রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের নাগ রাজারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবনটি গত ছয় বছর থেকে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে। এতে মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে উক্ত বিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা পাঠদান। ফলে এই অঞ্চলের ঝরে পড়া শিশুর হার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অচিরেই এই বিদ্যালয়ের নতুন ভবন না হলে শিক্ষা হারে পিছিয়ে পড়বে এই অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর শিশু শিক্ষার্থীরা।
বুধবার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রহিমা আক্তার ভূঁইয়া জানান, ২০১৩ সনে বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবনটি পাঠদানের অযোগ্য হয়ে পড়ায় কর্তৃপক্ষ এই ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। এছাড়া জনবলসহ নানা সংকটে রয়েছে বিদ্যালয়টি। এখানে ৫ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলে ও আছে ৪ জন। প্রাক-প্রাথমিকের কোনো শিক্ষক নেই, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।
বিদ্যুৎ নেই প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই।
প্রধান শিক্ষক আরো জানান, বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণার পর থেকে পার্শ্ববর্তী মাদরাসার কয়েকটি রুমে শিক্ষাদান অব্যাহত রাখা হয়। এছাড়াও বেশ কয়েকদিন খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করার পর ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ইমার্জেন্সি এডুকেশন খাত থেকে দু’লাখ টাকা দিয়ে একটি টিনের ঘর করার জন্য অনুদান প্রদান করে উপজেলা প্রশাসন।
শিক্ষার্থী নাফিসা নুরের মা ফারজানা আক্তার নিপা জানান, স্কুলটিতে বিদ্যুৎ নেই। গরমের সময় টিনের ঘর প্রচণ্ড উত্তাপ থাকে। বিদ্যুৎ না থাকায় বাচ্চাদের কষ্ট হয়। এছাড়া বিদ্যালয় সংলগ্ন ইটভাটার ধোঁয়া ও প্রতিদিন শতাধিক ট্রলি দিয়ে মাটি আনা-নেয়ার কারণে বাচ্চারা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ে। নাগ রাজারামপুর গ্রামের আবদুর রহিম বলেন দীর্ঘদিন ধরে খোলা আকাশের নিচে ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান করার পর একটি অপরিকল্পিত টিনের ঘরে শিশুদের পাঠদানের ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। আরেক অভিভাবক জাহাঙ্গীর বলেন, আমার মেয়েটি তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে, সে অসহনীয় গরমের কারণে প্রায় অসুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে। শিশুদের পাঠদানকে গতিময় করতে এখানে একটি নতুন ভবন জরুরি হয়ে পড়েছে। এব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি সদস্য আরিফ হোসেন বলেন, এ গ্রামটি নিয়ে ৩ নম্বর ভাদুর ও ৯ নম্বর ভোলাকোট ইউনিয়ন প্রশাসনে টানাপড়েন চলছে। এ এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে নতুন ভবন জরুরি।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মনির হোসেন মুঠোফোনে বিদ্যালয়ের সমস্যার কথা স্বীকার করে জানান আমি ঢাকায় আছি। বিগত দিনগুলোতে চেষ্টা করেছি একটি নতুন ভবন নির্মাণ করতে কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো আশ্বাস পাইনি। এসময় তিনি দাবি করেন, সভাপতি থাকা অবস্থায় সরকারি কোন সুযোগ সুবিধাও এ বিদ্যালয়টি পায়নি।
রামগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দৌলতুর রহমান বলেন, নাগরাজারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবনটি দীর্ঘদিন ধরেই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সমস্যা সমাধানে আমরা পুরাতন ভবনটি নিলামে দিয়েই অচিরেই এখানে একটি নতুন ভবন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।