রাজধানীর প্রগতি স্বরণিতে সূপ্রভাত পরিবহনের একটি বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় বিইউপির শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরীর মৃত্যুর ঘটনায় ঢাকায় শিক্ষার্থীদের চলমান বিক্ষোভের মুখে চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল না করতে শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেন।
বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের একাংশের সঙ্গে বৈঠকে এই অনুরোধ করেন তিনি। এ সময় শিক্ষার্থীদের যে কোনো দাবি পূরণের আশ্বাসও দেন জেলা প্রশাসক।
বৈঠকে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রামে স্কুল-কলেজের জন্য বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু, রাস্তার প্রতিটি মোড়ে সাইন ব্যবহার করা, ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, জেব্রা ক্রসিং ও স্পিডব্রেকার দেয়াসহ আগের বিভিন্ন দাবি দাওয়া তুলে ধরেন
জেলা প্রশাসক এ সময় বলেন, বিআরটিসির নতুন বাস আমদানি হয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে চট্টগ্রামে যেন কিছু বাস দেওয়া হয়, সেই চেষ্টা করব। কয়েকটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণাধীন আছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলব কাজ দ্রুত করতে। সিডিএ এবং সিটি কর্পোরেশন কিছু ফুটওভার ব্রিজ করছে। জেব্রা ক্রসিং ও স্পিড ব্রেকার সিটি কর্পোরেশন করছে।
সড়কও জনপথ বিভাগকে দিয়েও কাজ করাব। রোড সাইনের বিষয়টাতে শিক্ষার্থীদের বলেছি, তারাও যেন আমাদের সঙ্গে কাজ করে।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, চট্টগ্রামের সংগঠক মিনহাজ চৌধুরী রিফাত জানান, সূপ্রভাত বাসে আরেক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর ঢাকার মতো আমরাও চট্টগ্রামে মানববন্ধন করার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু এর আগেই জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠকটি হয়েছে।
বৈঠকে ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের সময় আমরা ১০ দফা দাবি দিয়েছিলাম। সেগুলো পূরণ হয়নি। জেলা প্রশাসকের কাছে দাবি পূরণ না করার প্রতিবাদ করেছি। তিনি যত দ্রুত সম্ভব সব দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন এবং চট্টগ্রাম অস্থিতিশীল হয়, এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি না করার অনুরোধ করেছেন।
শিক্ষার্থী ও জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, নগর পুলিশ এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার রাত থেকেই চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কোনো প্রস্তুতি আছে কি-না সেটা জানার চেষ্টা করা হয়। ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সর্বশেষ চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ স¤পাদক নুরুল আজিম রনি সেসময় আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমন্বয় করে বুধবার দুুপুরে তাদের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে যান।
২০১৮ সালের ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অদূরে বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজিব নিহত হয়। এ ঘটনার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারাদেশে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রামে আন্দোলন থামাতে তখনও নুরুল আজিম রনি শিক্ষার্থীদের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেসময় শিক্ষার্থীদের দাবি দ্রুত মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক।
চট্টগ্রামেও এমন আন্দোলনের আশঙ্কার কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, ঢাকাতে যে ছাত্র আন্দোলন হচ্ছে এবং রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে, সেটার সাথে চট্টগ্রামের মিল নেই। চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা এখনও পর্যন্ত কোনো প্রোগ্রাম দেয়নি। তারা বরং কিছু দাবি নিয়ে আমার কাছে এসেছে। দাবিগুলো যত দ্রুত সম্ভব পূরণের উদ্যোগ নেব। আশা করি, তারা নিয়মিত পড়াশোনা করবে এবং বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে না।