× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

অচলাবস্থা বিরাজ করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে

এক্সক্লুসিভ

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
১৯ মার্চ ২০১৯, মঙ্গলবার

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রশাসিক কার্যক্রম ভেঙে পড়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। ফলে এখানে বাধাগ্রস্ত হছে সুপেয় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নের কার্যক্রম। দীর্ঘদিন ধরে সংস্থাটিতে জনবল সংকট থাকায় প্রশাসনিক কাঠামোতে এই চরম নাজুকতা বিরাজ করছে বলে কর্মকর্তারা অভিযোগ করছেন। বর্তমানে এখানে শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে অনেক পদই শূন্য। এজন্য কাজে কোনো গতি নেই গুরুত্বপূর্ণ এই অধিদপ্তরে। গত কয়েকদিন ধরে মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনকে কেন্দ্র করে দুপক্ষ আদালতে গেছে। অধিদপ্তরের বড় একটা  অংশের কর্মকর্তা দাপ্তরিক কোনো কাজে সহযোগিতা করছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মো. সাইফুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, দুই পক্ষই আদালতে গেছেন।
আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটাই সিদ্ধান্ত। অফিসের কাজ অফিসের গতিতে চলছে, কোনো অচলাবস্থা নেই।
জানা যায়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সুপেয় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৩৬ সাল হতে কাজ করে যাচ্ছে। স্বাধীনতার পর পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মপরিধি সমপ্রসারিত হতে থাকে। স্বল্পসংখ্যক জনবল নিয়ে সমপ্রসারিত কর্মসূচিসমূহ বাস্তবায়নে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয় এখানে। অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন সরাসরি কোনো নিয়োগ না হওয়ায় বিভিন্ন প্রকল্পভিত্তিক জনবল নিয়োগ এবং সরাসরি বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগকৃত, তবে ক্যাডারে পদ না থাকায় নন-ক্যাডারে পদায়নকৃত কর্মকর্তার মাধ্যমে অধিদপ্তরের বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া হয়। 
সূত্র জানায়, অধিদপ্তরে নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে প্রধান প্রকৌশলী পর্যন্ত ক্যাডারভুক্ত ৯৪টি পদের মধ্যে ৯০টি পদই বর্তমানে শূন্য আছে। প্রধান প্রকৌশলীর পদটিও দীর্ঘদিন ধরে শূন্য আছে। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর ৩টি পদের ২টি শূন্য। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর ১৪টি পদের মধ্যে ২টি (খুলনা সার্কেল ও পরিকল্পনা সার্কেল) বাদে ১২টি পদেই অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদানের মাধ্যমে কাজ চালানো হচ্ছে। নির্বাহী প্রকৌশলীর ৭৮টি পদের মধ্যে ৭৬টিই বর্তমানে শূন্য। অধিদপ্তরে ৭ থেকে ৩০ বছরের অভিজ্ঞতাসমপন্ন বিপুলসংখ্যক প্রকৌশলী কর্মরত থাকা সত্ত্বেও ক্যাডারভুক্তি না থাকার কারণে তাদেরকে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে না। যার ফলে অধিদপ্তরের প্রশাসনিক কাঠামোতে চরম নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এরূপ পরিস্থিতিতে অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত কর্মপরিধি ও সীমিত সংখ্যক জনবলের বিষয় বিবেচনায় এনে স্থানীয় সরকার বিভাগ ইধহমষধফবংয ঈরারষ ঝবৎারপব (ঊহমরহববৎরহম: চঁনষরপ ঐবধষঃয) ঈড়সঢ়ড়ংরঃরড়হ ধহফ ঈধফৎব জঁষবং, ১৯৮০  অধিকতর সংশোধন ও উক্ত পদসমূহে পদধারী স্থায়ী ও নিয়মিতকৃত কর্মকর্তাকে ক্যাডারে অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করে। প্রস্তাবটিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগবিধি পরীক্ষণ সংক্রান্ত উপকমিটি, প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সুপারিশ, সরকারি কর্ম কমিশন এর মতামত, প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির সদয় অনুমোদন গ্রহণের পর এস, আর, ও, নং ০১-আইন/২০১৯, ১লা জানুয়ারি ২০১৯ এর মাধ্যমে ইধহমষধফবংয ঈরারষ ঝবৎারপব (ঊহমরহববৎরহম: চঁনষরপ ঐবধষঃয) ঈড়সঢ়ড়ংরঃরড়হ ধহফ ঈধফৎব জঁষবং, ১৯৮০ এর তফশিল অধিকতর সংশোধনপূর্বক ক্যাডার পদসংখ্যা ১৩৬ হতে ৩২৯-এ উন্নীত করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট পদে পদধারী ৯৫ জন কর্মকর্তাকে বিসিএস (জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল) ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ ২২শে জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে করে সমগ্র বাংলাদেশে পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন সেবা প্রদানে নিয়োজিত জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে বিরাজমান সাংগঠনিক কাঠামো ও জনবল সংক্রান্ত সমস্যার প্রাথমিক সমাধান ঘটে।
এতে প্রাথমিক সমাধান ঘটলেও এ বিষয় অধিদপ্তরেরই ২১ জন কর্মকর্তা স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক ২২শে জানুয়ারি জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে হাইকর্টে মামলা করেন। এতে হাইকোর্ট গত ১২ই ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপনের ওপর চার মাসের স্থগিতাদেশ প্রদান করে। পরবর্তীকালে গত ৬ই মার্চ সরকার পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত হাইকোর্ট বিভাগের স্থগিতাদেশ আগামী ১৪ই এপ্রিল ২০১৯ তারিখ পর্যন্ত স্থগিত করে।
এ পরিস্থিতে সামগ্রিক বিষয়টি আদালতে বিবেচনাধীন থাকা সত্ত্বেও প্রজ্ঞাপনটি বাতিলের প্রক্রিয়া করা হচ্ছে। যা একই সঙ্গে আদালত অবমাননার সামিল বলে ভুক্তভোগীরা মনে করেন। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা পূর্বক এর দ্রুত সমাধানের জন্য অধিদপ্তরের প্রধান ও স্থানীয় সরকার বিভাগকে জানানো হয়। কিন্তু এখনও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।  প্রজ্ঞাপনে অন্তর্ভুক্ত কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী নানাবিধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তারা। প্রসঙ্গত, জারিকৃত প্রজ্ঞাপনটির সঙ্গে অধিদপ্তরে কর্মরত ১৫০ জন প্রকৌশলীর মধ্যে প্রায় ১২৫ জন প্রকৌশলীর চাকরি সংক্রান্ত স্বার্থ জড়িত। ফলে তাদের সকলের মধ্যে চরম হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। হেড অফিসে ৫০০ এবং সারা দেশে আট হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।
ভুক্তভোগীদের একজন প্রকৌশলী গোলাম মোক্তাদির। তিনি এই বিষয়ে মানবজমিনকে বলেন, সরকার যে আদেশটা জারি করেছে তা যেন বলবৎ থাকে। দীর্ঘদিন পদোন্নতি হয়নি, সেই জটলাটা যেন খুলে দেয়া হয়, এটাই তাদের চাওয়া। তিনি বলেন, এখানে এক প্রকার অচলাবস্থা বিরাজ করছে। প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) বিষয়টিতে উদ্যোগ নিয়ে যেন সহজে একটা সমাধান করে দেন। প্রধান প্রকৌশলীর সহযোগিতা চান তারা। তিনি আরো বলেন, তাদের বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত প্রধান প্রকৌশলীর কোনো কাজে সহযোগিতা না করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। রিটকারীদের একজন প্রকৌশলী ফারহানা। তিনি এই বিষয়ে মানবজমিনকে বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে গত ২২শে জানুয়ারি একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে উনাদেরকে (৯৫ জন) যোগদানের তারিখ থেকে ক্যাডারভুক্ত দেখানো হয়েছে। এখানেই তাদের মূল আপত্তি। ১৯৮৪ সালে এখানে ক্যাডার পদ ছিল না। তাদেরকে আসতে হলে ক্যাডারের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আসতে হবে। তিনি বলেন, ২৮তম বিসিএস দিয়ে তারা যোগাদান করেছেন। বুনিয়াদি কোর্স সম্পন্ন করেছেন। পাঁচ বছর সম্পন্ন করে সিনিয়র স্কেল পেয়েছেন তারা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর