ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা থেকে বেঁচে ফিরেছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। তবে সেই হামলাতে পাঁচ বাংলাদেশিসহ অর্ধশত সাধারণ মানুষের জীবন অকালে ঝড়ে পড়েছে। ক্রিকেটারদের সুস্থভাবে ফিরে আসা ও নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে গতকাল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) আয়োজন করেছিল মিলাদ মাহফিলের। সেখানেই জাতীয় দলের বিদেশ সফরে নিরাপত্তা ও তাদের সেই দুঃস্বপ্ন ভোলানোর বিষয়ে কথা বলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তার কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: ক্রিকেটারদের সঙ্গে কি ওই বিষয়ে কথা হয়েছে?পাপন: না না, ওইসব বিষয় নিয়ে খেলোয়াড়দের সঙ্গে আর কোনো কথা হয়নি। ওরা ঠিকমতো এলো, এজন্য শুকরিয়ার জন্য একটা দোয়া মাহফিল করা হলো। এ ছাড়া ক্রাইস্টচার্চে কতো মুসলমান মারা গেল, ওখানে বাংলাদেশিও ছিলো পাঁচজন, তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করা হলো। আমরা দোয়া করেছি।
এটাই মূল উদ্দেশ্য ছিল। এ ছাড়া ওদের মানসিক অবস্থা বোঝারও ব্যাপার ছিল। আসলে এর চেয়ে ভয়াবহ মানসিক অবস্থা তো আর হতে পারে না। তবে আমার বিশ্বাস ওরা দ্রুত মানসিক অবস্থার উন্নতি করতে পারবে।
প্রশ্ন: মনোবিদ নিয়োগ দিবেন কি না!পাপন: এ রকম কিছু চিন্তা করছি। আমরা ওদের অবজারভেশনে রেখেছি। তবে এজন্যই যে মনোবিদ আসবে, তা নয়। আমরা ঠিক করেছি যে, সব মিলিয়ে, বিশ্বকাপ আছে সামনে তার আগে একজন মনোবিদ এসে যদি ওদের সাথে সময় কাটায় তা দলের জন্যই ভালো। তখন যদি কারো মনে হয় কারো বিশেষ কোনো হেল্প দরকার, তাহলে অবশ্যই তা নেয়া হবে।
প্রশ্ন: ভবিষ্যতে দলকে কিভাবে নিরাপত্তা দেবেন?পাপন: আগে বাস্তবতা বুঝতে হবে। পাকিস্তানে নারী দল খেলতে যাওয়ার আগে আমরা কিন্তু নিরাপত্তার লোক পাঠিয়েছি। ডিজিএফআই থেকেও লোক পাঠিয়েছি। নিরাপত্তা বোঝার জন্য। পাকিস্তানে যেটা হয়েছে, বাংলাদেশের মতোই তারা নিরাপত্তা দিয়েছে। উপমহাদেশে নিরাপত্তা দেখি একরকম ভাবে। অন্যদেশে দেখেন, ক্রিকেট খেলার কথা বলি, সেখানে সিকিউরিটি একদম ভিন্ন। আমাদের মতো সিকিউরিটি ব্যবস্থাপনা আমরা কোথাও দেখি না। আপনি যদি অস্ট্রেলিয়া যান, নিউজিল্যান্ড বা সাউথ আফ্রিকা যান, ওদের একেক জায়গায় একেক রকম। লন্ডনে যে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ছিলো, সেখানেও সিকিউরিটি বলতে নামমাত্র। সেখানে পুলিশ-বন্দুক-গাড়ি, এগুলো দেখাই যায় না। এটাই ওদের সিস্টেম। রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাও একই রকম। সিঙ্গাপুরে আমার নিজের অভিজ্ঞতা, রাষ্ট্রপতি যায় শুধু একটা মোটরসাইকেল নিয়ে। এটাই ওদের সিস্টেম। আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে, আমরা যখন সিকিউরিটি নিয়ে কথা বলতে যাই, ওদের ধারণা আমাদের কেউ কিছু করবে না। যেন যতো ভয় ওদের। আমাদের আবার মারবে কে, এ রকম একটা ভাব। ওরা মনে করে, সিকিউরিটিটা ওদের বেশি দরকার। মাথার মধ্যে ওদের এটাই চিন্তা। তবে এই ঘটনার পর সিকিউরিটি ইস্যু সব জায়গায় জোরদার করা হবে। আমাদের তরফ থেকে অবশ্যই, আগে যেটা বলতো তা মেনে নিয়েছি, এমওইউ’তে বলা থাকে সব সিকিউরিটি ওরা দেখবে। ওদের উপর সব ছেড়ে দিতাম। কিন্তু এটা আর ছাড়বো না। সামনে আগের চেয়ে ভালো হবে সিকিউরিটি।
প্রশ্ন: দলের সাথে নিজস্ব সিকিউরিটি পাঠানো হবে কি না?পাপন: এটা আমাদের জন্য আরো একটা ইস্যু। বিদেশে সাধারণত সিকিউরিটি দেয় খেলার মাঠে, হোটেল থেকে মাঠে যাওয়া-আসা; এ ছাড়া কোথাও ব্যবস্থা থাকে না। তবে ওদের সঙ্গে আগে বলে কিছু করা যায় কি না তা আমরা দেখবো। আমাদের এখান থেকে সিকিউরিটি যাবে কি না তা নির্ভর করবে আমরা কী পাচ্ছি, তার উপর। আগে তো বিষদ আলোচনা করতাম না। নিউজিল্যান্ডে তিনদিন ছিলাম, সেখানে কোনো পুলিশই দেখিনি। ওই দেশটাই হয়তো এমন। পুলিশ থাকলেও তারা মসজিদে পাহারা দেয়ার কথা চিন্তাই করেনি। কিন্তু নতুন ঘটনা চোখ খুলে দিয়েছে। এখন ব্যবস্থা নিতেই হবে। আমাদের যদি মনে হয় বিদেশ থেকে যা দিচ্ছে, তা যদি যথেষ্ট মনে না হয়, তাহলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নিবো। তবে এটা নির্ভর করবে তারা যা দিচ্ছে, তার উপর।
প্রশ্ন: আয়ারল্যান্ড সিরিজে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক পাঠানো হবে কি?পাপন: এ রকম কোনো চিন্তা এখনো করিনি। আমরা এখন যে কোনো দেশে যাওয়ার আগে নিরাপত্তা পরিকল্পনা চাইবো। সেটা ঠিকমতো প্রয়োগ হচ্ছে কি না, তা দেখতে কাউকে পাঠাবো। সিকিউরিটির লোকই পাঠানো হবে, ব্যাপারটা তা নয়। কাউকে পাঠানো হবে। দেখা হবে ওরা যা বলছে, তা ঠিকমতো আছে কি না। এরপর যদি মনে হয়, তাহলে আমরা প্রয়োজন মতো ব্যবস্থা নেবো।
প্রশ্ন: নিউজিল্যান্ড সিরিজে কী সিকিউরিটি দেয়ার কথা ছিল?পাপন: ওরা বলেছে সব সিকিউরিটিই থাকবে। কিন্তু একেক দেশে সিকিউরিটি একেক রকম। যেমন একবার এক দেশে আমি সিকিউরিটির কাউকে না দেখে বললাম, কই তোমার দেশের কোনো সিকিউরিটির লোক তো দেখি না। তখন আমাকে বলেছিলো যে তুমি যদি দেখতেই পাও, তাহলে সেই সিকিউরিটি রেখে লাভ কী আমি জানি না তারা দুষ্টুমিই করে কি না। এটাই ছিলো এদের সাড়া। এতোদিন ওদের কথাই তো বিশ্বাস করতাম। কিন্তু ভবিষ্যতে না বুঝে না দেখে যাওয়া যাবে না।