× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে চায় ওরা

শেষের পাতা

ইশতিয়াক পারভেজ
১৯ মার্চ ২০১৯, মঙ্গলবার

গাড়ি থেকে নেমেই বন্দুক উঁচিয়ে গুলি করছে এক সন্ত্রাসী। হাতে অটোমেটিক রাইফেল। তার গুলিতে একের পর এক লুটিয়ে পড়ছে নামাজরত মুসল্লি। ফের গুলি ভরে মসজিদে ফিরলো সেই সন্ত্রাসী। এবার আহত-নিহত হয়ে মাটিতে পড়ে থাকা মানুষগুলোকে আবারো গুলিতে ঝাঁজরা করতে একটুও হাত কাঁপলো না সেই ভয়ঙ্কর বর্ণবাদী সন্ত্রাসীর। ক্রাইস্টচার্চের সেই মসজিদের বাইরে তখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়রা ২০ গজ দূরে বাসের মধ্যে বসেছিলেন। নামাজ পড়তে এসেছিলেন তারা।

  ৩০ সেকেন্ড আগে পৌঁছালে গুলির নিশানা তারাও  হতেন। কোনোরকমে পালিয়ে বেঁচেছেন ভাগ্য জোরে।
তবে সবচেয়ে বেশি ভয় পেয়েছেন হোটেলে ফিরেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুনির লাইভ করা ভিডিও দেখে বুঝতে বাকি ছিল না কি হতে পারতো তাদের সঙ্গে! সেই থেকে দলের প্রতিটি সদস্য এখনো রাতে ঘুমাতে পারছেন না। বিশেষ করে তরুণ  ও নতুনরা। জাতীয় দলের সঙ্গে প্রথম বিদেশ সফরে গিয়েছিলেন খালেদ আহমেদ। কিন্তু ফিরে এসেছেন বিভীষিকা নিয়ে। নিউজিল্যান্ডের এই ঘটনা ভুলে যেতে চান দলের তরুণ সদস্য সৌম্য সরকার, মোহাম্মদ মিঠুন, আবু জায়েদ রাহী ও খালেদ আহমেদরাও। তবে কতটা ভুলতে পারবেন সেটা এখনও তাদের জানা নেই!  

‘হোটেলে এসেও মনে হচ্ছিল কেউ বুঝি গুলি করে দিবে’- মোহাম্মদ মিঠুন
আমরা মসজিদের খুব কাছে চলে এসেছিলাম। তখন সৌম্য বললো একজন লোক গুলি লেগে মাটিতে পড়ে আছে। আমরা মজা করছিলাম যে, এখানে কে গুলি করবে! কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন মহিলা এগিয়ে এসে আমাদের সতর্ক করলেন। তখন সবাই ভয় পেয়ে গেলাম। বাসেই সিনিয়র যারা ছিলেন তারা সিদ্ধান্ত নিলেন।

আমরা যা করবো একসঙ্গে করবো। যে কারণে পরে গাড়ি থেকে নেমে পার্ক দিয়ে মাঠের দিকে চলে আসি। সেখানে এসে ভিডিওটা দেখে ভয়টা আসলে শতগুণ বেড়ে যায়। এই ভেবে যে, কোথা থেকে ফিরে এসেছি আমরা। কি হতে পারতো আমাদের সঙ্গে? বিশেষ করে হোটেল রুমেও মনে হচ্ছিল কেউ এসে আমাদের এই ভাবে গুলি করে দিবে। দেশে ফেরার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে আরো তরুণ ক্রিকেটাররা ছিল কিন্তু কেউ কারো মুখের দিকে তাকাতে পারছিল না। আমি জানি এই ঘটনা ভুলতে পারা অনেক কঠিন হবে। তবে ভুলতে হবে আমাদের। সামনে বিশ্বকাপ অন্তত তার আগে মন থেকে এমন বাজে স্মৃতি মুছে ফেলতে হবে। আর আমার অনুরোধ অবশ্যই আমাদের বিদেশ সফরে যেন নিরাপত্তার বিষয়টির প্রতি জোর দেয়া হয়। জানি আমাদের দেশের মতো নিরাপত্তা আর কোনো দেশে পাবো না। সবচেয়ে বড় বিষয় অনেক দিন এই ভয় আমাদের তাড়া করে ফিরবে।

সেই ঘটনা মনেও করতে চাই না- সৌম্য সরকার
সেদিন আমি তামিম ভাইদের সঙ্গেই বাসে বসে ছিলাম। তারা যেভাবে বলেছে সেইভাবেই চলেছি। কারণ ভয়ে আমি নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। এমন অবস্থা ছিল আমাদের নতুন ও তরুণ সবারই। আমিতো সেই ঘটনা এখন একটি বারের জন্যও মনে করতে চাই না। আমি ভুলে যেতে চাই। কিন্তু কি বলবো, এমন ঘটনা কি করে ভুলবো! এক মানুষ এইভাবে গুলি করছে। আমি দলের সঙ্গে ছিলাম, হয়তো বাসেই বসে থাকতাম। কিন্তু কিছুক্ষণ আগে হলে কি করতাম! অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছি। এখন আমার মনে হয় পরিবারকে সময় দেয়া, বন্ধুদের সময় দেয়া খুবই প্রয়োজন এই ঘটনা ভুলতে। আমি সেই চেষ্টা করছি। হ্যাঁ, অবশ্যই আমাদের দেশের বাইরেও নিরাপত্তা প্রয়োজন। আশা করি সেটি নিয়ে বিসিবি ভাববে।’

সেই কথা বলতেই এখন ভয় পাই- আবু জায়েদ রাহী
জানেন ভয়ে এখনো আমার শরীর কাঁপছে। আমি একটি বারের জন্যও কারো সঙ্গে সেই সময়ের গল্প করতে চাই না। দেশে ফেরার পর থেকে সবাইকে এড়িয়ে যাচ্ছি। এমনকি আমার পরিবারের  লোকদেরও। বাসার বাইরে ফের হলেই প্রশ্ন শুনতে হচ্ছে। যত শুনি ততোই ভয় বাড়ে। কি হতে পারতো আমাদের সঙ্গে! সেখানে যেভাবে খুনি মানুষ গুলোকে মেরেছে আমরা লাশ হয়ে পড়ে থাকতাম। জানেন আপনার সঙ্গেও ঐ ঘটনা নিয়ে কথা বলতে ভয় পাচ্ছি। সত্যি করে বলি আমি একটি বারের জন্যও মনে করতে চাই না। এখন আমি যতটা পারি পরিবারকে সময় দেবো। বাইরেও বের হবো না। যেন যত দ্রুত সম্ভব ভুলে যেতে পারি।

এখনো রাতে ভয় পেয়ে চোখে পানি আসে- খালেদ আহমেদ
শুক্রবার ঘটেছে ঘটনা। আমরা দেশে ফিরে এসেছি বলতে গেলে অনেকটা সময়ও কেটে গেছে। কিন্তু এক মুহূর্তও ভুলতে পারিনি। আমাদের গাড়ি মজজিদের সামনে ছিল। হঠাৎই হইচই শুনলাম। একজন মহিলাই বলছিল আমাদের। আমিতো একেবারেই নতুন কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। সবার সঙ্গে গাড়িতে শুয়ে পড়ি।

সেখান থেকে ফিরে আসি। কিন্তু আসল ভয়টা পাই ফিরে এসেই। যখন আমরা ভিডিওটা দেখছিলাম মনে হচ্ছিল পৃথিবীতে আমাদের চেয়ে ভাগ্যবান কেউ নেই। জানেন গতকাল রাতেও আমি স্বপ্ন দেখেছি যে আমাদের দিকে সেই খুনি গুলি করছে। ভয়ে আমার চোখে পানি চলে আসে। মানুষ এইভাবে মানুষকে মারতে পারে! আমরাওতো সেখানে লাশ হয়ে  যেতাম। আজ বাসায় চলে এসছি। সাবাই আমাকে জাড়িয়ে ধরে কেঁদেছে। সত্যি এই ঘটনা ভুলতে পারা অনেক অনেক কঠিন আমার জন্য। তবে ভুলতেই হবে, না ভুললে সব  থেমে যাবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর