মহাদেবপুরে মহিষবাথান ঘাটে আত্রাই নদীর উপর একটি ব্রিজের অভাবে শিক্ষার্থীসহ হাজারো মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। বর্ষা মৌসুমে নদী ভরে গেলে প্রায় এক মাস বিদ্যালয়ের পাঠগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হয় শতাধিক শিক্ষার্থী। যুগযুগ ধরে এ সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় নদীর দুই পাড়ের ছাত্রছাত্রীদের। এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের জোরালো দাবি আত্রাই নদীর উপর এ ঘাটে একটি ব্রিজ নির্মাণের। ব্রিজ না থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যসহ প্রতিনিয়ত যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। ব্রিজ না থাকায় কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। আত্রাই নদীর উপর ব্রিজ না থাকায় কয়েক মিনিটের পথ দীর্ঘ কয়েক মাইল ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে নদীর দুইপাড়ের বাসিন্দাদের। বর্ষাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোট নৌকায় এবং বছরের অন্যান্য সময় বাঁশের সাঁকোয় চলাচল করতে হয় শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীকে।
সরজমিনে গিয়ে এলাকাবাসী সূত্রে জানাগেছে, আত্রাই নদীর পশ্চিম পারে এলাকার সুনামধন্য মহিষবাথান হাট রয়েছে। সপ্তাহে দুই দিন হাটে বেচাকেনা হলেও প্রতিদিনই বসে নিত্যপণ্যের বাজার। এ বাজারের পার্শ্বেই ধান-চাল সংরক্ষণের জন্য রয়েছে সরকারি খাদ্য গুদাম, সোনালী ব্যাংক, মহিষবাধান উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন স্কুলসহ বেশ কয়েকটি এনজিও অফিস। নদীর পূর্বপাড়ে রয়েছে নওগাঁ-মহাদেবপুর টু জয়পুরহাট আন্তজেলা মহাসড়ক। হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রোদইল বি এম কলেজ ও ভোকেশনাল শাখা, এনায়েতপুর ফাজিল মাদরাসা ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন স্কুল, মিশন স্কুলসহ নানা সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। বর্ষা মৌসুমে প্রবল স্রোত ও পানির প্রবাহ বেশি থাকায় এখানকার অভিভাবকরা ঝুঁকি নিয়ে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর সাহস পান না। ফলে প্রতি বছর বর্ষাকালে প্রায় ১ মাস এনায়েতপুর ইউনিয়নের রোদইল, হোসেনপুর, কালনা, শেরপুরসহ ৬টি গ্রামের শতাধিক ছাত্রছাত্রী স্কুল যেতে পারে না। এতে প্রায় ১ মাস তাদের লেখাপড়া ক্ষতি হয়।
নদীর ভরা মৌসুমে পূর্বপাড়ের শতাধিক ছেলেমেয়ে স্কুলে আসতে পারে না। আত্রাই নদীর পশ্চিম পারের হাতুড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হক জানান, দীর্ঘদিন ধরে ওই স্থানে একটি ব্রীজ নির্মাণের দাবি করে আসছে এ ইউনিয়নবাসী। বিভিন্ন সরকারের সময় জনপ্রতিনিধিদের কাছে একাধিকবার এ দাবি তোলা হলেও তা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। নদীর পূর্ব পারের এনায়েতপুর ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিঞা জানান, বর্ষা মৌসুমে নদীর পূর্বপাড়ের ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে যেতে পারে না এটা আমাদের জন্য একটি জটিল সমস্যা। তাছাড়া এলাকার কৃষিপণ্য নিয়ে ঘাট পারাপারে এলাকাবাসীকে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়। উপজেলার মহিষবাথান ঘাটে আত্রাই নদীর উপর একটি ব্রিজ নির্মাণের দীর্ঘদিনের দাবি হলেও এখন পর্যন্ত তা নির্মাণ হয়নি। এ বিষয়ে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী সুমন মাহমুদ জানান, উপজেলার মহিষবাথান ঘাটে ব্রিজ নির্মাণের কাজটি প্রক্রিয়াধীন।
এ বিষয়ে মহাদেবপুর ও বদলগাছী আসনের সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম বলেন, উপজেলার মহিষবাথান ঘাটে আত্রাই নদীর উপর একটি ব্রিজের অভাবে শিক্ষার্থীসহ হাজারো মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় রেখে দ্রুত সময়ে ব্রিজটি নির্মাণের জন্য কাজ করছি। আগামী অর্থবছরে এই ব্রিজটি নির্মাণের টেন্ডার প্রক্রিয়ার কাজ শেষ হবে বলে আমি আশাবাদী।