর্ড করেছেন রাত ৪টা। সেখানে তিনি মৃত্যুর জন্য অস্বাভাবিক কোনো কারণ উল্লেখ করেন নি। তবে, তাকে মৃত অবস্থায় সেখানে নিয়ে আসা হয়েছে বলা হয়েছে।

এদিকে নিহতের স্বজনদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্তের জন্য সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেছেন শেরে বাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক জামিল হোসাইন। তিনি গতকাল বলেন, সুরতহালে নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন বা অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া যায়নি। একই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা খবর পেয়েছি সাড়ে ৩টার দিকে। এর আগে আমরা জেনেছি মন্ত্রী অসুস্থ। তাই ওসি এসে মন্ত্রীকে দেখে গেছেন। কিন্তু যখন জানলাম মন্ত্রীর মেয়ের জামাই মারা গেছেন তখন এসে দেখি এই ঘটনা। নিহতের পরিবার দাবি করছে পোস্টমর্টেম করানোর জন্য। তাই আমরা সেই মোতাবেক প্রস্তুতি নিচ্ছি। সুরতহালে আমরা কোনো আঘাতের কারণে মৃত্যু হয়েছে সেই আলামত পাইনি।

এদিকে রাজন কর্মকারের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে তার সহকর্মী ও বন্ধুরা স্কয়ার হাসপাতালে বিক্ষোভ করেছেন। তারা কেউই রাজনের এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। তারা বলেছেন তারা কাউকে দোষী সাব্যস্ত করছেন না। তবে, যদি তাকে হত্যা করা হয় ও এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে হবে। বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির মহাসচিব প্রফেসর ডা. হুমায়ুন কবির বুলবুল বলেন, আমরা রাজন ও তার পরিবার সম্পর্কে আগে থেকে জানি। এ ছাড়া তার মৃত্যুর পর এখানে এসে যতটুকু জেনেছি এটা কখনোই স্বাভাবিক মৃত্যু হতে পারে না। যদিও এটাকে স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবেই চালানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা আসার পর সেটা পরিবর্তন হয়েছে। রাজনের পরিবার মামলা করেছে এবং তার মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। আমরা চাই ঘটনার সত্যতা উদঘাটন হোক। এর পেছনে কি কারণ আছে বেরিয়ে আসুক। তিনি বলেন, সে বাংলাদেশের নামকরা মেক্সিফেসিয়াল সার্জন। তাকে আমরা যতটুকু জানি তার কোনো অসুস্থতা ছিল না। ঘটনার রাতে সে ডিউটি শেষ করে সুস্থভাবে বাসায় গিয়েছে বলে জানি। মৃত্যু যে কারো হতে পারে। তবে, রাজনের মৃত্যুটা আমাদের কাছে সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। এর আগেও একবার পারিবারিক কারণে সে অসুস্থ হয়ে পপুলারে ভর্তি হয়েছিল। পরে সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে ও পিজি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিল।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর